এইচএসসিতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে

* শতভাগ ফেলের প্রতিষ্ঠান ৫ থেকে বেড়ে ৫০ * শতভাগ পাসের প্রতিষ্ঠান কমেছে ৬০৪টি * এবারও মেয়েরা এগিয়ে

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমার পাশাপাশি আরও দুই সূচকে অবনমন ঘটেছে। শতভাগ পরীক্ষার্থী ফেল করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ার বিপরীতে কমেছে শতভাগ পাসের প্রতিষ্ঠান। করোনা মহামারি আর বন্যায় বিলম্বিত শিক্ষাবর্ষ শেষে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে এবার পাস করেছে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। মোট ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার পাস করেছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৭.৪২ শতাংশ। আগের বছরের চেয়ে এবার বর্ধিত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় ফলাফল কিছুটা খারাপ হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

এদিকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এবারও এগিয়ে আছে মেয়েরা। আর পাসের হারের দিক থেকে কুমিল্লা বোর্ড এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড শীর্ষে রয়েছে। গতকাল বুধবার এই ফলাফল প্রকাশিত হয়।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল সকালে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান সরকারপ্রধানের হাতে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ হাতে তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাউস চেপে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।

দুপুর ১টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে এবং এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানা যাচ্ছে। এছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও সংগ্রহ করা যাচ্ছে ফল।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (ভোকেশনাল/ বিএম/ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পরীক্ষা শুরু হয় এবং মূল্যায়ন শেষে জুলাই মাসে ফল প্রকাশিত হয়ে থাকে। এ বছর কোভিড-১৯ জনিত অতিমারি ও বন্যার কারণে সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে কোভিড-১৯ ও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সব পরীক্ষার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয় ব্যতীত পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে দুটি আবশ্যিক, তিনটি নৈর্বচনিক ও একটি চতুর্থ বিষয়সহ ৬ বিষয়ে মোট ১২টি পত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। ২০২২ সালের পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে, সংক্ষিপ্ত সময় এবং নম্বর বন্টনে পরিবর্তন এনে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর শুরু হয়ে ১৩ ডিসেম্বর এ পরীক্ষা শেষ হয় এবং মূল্যায়ন শেষে বুধবার ফল প্রকাশ করা হয়।

তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কলেজ প্রশাসন, জেলা ও মাঠ প্রশাসন, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, বিটিআরসি, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসমূহ, কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, প্রত্যবেক্ষক, প্রধান পরীক্ষক, পরীক্ষক, নিরীক্ষক এবং বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে পরীক্ষার সার্বিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। ফল প্রকাশের দিন সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান তিনি।

এর আগে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষাও মহামারির কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। সেবারও বিষয় কমিয়ে, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়। তাতে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ-৫ পায় ১ লাখ ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। এই হিসাবে ২০২২ সালের পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ পয়েন্ট। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১২ হাজার ৮৮৭ জন।

২০২০ সালে মহামারির কারণে পরীক্ষা হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নে সবাই পাস করে, জিপিএ-৫ পায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। আর মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় সার্বিকভাবে পাস করে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী পাঁচে পাঁচ জিপিএ পায়।

পাসের হারে শীর্ষে কারিগরি, জিপিএ-৫ বেশি ঢাকা বোর্ডে : সম্মিলিত ১১ বোর্ডের হিসাবে পাসের হারের দিক থেকে এবার শীর্ষে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে ৯৪ দশমিক ৪১ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ১০৪ জন। পাসের হারে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মাদ্রাসা বোর্ড। এ বোর্ডে ৯০ হাজার ২৬৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৪২৩ জন। তবে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে শীর্ষ অবস্থান করেছে কুমিল্লা; আর জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে সব বোর্ডের মধ্যে প্রথমে রয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এবার পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৮৫ হাজার ৮৮০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ পাস করেছে। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯৯১ জন।

অন্যদিকে, ঢাকা বোর্ডে উত্তীর্ণ ২ লাখ ৪৩ হাজার ২২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬২ হাজার ৪২১ জন। ঢাকা বোর্ডে এবার ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৩৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ পাস করেছে। পাসের হারে পিছিয়ে আছে দিনাজপুর বোর্ড। এ বোর্ডে ৯৯ হাজার ৭০৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৮ হাজার ৮৪৯ জন পাস করেছে। তাদের মধ্যে ১১ হাজার ৮৩০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাসের হার ৭৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে পিছিয়ে সিলেট বোর্ড। এ বোর্ডে ৬৬ হাজার ৪৯১ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪ হাজার ৮৭১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ৫৪ হাজার ১২২ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী নিয়ে পাসের হার ৮১ দশমিক ৪০ শতাংশ। রাজশাহী বোর্ডে এক লাখ ২৬ হাজার ৭০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৮৫ জন। পাসের হার ৮১ দশমিক ৬। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ২১ হাজার ৮৫৫। যশোর বোর্ডে ৯৮ হাজার ২৬৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৮২ হাজার ৫০১ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৫। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ১৮ হাজার ৭০৩। চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯১ হাজার ৯৬০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭৪ হাজার ৩২ জন। পাসের হার ৮০ দশমিক ৫। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ১২ হাজার ৬৭০। বরিশাল বোর্ডে ৬১ হাজার ৮৮৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫৩ হাজার ৮০৭ জন। পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৫। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৩৮৬ জন।

ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬১ হাজার ৫১৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫ হাজার ২৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ৪৯ হাজার ৪০৬ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী নিয়ে পাসের পর শতকরা ৮০ দশমিক ৩২ ভাগ।

বেড়েছে শতভাগ পরীক্ষার্থী ফেল প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, কমেছে শতভাগ পাসের প্রতিষ্ঠান : ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৯ হাজার ১৪৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। আর সব শিক্ষার্থী পাস করেছে- এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৩৩০টি। গত বছর কেউ পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল পাঁচটি। সেই হিসাবে এবার শতভাগ ফেল প্রতিষ্ঠানের বেড়েছে ১০ গুণ। পরীক্ষায় অংশ নেয়া সব শিক্ষার্থীই পাস করেছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ১ হাজার ৯৩৪টি। এবার সেই সংখ্যা থেকে কমেছে ৬০৪টি।

চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং সিলেট বোর্ডে শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। ১৩টি প্রতিষ্ঠানে শূন্য পাসের বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে দিনাজপুর বোর্ড। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের আটটি, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের ৯টি, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পাঁচটি, যশোর শিক্ষা বোর্ডের ছয়টি এবং ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থী ফেল করেছে এবার। সব শিক্ষার্থী ফেল করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার মাদ্রাসা বোর্ডে চারটি এবং কারিগরি বোর্ডে দুটি।

আর শতভাগ পাস করা ১ হাজার ৩৩০টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮১৪টি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে। এছাড়া কারিগরি বোর্ডের ২১৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

মাদ্রাসা বোর্ডে গত বছর শতভাগ পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩টি। আর কারিগরি বোর্ডের ১৯৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে গত বছর শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ঢাকা বোর্ডে ৯৩টি, রাজশাহীতে ৩১টি, কুমিল্লায় ৩৭টি, যশোরে ৩৯টি, চট্টগ্রামে ১৬টি, বরিশালে ৩৪টি, সিলেটে ১১টি, দিনাজপুরে ২৪টি করে এবং ময়মনসিংহে ১২টি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে।

গত বছর এই সংখ্যা ছিল ঢাকা বোর্ডে ১৭৬টি, রাজশাহীতে ১৬২টি, কুমিল্লায় ৭৫টি, যশোরে ১১৬টি, চট্টগ্রামে ১৬টি, বরিশালে ৫৬টি, সিলেট ও দিনাজপুরে ৫৩টি করে এবং ময়মনসিংহে ২৯টি।

এবারও মেয়েরা এগিয়ে : এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে এবারও এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮৬৫ জন ছাত্রী, তাদের মধ্যে পাস করেছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ জন। আর পরীক্ষা দেয়া ৬ লাখ ৯ হাজার ৫২২ জন ছাত্রের মধ্যে ৫ লাখ ১৫ হাজার ২৪৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছে।

ছাত্রীদের পাসের হার যেখানে ৮৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সেখানে ছাত্রদের মধ্যে পাস করেছে ৮৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ বছর ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৫ হাজার ৭২১ জন। আর ছাত্রদের মধ্যে ৮০ হাজার ৫৬১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। অর্থাৎ, ছাত্রদের চেয়ে ১৫ হাজার ১৬০ জন বেশি ছাত্রী পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পেয়েছে এবার।

বিদেশের কেন্দ্রে পাস ৯৭.৩২% : এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার দেশের বাইরের আটটি কেন্দ্রে ৯৭ দশমিক ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। বিদেশের আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়া ২২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২১৮ জন। গত বছর বিদেশের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া ২৬৭ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ২৬৪ জন। সেই হিসাবে এবার শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাসের হার দুটোই কমেছে। দেশের বাইরে চারটি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীই পাস করেছে; আর কেউই উত্তীর্ণ হয়নি- এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। পরীক্ষার সময় বহিষ্কার হয়েছিল এক শিক্ষার্থী।

বিকেএসপি’র সাফল্য : উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিকেএসপি থেকে ১৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা হলেন দিয়া সিদ্দিকী (আর্চারি), নাফিউল ইসলাম (কারাতে), জোহায়ের বিন শাহ নেওয়াজ (শ্যুটিং), এসএম ফাইয়াজ (শ্যুটিং), ইয়াকুব আলী (ভলিবল), জান্নাতুল ফেরদৌস (ক্রিকেট), অন্তরা চাকমা (জুডো), মেহেদী হাসান তানভীর (ক্রিকেট), রওনক রঙ্গন (ক্রিকেট), শেখ মোরসালীন (ফুটবল), জুবায়ের উৎস (টেনিস), আরিফুল ইসলাম (ক্রিকেট), আবু বকর রাব্বী (ক্রিকেট), আশিকুর রহমান (ক্রিকেট), মো. তানজিল ওহি (ক্রিকেট) ও মো. প্রান্তিক নওরাজ নাবিল (ক্রিকেট)। পরীক্ষায় মোট ১১৬ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে ১৬ জন জিপিএ-৫ সহ কৃতকার্য হয়েছেন ১১৪ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে দুইজন (একজন বিদেশে খেলার কারণে আংশিক পরীক্ষা দিয়েছে) নিয়মিত পাসের হার শতকরা ৯৮.২৮। প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার সাদাত আবু মো. ফুয়াদ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্যকারীদের অভিনন্দন জানান।

ফলাফলের ধারাবাহিকতা ঢাকা কমার্স কলেজ : প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখেছে কমার্স বিশেষায়ীত দেশ সেরা এই কলেজ। গতকাল ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ২০২২ সালের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় কলেজটির ২ হাজার ৮০২ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ২ হাজার ৭৯৫ জন কৃতকার্য হয়। পাসের হার ৯৯.৭৫ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান এই উভয় শাখা থেকে সর্বমোট ১ হাজার ৭২০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করে। ভর্তিকালীন সময়ে উভয় শাখার ২৮৩ জন ছিল জিপিএ ফাইভ অর্জনকারী। অর্থাৎ, এই কলেজে ভর্তির পর ১ হাজার ৪৩৭ জনই জিপিএ-৫ অর্জন করে। ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ১ হাজার ২৭৫ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে কৃতকার্য হয় ১ হাজার ২৭৪ জন। তন্মধ্যে জিপিএ-৫ অর্জন করে ৫৬১ জন। পাসের হার ৯৯.৯২ শতাংশ। ভর্তিকালীন সময়ে এই শিক্ষার্থীদের মাত্র ৪২ জন ছিল জিপিএ-৫ প্রাপ্ত। ৫১৯ জনই কলেজটির আন্তরিক নার্সিং তথা তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জিপিএ-৫ অর্জন করে। উন্নয়নের শতকরা হার প্রায় ১০০ শতাংশ। ২০১৯ সালে খোলা বিজ্ঞান শাখা থেকে ১ হাজার ৫২৭ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে পাস করে ১ হাজার ৫২১ জন। তন্মধ্যে জিপিএ-৫ অর্জন করে ১ হাজার ১৫৯ জন। পাসের হার ৯৯.৬১ শতাংশ। ভর্তিকালীন সময়ে এই শিক্ষার্থীদের মাত্র ২৪১ জন জিপিএ৫ প্রাপ্ত ছিল। ৯১৮ জনই কলেজটির আন্তরিক নার্সিং তথা তত্ত্বাবধানে জিপিএ-৫ অর্জন করে। উন্নয়নের শতকরা হার প্রায় ১০০শতাংশ। উল্লেখ্য, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১৯৯১-২০০২ সাল পর্যন্ত কলেজের গড় পাসের হার ছিল ৯৯.৪১ শতাংশ এবং জিপিএ পদ্ধতিতে ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে কলেজের গড় পাসের হার প্রায় ১০০ শতাংশ। ভালো ফলাফল অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আবু মাসুদ বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় ভালো ফলাফল অর্জনের ব্যাপারটিতে গুরুত্বারোপের মাধ্যমেই মূলত আমাদের ধারাবাহিক এই অর্জন। তিনি আরো বলেন, দেশসেরা ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের দুর্লভ সুযোগ ও সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে আলোকিত মানুষ তৈরির একনিষ্ঠ অংশগ্রহণেই আমরা অধিকতর যত্নশীল। উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ ১৯৯৬ ও ২০০২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভ করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ র‍্যাংকিং ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ এ ঢাকা কমার্স কলেজ দেশের সেরা বেসরকারি কলেজের স্বীকৃতি অর্জন করে।

মাইলস্টোন কলেজের অসাধারণ সাফল্য : এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজ। এ বছর মাইলস্টোন কলেজ থেকে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ৩২২২ জন ছাত্রছাত্রী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং পাস করে ৩ হাজার ২২১ জন। পাসের হার ৯৯.৯৭ শতাংশ। পাসকৃতদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭৩৪ জন। জিপিএ-৫ অর্জনের হার ৮৪.৮৮ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ২৫৪৮ জন এবং পাস করে ২ হাজার ৫৪৭ জন। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৯.৯৬ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪১৯ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৮৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়, পাসের হার শতভাগ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬৮ জন। মানবিক বিভাগ থেকে ২৯০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, পাসের হার শতভাগ। মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৭ জন। এইচএসসি পরীক্ষায় নিয়মিতভাবে ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন থেকেই একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে আমরা নিরলসভাবে কাজ করি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপায়ণের জন্য আমাদের অভিজ্ঞ একাডেমিক পর্ষদ বাস্তবায়ন করে গুণগতমানের একটা সুন্দর পাঠপরিকল্পনা। এছাড়া নিয়মানুবর্তিতা, গুণগতমানের শিক্ষা, নিয়মিত পাঠদান ইত্যাদি বিষয়ে আমরা সর্বদা সচেষ্ট। অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সহিদুল ইসলাম জানান, গ্রাম থেকে অনেক শিক্ষার্থী মাইলস্টোন কলেজে পড়তে আসে; যাদের অনেকেরই এসএসসিতে জিপিএ-৫ থাকে না কিন্তু এইচএসসিতে তারাও জিপিএ-৫ অর্জন করে। এটি মাইলস্টোন কলেজের ভালো ফলাফলের অন্যতম সুন্দর বৈশিষ্ট্য। অধ্যক্ষ বলেন, মাইলস্টোন কলেজে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হয় যাতে তারা সুশিক্ষা গ্রহণ করে মানবিক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তার মতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের ফসল এই ভালো ফলাফল। এইচএসসি পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল অর্জনের জন্য মাইলস্টোন কলেজের সব শিক্ষক-শিক্ষিকা, কৃতকার্য শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিবাদন জানিয়েছেন মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সহিদুল ইসলাম ।