ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সেফালোস্পোরিন ইউনিট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ওষুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সরকার কাজ করছে

ওষুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সরকার কাজ করছে

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সরকারিভাবে সব ওষুধ তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তার অংশ হিসেবে বগুড়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ তৈরি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) স্বপ্নের প্রজেক্ট সেফালোস্পোরিন ইউনিটে এন্টিবায়োটিক উৎপাদন শুরু হলো। আরো অনেক দামি দামি ওষুধ উৎপাদনে যাওয়ার জন্য গোপালগঞ্জে এসেনসিয়াল ড্রাগসের বৃহৎ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। মানিকগঞ্জেও আরো বড় পরিসরে কারখানা স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। দেশে সরকারিভাবে ওষুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গতকাল সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনের অপেক্ষায় থাকা ফোর্থ জেনারেশনের ‘সেফালোস্পোরিন’ অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি ইউনিট উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জগলুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক (শিক্ষা), মহাপরিচালক সেবা স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ইডিসিএলের বগুড়ার প্রধান ডিজিএম মো. মনিরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন ইডিসিএলের পরিচালক (অপারেশন) সত্যজিৎ দাস, সিবিএ সভাপতি আব্দুর রহমান।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান, বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. হাবিবুর রহমান এমপি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, হাসপাতাল অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন সচিব ডা. সামিউল ইসলাম সাদী, পরিচালক অপারেশন (সিসি) মি. সত্যজিৎ দাস, ডিজিএম ও প্ল্যান্ট প্রধান বগুড়া মো. মনিরুল ইসলাম, শ্রুমিক কর্মচারী এক্য পরিষদের সভাপতি কাজী ওবায়দুর রহমান, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন দুলাল প্রমুখ।

ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জগলুল জানিয়েছেন, উদ্বোধন হওয়া কারখানাটিতে স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক বা ইনজেকশন পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু হলো। এছাড়াও এই প্রজেক্টে সিরিয়াস রোগের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে ব্যবহার হয় এমন সেফট্রাইক্সেন, সেফুরোক্সাইম, সেফটাজিডিম ও সেফরাডিনের মতো ১২টি জীবন রক্ষাকারী স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন হবে।

যুগোপযোগী উৎপাদন নীতিমালা অনুযায়ী অত্যাধুনিক মেশিনে মান নিশ্চিত করে উৎপাদিত এসব জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বিনামূল্যে রোগীদের সরবরাহ করবে সরকার ও বিভিন্ন জাতীয় ও অন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এতে একদিকে যেমন বছরে দেড় কোটি মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া সহজ হবে, তেমনি বছরে ন্যূনতম ১৫০ কোটি টাকার রাজস্বও যোগ হবে।

সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটিতে এখন থেকে পূর্ণ উদ্যমে উৎপাদন শুরু হলো বলেও জানান ইডিসিএল সূত্র। এর মাধ্যমে সরকার বছরে দেড় কোটি মানুষকে বিনামূল্যে ‘সেফালোস্পোরিন’ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন।

অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জগলুল বলেন- বর্তমান বাজারে অ্যান্টিবায়োটিকের যে উচ্চ মূল্য তাতে সাধারণ রোগীরা ক্রয় করে ঠিকমতো ওষুধ সেবন করতে পারেন না। ওষুধের উচ্চ মূল্যের বাজারে লাগাম টানতেও ভূমিকা রাখবে ইডিসিএলের এ মহতী উদ্যোগ। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারিভাবে এ মূল্যবান ওষুধ বিনামূল্যে পাবেন বলেও জানান ইডিসিএলের এমডি।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ প্রকল্পকে উৎপাদন উপযোগী করতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন জানিয়ে অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জগলুল বলেন- ২০০৫ সালে নেয়া এ প্রকল্পটি অবহেলায় পড়েছিল। সরকার স্বাস্থ্য খাতে অভূতপূর্ব ভূমিকার অংশ হিসেবে ইডিসিএলের অবহেলায় পড়ে থাকা বগুড়ার এই ফোর্থ জেনারেশনের ‘সেফালোস্পোরিন’ অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির প্রকল্পটিকে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান সরকার।

জানা গেছে, সেফালোস্পোরিন গ্রুপের ওষুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লি. বগুড়া ইউনিটের বর্ধিতাংশে নতুন এ প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। কিন্তু পরবর্তী ১১ বছর নতুন এই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালে ইডিসিএলের এমডির দায়িত্ব পাওয়ার পর মৃতপ্রায় প্রকল্পটির কাজ ২০১৬ সালে নতুন করে শুরু করেন অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জগলুল। ঢেলে সাজানো এবং যুগোপোযোগী উৎপাদন নীতিমালা অনুসরণ করে ওষুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে দুই ধাপে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়। প্রথম ধাপে ননস্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক (ক্যাপসুল ও ড্রাইসিরাপ) এবং দ্বিতীয় ধাপে স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক (ইনজেক্ট্যাবলস) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালে প্রথম ধাপের কাজ শুরু করে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করে অসম্পূর্ণ উৎপাদন বিভাগ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগ, স্টোর বিভাগ এবং ইউটিলিটিজ বিভাগ যুগোপযোগী ও সর্বাধোনিক উৎপাদন নীতিমালা অনুযায়ী রেনোভেট বা সংস্কার করা হয়।

উল্লেখ্য, ছয় দশক আগে প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আজকের এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। ১৯৬২ সালে যাত্রা শুরুর পর নানা সংকট-সম্ভাবনায় দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ইডিসিএল অনেক সময় থমকেও দাঁড়িয়েছে। অনিয়ম আর দ্বন্দ্বে জরাজীর্ণ অবস্থায় পতিত হয়েছিল সম্ভাবনাময় ইডিসিএল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত