ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চেতনায় একুশ

ঢাকায় পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস প্রতিষ্ঠিত হয়

ঢাকায় পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস প্রতিষ্ঠিত হয়

ভাষাসৈনিক গাজীউল হক বলেছেন, যদিও এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা খুঁজতে গিয়ে আমরা ভাষা আন্দোলনকে আবিষ্কার করি, তবুও এ কথাটুকু স্বীকার করতে কোনো রাজনীতিকের বা কারও লজ্জিত হওয়ার কথা নয় যে, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার এ দাবিটি প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল কোনো রাজনীতিবিদের কণ্ঠে নয়, যার লেখনি থেকে উৎসারিত হয়েছিল তিনি একজন মহান শিক্ষা এবং সংস্কৃতিবিদ। আমি এ উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কথাই বলছি। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার সপক্ষে ওকালতি শুরু করেন। ঠিক তখনই তার প্রতিবাদ করেন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তার এ বক্তব্য তখন এ দেশের শিক্ষিত এবং বুদ্ধিজীবী মহলে ভাষা সম্পর্কে প্রথম আলোড়নের সৃষ্টি করে। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক যুবলীগের কর্মী সম্মেলনে ভাষা সম্পর্কে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। তা হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তান কর্মী সম্মেলন প্রস্তাব করছে, বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন-আদালতের ভাষা করা হোক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে তৎসম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের ওপর ছেড়ে দেয়া হোক এবং জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হোক।

অন্যদিকে, ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস প্রতিষ্ঠিত হয়। তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেম লিখেছেন, তমদ্দুন মজলিসের মাধ্যমেই তিনি সে সময় ভাষা সম্পর্কে কয়েকটি সাহিত্য-বৈঠকের আয়োজন করেন। তারপর ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ বইটি তার দ্বারা সম্পাদিত ও মজলিস প্রকাশিত হয়। সম্পাদক আবুল কাসেমের ভাষাসংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও বইয়ের মুখবন্ধে সন্নিবেশিত হয়। যা ছিল ১. বাংলা ভাষাই হবে (পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন, পূর্ব পাকিস্তানের আদালতের ভাষা, পূর্ব পাকিস্তানের অফিসাদির ভাষা), ২. পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রভাষা হবে দুটি- বাংলা ও উর্দু, ৩. (ক) বাংলাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা বিভাগের প্রথম ভাষা। পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা ১০০ জনই এ ভাষা শিক্ষা করবেন। (খ) পূর্ব পাকিস্তানের উর্দু হবে দ্বিতীয় ভাষা বা আন্তঃপ্রাদেশিক ভাষা। যারা পাকিস্তানের অন্যান্য অংশ চাকরি ইত্যাদি কাজে নিযুক্ত হবেন শুধু তারাই এ ভাষা শিক্ষা করবেন। এটা পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা ৫ থেকে ১০ জন শিক্ষা করলেও চলবে। মাধ্যমিক স্কুলের উচ্চতর শ্রেণিতে এ ভাষাকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শিক্ষা দেয়া হবে। (গ) ইংরেজি হবে পাকিস্তানের তৃতীয় ভাষা বা আন্তর্জাতিক ভাষা। পাকিস্তানের কর্মচারী হিসেবে যারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে চাকরি করবেন বা যারা উচ্চতর বিজ্ঞান শিক্ষায় নিয়োজিত হবেন তারাই শুধু ইংরেজি শিক্ষা করবেন, ৪. শাসনকাজ ও বিজ্ঞান শিক্ষার সুবিধার জন্য আপাতত কয়েক বছরের জন্য ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই পূর্ব পাকিস্তানের শাসনকাজ চলবে। এরই মধ্যে প্রয়োজনানুযায়ী বাংলা ভাষার সংস্কার করতে হবে। দেশের শক্তির যাতে অপচয় না হয় এবং যে ভাষায় দেশের জনগণ সহজে ও অল্প সময়ে লিখতে, শিখতে ও বলতে পারে সে ভাষাই হবে রাষ্ট্রভাষা। এ অকাট্য যুক্তিই উপরিউক্ত প্রস্তাবের প্রধান ভিত্তি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত