সরকার পতনের ১০ দফাসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের ষষ্ঠ কর্মসূচি হিসেবে এ পদযাত্রায় নেতাকর্মীদের ব্যাপক শোডাউন এবং শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। এজন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সারা দেশে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বিভিন্ন দল একই কর্মসূচি পালন করবে।
এদিকে একই দিন সারা দেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশ’ থাকায় বেশ উত্তেজনা বিরাজ করলেও বিএনপির পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। চলমান আন্দোলনকে শিগগিরই সরকার পতনের একদফায় রূপ দেয়ার টার্গেটে আরও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গতকাল শুক্রবার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেছেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এ কর্মসূচি সফলে দলের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অশান্তি সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রিন্স। তিনি বলেন, আমরা চরম ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব।
দলীয় সূত্র মতে, ১০ দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ধারাবাহিকতায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় তিনি বলেন, এবার ইউনিয়নে পদযাত্রার পর ধীরে ধীরে উপজেলা, জেলা ও মহানগরে হবে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দিয়ে বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মসনদ জনগণ দখল করে নেবে। জনগণের সরকার গঠিত হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলের কর্মসূচিতে দলের সব নেতার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভে ও অভিমানে দূরে থাকা নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকদেরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। অতীতে বিএনপির সমর্থনে বিজয়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর। এজন্য ১০ সাংগঠনিক বিভাগে সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে পৃথক টিমও গঠন করা হয়।
এদিকে ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি সফলে কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সারা দেশের নেতাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত চিঠিতে নেতাদের উদ্দেশে বলা হয়, চলমান আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি অনুযায়ী ১১ ফেব্রুয়ারি ‘বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, আটাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সার, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়া ও নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে’ দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। আপনাদেরকে স্ব স্ব ইউনিয়নে পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের ষষ্ঠ এ কর্মসূচিতে আজ বিএনপির পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টিও পদযাত্রা করবে। সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। আবারো তারা ইউনিয়ন পর্যায়েও পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে আওয়ামী লীগের যে মূল চরিত্র সেটা উন্মোচিত হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আওয়ামী লীগ প্রথম থেকে উস্কানি দিয়ে, হুমকি দিয়ে বিভিন্নভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই সংঘাত এড়িয়ে চলেছি। আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সংঘাত এড়িয়ে কর্মসূচি পালন করছি এবং করব। তিনি বলেন, আমাদের আল্টিমেট লক্ষ্য হচ্ছে, জনগণের স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা, সংসদ বিলুপ্ত করতে বাধ্য করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। প্রতিটি রাজনৈতিক দল চাইছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক।
এদিকে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘পাল্টা কর্মসূচি’ দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) মনে হয় বিরোধী দল হয়ে গেছে, তাদের ভূমিকা দেখলে মনে হয় আওয়ামী লীগ সরকারে নাই, বিরোধী দলের। বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছে, তারা (আওয়ামী লীগ) পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে, তারা নাকি শান্তি কর্মসূচি দিচ্ছে। আমরা বলতে চাই, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বাধা দেয়া চলবে না। লক্ষ জনতা রাস্তায় নেমে প্রমাণ করেছে গুলি করে, হত্যা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, গায়েবি মামলা দিয়ে গণজোয়ার বন্ধ করা যাবে না