ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ যাচ্ছেন ‘হৃদয় ভবনে

* সাফল্য পেয়েছেন এমপি স্পিকার ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে * অবসর জীবনে যেসব সুবিধা পাবেন
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ যাচ্ছেন ‘হৃদয় ভবনে

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন থেকে চলে যাবেন। তবে তিনি আজীবন এ দেশের মানুষের ‘হৃদয়’ ভবনে থেকে যাবেন। কিশোরগঞ্জের কৃতীসন্তান মো. আবদুল হামিদ এমপি হিসেবে, জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে সফলতা দেখিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে স্মরণীয় ও বরণীয়। আগামী দিনেও তিনি মানুষের মধ্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন। তিনি বঙ্গভবন ছেড়ে গেলেও তার মেধা সরলতা ও দক্ষতার কারণে সব শ্রেণির মানুষের ‘হৃদয়’ ভবনে অবস্থান করবেন।

আবদুল হামিদের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে। এরপর দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনের বাসিন্দা হবেন ২৪ এপ্রিল।

জানা যায়, আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠাইমন উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি মোট আটবার আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৭ম জাতীয় সংসদে তিনি প্রথমে ডেপুটি স্পিকার এবং পরে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। আর ৯ম জাতীয় সংসদের শুরুতেই তিনি স্পিকারের দায়িত্ব পান। ১১ মার্চ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

এদিকে রাষ্ট্রপতি পদে মেয়াদ শেষ করেছেন কিংবা কমপক্ষে ছয় মাস দায়িত্ব পালন করেছেন- এমন ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রতি মাসে সর্বশেষ যে বেতন পেতেন, তার ৭৫ শতাংশ হারে মাসিক অবসরভাতা পাবেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

‘দি প্রেসিডেন্টস (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট, ১৯৭৫ (মে ২০১৬ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী সাবেক রাষ্ট্রপতি এই অবসর ভাতা পাবেন। আইনটিতে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি কী কী সুবিধা পান, তা বলা হয়েছে। অবসর ভাতা ছাড়াও বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা পান সাবেক রাষ্ট্রপতি। আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে অন্য কোনো চাকরি বা পদ হতে অবসরে গিয়ে ভাতা গ্রহণ করলে তিনি ওই অবসর ভাতা এবং রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতার মধ্যে তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো একটি পাওয়ার যোগ্য হবেন। রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতা গ্রহণ করে মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী অথবা ক্ষেত্রমতে বিপত্নীক স্বামী তার প্রাপ্য অবসর ভাতার দুই-তৃতীয়াংশ হারে আমৃত্যু মাসিক ভাতা পাবেন।

অবসর ভাতা গ্রহণের প্রাধিকার অর্জন করা সাবেক কোনো রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতার পরিবর্তে আনুতোষিকও (এককালীন অর্থ) গ্রহণ করতে পারবেন। এজন্য তাকে প্রাধিকার অর্জনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে অবসর ভাতার পরিবর্তে আনুতোষিক গ্রহণের ইচ্ছার কথা জানাতে হবে। আনুতোষিকের পরিমাণ এক বছরের জন্য প্রদেয় অবসর ভাতার তত গুণ হবে, যত বছর কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকার সময়সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আংশিক বছরকে পুরো বছর হিসেবে গণনা করা হবে।

আর কেউ ছয় মাসের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় আনুতোষিক পাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত না করে অথবা অবসর ভাতা না নিয়ে মৃত্যু হলে তিনি আনুতোষিক পাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন বলে গণ্য হবে। তখন আনুতোষিকের টাকা মনোনীত ব্যক্তি অথবা উত্তরাধিকারীরা পাবেন।

আইন অনুযায়ী, সাবেক রাষ্ট্রপতি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন। দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন। যার মোট বাৎসরিক পরিমাণ সময়ে সময়ে সরকার নির্ধারণ করবে। সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহার, আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন এবং সরকার সময়ে সময়ে নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত এর বিল পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেবে।

এছাড়া, একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসা সুবিধাদি পাবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি। একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টও পাবেন। আর দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্ট হাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা পাবেন। তাদের স্ত্রী কিংবা ক্ষেত্রমতে তাদের স্বামী বিশেষ কূটনৈতিক পাসপোর্ট, দেশের ভেতরে সরকারি সার্কিট হাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা এবং মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কেউ এই বেতন নিয়ে দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে গেলে তার অবসর ভাতার পরিমাণ হবে ৯০ হাজার টাকা। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে বিদায় নিতে যাওয়া মো. আবদুল হামিদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বেতন পান। তিনি অবসরে যাওয়ার পর উল্লেখিত সুবিধার পাশাপাশি প্রতি মাসে ৯০ হাজার টাকা করে অবসর ভাতা পাবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত