ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আদালতের নির্দেশনায় দায়িত্ব পালন জিএম কাদেরের

জাপার সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা

জাপার সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে মামলা, দ্বন্দ্ব এবং ক্ষমতাসহ বিভিন্ন কারণে গত বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি জাপার উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধে জড়ান। ফলে জাপায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, জাপা আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু দেবর-ভাবির প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব, কিছু কিছু নেতার মধ্যে অস্থিরতাসহ বিভিন্ন করণে সেটি হচ্ছে না। আবার দলের মধ্যে সব পক্ষকে সমঝোতায় আনতে চেয়েও পারছে না জাপার নেতারা। এ কারণে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বেড়েছে। আর দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের মামলা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

জানা যায়, হাইকোর্টের যে আদেশে জাপা চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনের বাধা কেটেছে, সে সংক্রান্ত আদেশ স্থগিত হয়নি।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিলটি (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ২৭ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম গত বুধবার এ আদেশ দেন। ফলে চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন।

সূত্র জানায়, জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের ওপর দেয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে জিএম কাদেরের করা আবেদন ও বিবিধ আপিল খারিজ করে নিম্ন আদালত আদেশ দেন। এর বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। এর শুনানি নিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনের ওপর অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে তার আবেদন খারিজ করে গত ১৬ নভেম্বর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত এবং বিবিধ আপিল খারিজ করে ১৯ জানুয়ারি ঢাকার জেলা জজের দেয়া আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ফলে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালানোর ক্ষেত্রে বাধা কাটে।

এ প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধা গত ৯ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যা ১২ ফেব্রুয়ারি চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। তবে এরই মধ্যে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশিত হওয়ায় আদালত আবেদনকারীকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেন। এরপর জিয়াউল হক মৃধা লিভ টু আপিল করেন, যা বুধবার চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে জিয়াউল হকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ ও হেলাল উদ্দিন। জিএম কাদেরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মো. ওয়াজি উল্লাহ ও ফরহাদ আহমেদ।

পরে আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত না করে চেম্বার আদালত জিয়াউল হকের করা লিভ টু আপিল ২৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে জিএম কাদের চেয়ারম্যান হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

এর আগে গত বছরের ৪ অক্টোবর দলে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা।

এরপর জিএম কাদের যেন জাপার বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন সে বিষয়ে গত বছরের ৩০ অক্টোবর (২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের গঠনতন্ত্রের আলোকে) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। পরে এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে জিএম কাদেরের করা আবেদন ১৬ নভেম্বর খারিজ করে দেন একই আদালত।

এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে মিস আপিল করেন জিএম কাদের। জেলা জজ আবেদন শুনানির জন্য ৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। পরে শুনানির আদেশ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করলে ২৪ নভেম্বর জেলা জজ আদালত সেটিও খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করেন জিএম কাদের। পরে ২৯ নভেম্বর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৩০ অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞার আদেশ ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে রুল জারি করেন।

এরপর জিয়াউল হক মৃধা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। গত ২০ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বারজজ আদালত। একই সঙ্গে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় এটি আপিল বিভাগে শুনানি হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মারা যান। এরপর হাইকোর্টে একটি রিট মামলা বিচারাধীন থাকার পরও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন জিএম কাদের।

এরপর গাজীপুর মহানগর কমিটির উপদেষ্টা আতাউর রহমান সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুর শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মো. আজিজকে বহিষ্কার করেন। মসিউর রহমান রাঙ্গাকেও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দল থেকে বহিষ্কার হন জিয়াউল হক মৃধাও।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত