ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্মার্ট নির্বাচনের পথে ইসি

স্মার্ট নির্বাচনের পথে ইসি

বাংলাদেশ অ্যানালগ ও ডিজিটাল থেকে এখন স্মার্টের দিকে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্মার্ট পদ্ধতিতে করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নতুন একটি অ্যাপ বানাতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এ অ্যাপের মধ্যে প্রার্থী ও ভোটারের সব তথ্য থাকবে, সেখান থেকে ভোটের সব তথ্য মিলবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুন্দর এবং সহজ করতে অনেক উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন। এর মধ্যে একটি রয়েছে অ্যাপ তৈরি। এটি যদি তৈরি করতে পারি তাহলে আমরা অনেক সুফল পাব। তিনি বলেন, অ্যাপে সব ভোটারের তথ্য থাকবে, ভোটাররা অ্যাপে ঢুকে জানতে পারবেন তিনি কোন এলাকার ভোটার। কোন কেন্দ্রে এবং কোন বুথে তার ভোট দিতে হবে। এছাড়া ভোটাররা তার কেন্দ্রে কোন পদে কত প্রার্থী, তাদের নাম ও প্রতীক এবং ছবিসহ সব প্রার্থী দেখতে পাবেন।

প্রার্থীদের বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, প্রার্থীরা চাইলে অনলাইনে মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। সকল প্রার্থীর হলফনামা অ্যাপে থাকবে। ফলাফল ঘোষণার সময় প্রার্থীরা অ্যাপে দেখতে পাবেন কোন কেন্দ্রে কত ভোট পেয়েছেন। এছাড়া কোন দল কত ভোট পেয়েছে সেটিও অ্যাপে দেখা যাবে। তবে এসব বিষয়ে কমিশন আলোচনা করছে- যাচাই-বাছাই চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কমিশন বৈঠকে আসবে।

এর আগে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, আগামীতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের শুধু অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার বিধান করতে চায় ইসি। তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। এখন স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সবকিছুর আবেদনই অনলাইনে সাবমিশন হচ্ছে। অনলাইনে সাবমিশন স্বচ্ছতা ও সঠিকতার বহিঃপ্রকাশ। জনপ্রতিনিধিরা শোডাউন ও স্লোগান দিয়ে মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় প্রথম দিনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন উল্লেখ করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অভিযোগ আছে, যারা মনোনয়ন জমা দিতে যান, তাদের কেউ কেউ বাধাগ্রস্ত হন। কোথাও কোথাও একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।

খেলার মাঠে খেলোয়াড় নেই তাহলে জয়লাভের আনন্দ কোথায় এমন প্রশ্ন রেখে আহসান হাবিব বলেন, এই চিন্তা-ভাবনা কীভাবে বাস্তবায়ন করব এ জন্য ইসির আইসিটি অনুবিভাগ একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। মনোনয়ন জমায় যেন অসুবিধা না হয় সেটি বিবেচনা করা হচ্ছে। আহসান হাবিব বলেন, প্রথমে এটির পাইলট প্রকল্প নেয়া হবে। চ্যালেঞ্জ কী ধরনের তা দেখা হবে। ছোট ছোট নির্বাচন পাইলট হিসেবে শুরু করা হবে। প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ, তারপর উপজেলা, সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ব্যবহার করা হবে। এগুলোতে সফল হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

ইসি সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নতুন দল নিবন্ধন, সংসদীয় আসনে সীমানাসহ নানা কাজ করছে ইসি। চলতি বছরের ডিসিম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোটগ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এ লক্ষ্যে তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

একাদশ সংসদের সীমানা দিয়ে দ্বাদশ সংসদ ভোটের পরিকল্পনা : নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদের সীমানা দিয়ে দ্বাদশ সংসদের সীমানার খসড়া প্রকাশ করা হবে। এরপর কোনো আপত্তি থাকলে সেটি ইসি শুনানি নিয়ে যৌক্তিক মনে হলে সীমানা সংশোধন করবে। নয়তো যে সীমানায় একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছে ঐ সীমানা অনুযায়ী ভোট হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন অনুযায়ী, ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রেখে সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদনের জনসংখ্যার যতদূর সম্ভব ‘বাস্তব বণ্টনের’ ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, যে আইন আছে, প্রথম হচ্ছে ভৌগোলিক অখণ্ডতা, তারপর আঞ্চলিক অবিভাজ্যতা, তারপর প্রশাসনিক এলাকা, চতুর্থত জনসংখ্যার ঘনত্ব। এ সবগুলোর বিবেচনায় নিয়ে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে সীমানা সংশোধন হবে। না হলে হবে না।

সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দল নিবন্ধন : আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। অতএব দলটি নিবন্ধন পাবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি।

একই নামে দুটি দলের নিবন্ধন হয়ে যাচ্ছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাসদের তো একই নামে দুটি দল আছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ। তাদের মার্কা কী হবে তাও বলে দিয়েছেন আদালত। তাদের মার্কা হবে সোনালি আঁশ।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, যত দ্রুত সম্ভব দলটিকে নিবন্ধন দেয়া হবে। দেরি করার সুযোগ নেই। আদালত নির্দেশনা দেয়ার পর আর মাঠে খতিয়ে দেখার সুযোগ নেই। কেননা, আদালতের নির্দেশ আমরা পালন করতে বাধ্য। আদালত নিশ্চয়ই সেগুলোর প্রমাণ পেয়েছেন।

নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ৯৩টি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। পাঁচটি দল নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। দুটি দল আবেদন তুলে নিয়েছে। প্রাথমিক যাচাইয়ে আবেদনপত্রের সঙ্গে যেসব তথ্য দেয়া প্রয়োজন ছিল সেগুলো অনেক দল দেয়নি। আমরা সেগুলো দেয়ার জন্য বলেছি। তারা দিয়েছে। আগামী রোববার যাচাই কমিটি ফের সেগুলো নিয়ে বসবে। এরপর মাঠ পর্যায়ে দলগুলোর কার্যালয়, কমিটি আছে কি না, এসব খতিয়ে দেখা হবে। এতে তারা উত্তীর্ণ না হলে নিবন্ধন পাবে না। অর্থাৎ প্রত্যেকটি বিষয় দেখা হবে।

জামায়াত নেতাদের নতুন দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধী, অথবা যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাদের সংবিধান, ইসি নীতিমালা এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধন দেয়া যাবে না। অনুমান নির্ভর কিছু বলা যাবে না। সবকিছু আমাদের আইনের ?দৃষ্টিতে বলতে হবে। আমাদের বলতে হবে সংবিধান বিরোধী কিছু থাকলে, আমাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নিষেধ আছে এমন কিছু যদি থাকে, আদালতের যে পর্যবেক্ষণ আছে, বিশেষ করে জামায়াতের বিষয়ে সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।

বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৩৯টি। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, গত পাঁচ বছর স্থানীয় নেতারা ও জনগণ বর্তমান সীমানা নিয়ে কাজ করেছেন। যেহেতু ২০১৮ সালে কমিশন শুনানি করে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তাই তাদের যদি কোথাও সমস্যা থাকে, তাহলে তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে জানতে পারব। কাজেই যেটা আছে, সেটা থাকুক। সেটার ওপর আবেদন আহ্বান করলে তখন দেখা যাবে। তাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। এজন্য আমরা কোথাও হাত দিচ্ছি না। যেটা এখন আছে সেটাই খসড়া হিসেবে প্রকাশ করব। আমাদের নীতিমালা এবং তাদের আপত্তি দুটোই আমলে নেব। এরপর শুনানিতে যেটা যৌক্তিক হবে সেটাই সিদ্ধান্ত হবে। এজন্য আমরা কোনো চাপে নেই। আমরা কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাই না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত