বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা ২০ মে শুরু

ভালো ফল করেও পাবলিকে ভর্তি নিয়ে উদ্বেগে শিক্ষার্থী

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্র্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নিয়ে বেশ উদ্বেগ শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও। কারণ ভালো ফলাফল করেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ মিলবে না অনেকেরই। অবশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আসন সংখ্যার চেয়ে এইচএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম। তাই একদিকে যেমন আসন সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবেন না, তেমনি শিক্ষার্থী সংকটে অনেক প্রতিষ্ঠানে আসন খালি থাকবে বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত বুধবার প্রকাশিত ২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে ৯টি সাধারণ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। অথচ দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল মিলিয়ে আসন রয়েছে ৮০ হাজারের মতো। সে কারণে জিপিএ-৫ ধারী অন্তত ১ লাখ শিক্ষার্থী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন পাবেন না।

অবশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় আসন রয়েছে ৫ লাখের বেশি। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যর হিসেবে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ পাবেন সবাই। তবে শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য হবে তীব্র লড়াই। এছাড়া স্নাতক পর্যায়ে দেশে প্রায় ১৩ লাখ আসন আছে। ফলে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থী না পাওয়ায় প্রায় আড়াই লাখ আসন ফাঁকা থেকে যাবে।

সূত্র মতে, এইচএসসি ও সমমানে ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের মূল টার্গেট থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে আসন মাত্র ৮০ হাজার। অথচ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীই ১ লাখ ৭৬ হাজার। সে হিসেবে প্রায় ১ লাখ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন পাবেন না।

শুধু তাই নয়, একদিকে জিপিএ-৫ পাওয়া অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পাবেন না, অন্যদিকে কম জিপিএ নিয়েও অনেকে পাবলিকে চান্স পাবেন। ফলে সুযোগ না পাওয়া জিপিএ-৫ ধারীর সংখ্যা বাড়বে। তবে তাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজে ভর্তির সুযোগ থাকবে। অনেকে দেশের বাইরেও পড়াশোনো করতে যাবেন।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসন রয়েছে ৬০ হাজারের বেশি। পাশাপাশি মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসন প্রায় ১৮ হাজার। সবমিলিয়ে ৫১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন প্রায় ৮০ হাজার। ৩৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ৪ হাজার ৩৫০ ও বেসরকারি ৭২টি মেডিক্যাল কলেজে ৬ হাজার ৪৮৯টি আসন রয়েছে।

এর বাইরে চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয় টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি-বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ৫ হাজার ৬০০। আর ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিক্যাল কলেজে ৬৫৪টি আসন রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন প্রায় সাগে ৫ লাখ। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার।

এদিকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মাত্র ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, আমরা চাই একটাই ভর্তি পরীক্ষা হোক। তবে এ পদ্ধতিতে যতদিন যেতে না পারি সে পর্যন্ত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাকে আরও কীভাবে ভালো করা যায়, সেদিকে নজর আমাদের।

গত বুধবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, এবারও গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করবো যে সিলেবাসে এইচএসসি পরীক্ষা হয়েছে সে সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হোক।

দীপু মনি বলেন, একই বিষয়ে বার বার পরীক্ষা হওয়া উচিত না। যেমন ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা, গণিত বা ইংরেজি বিষয়ে নির্দিষ্ট নম্বরে পরীক্ষা হওয়া উচিত। আমরা চাই একটাই পরীক্ষা হোক। যতদিন না হয় ততদিন চলমান গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষাটা আরও কীভাবে ভালো করা যায় তার জন্য কাজ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। গত কয়েক বছরের মতো আসনের সংকট থাকবে না। দেশে স্নাতক পর্যায়ে সব মিলিয়ে ১৩ লাখের বেশি আসন আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা ২০ মে শুরুর সুপারিশ : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২০ মে থেকে শুরু করার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটি।

গত শুক্রবার বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, আগামী ২০ মে প্রাথমিক বাছাই পর্ব এবং ১০ জুন চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা আয়োজনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সভায় এই তারিখ নির্ধারণ করে সুপারিশ করা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এই তারিখ চূড়ান্ত হবে এবং তারপর বিজ্ঞপ্তি আকারে ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করা হবে। অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, ১৮ হাজার শিক্ষার্থী এবার প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় বসতে পারবে। আর প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ৬ হাজার শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার জন্য নির্বাচিত করা হবে।