ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চেতনায় একুশ

ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ১১ ফেব্রুয়ারি

ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ১১ ফেব্রুয়ারি

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫২ সালের এই দিনে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশের ড. এএসএম নুরুল হক ভূঁইয়াসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রসহ বেশ কিছু প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ। যদিও একপর্যায়ে সর্বস্তরের মানুষ ভাষার সংগ্রামে নিজেদের সম্পৃক্ত করেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এ দিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভাষার জন্য লড়াকু ছাত্ররা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ লেখা পতাকা বিক্রির মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে পতাকা দিবস পালন করেন, যা ইতিহাস হয়ে আছে।

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক (একুশে পদকপ্রাপ্ত) প্রাবন্ধিক, কবি এ কলামিস্ট আহমদ রফিক তার একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ১১ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস সফল করে তুলতে যুবলীগ এবং ছাত্রাবাসের তরুণ কর্মীরা বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। ঢাকা শহর ও নারায়ণগঞ্জ এ কাজের মধ্যমণি। নারায়ণগঞ্জ একুশ নিয়ে তখনও একপা এগিয়ে। শামসুজ্জোহা, সফি হোসেন, মমতাজ বেগম এবং অনুরূপ কয়েকজনের নেতৃত্বে উত্তাল নারায়ণগঞ্জ। এ কাজে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও পিছিয়ে ছিল না। তারা স্কুল ছেড়ে পথে, মাঠে-ময়দানের জনসভায় হাজির হয়। ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক যোগাযোগ বরাবরই গভীর। সেখানেও পোস্টার, দেয়াললিপি, একুশের জন্য ডাক পাঠাচ্ছে ছাত্রছাত্রী, তরুণ ও সর্বজনতার দিকে। নারায়ণগঞ্জের শ্রমজীবী মানুষও এ আন্দোলনের পক্ষে সাড়া দিয়ে ছাত্র জনতার পাশে দাঁড়িয়েছিল।

পতাকা দিবসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঢাকায় পোস্টার লেখারও ধুম পড়ে গিয়েছিল। শুধু চারুকলার ছাত্র ইমদাদ বা আমিনুলই নন, তাদের বেশ ক‘জন এ কাজে যেমন ব্যস্ততা দেখিয়েছেন, তেমনি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র বদরুল, জিয়া হাসান, নুরুল ইসলামসহ আনেকের আঙ্গুলে চেপে বসে রয়েছে লালকালির ছোপ-লাল বর্ণমালার বিজয় নিশ্চিত করতে। অন্যদিকে একই কাজে নিয়োজিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু ছাত্রছাত্রী। এরা রাজপথের তৎপরতায় অধিক উৎসাহী ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা ছিল মাতৃভাষার মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগণের আত্মপ্রতিষ্ঠা। রাজনৈতিকভাবে বাইরের প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়াও ছিল এ চেতনার অন্যতম লক্ষ্য। মাতৃভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের কারণে বাংলাভাষী মানুষ সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে চলেছিল। এ অধিকার পরিণত হয় দাবিতে।

বাংলাভাষী বুদ্ধিজীবীরাও রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায়ে বজ্রশপথ নিয়ে রাজপথে নামেন। ১৯৪৭ সালের দিকে কেন্দ্রীয় সুপিরিয়র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বিষয় তালিকায় উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি, ল্যাটিন সংস্কৃতিসহ ৯টি ভাষা অন্তর্ভুক্ত হলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাংলাকে বাদ দেয়া হয়। অথচ এ দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী ছিল বাংলাভাষী। এ অবিচার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মেনে নিতে পারেননি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত