ইসির নিবন্ধন লাভ

সুযোগের অপেক্ষায় তৃণমূল বিএনপি

লক্ষ্য দলছুটদের জাতীয় নির্বাচনে আনা

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেয়েছে বিএনপির সাবেক নেতা ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি সুযোগের আপেক্ষায় রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে দলছুট নেতাদের তৃণমূল বিএনপি নির্বাচনে নিয়ে আসার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে দলটির গুরুত্ব বেড়ে যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, তৃণমূল বিএনপি নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পেলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির গুরুত্ব বাড়বে। বর্তমানে তৃণমূল বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো দূর্বল হলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নাজমুল হুদার এ দলটির শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির অনেক নেতা ও অন্য দলের নেতাদের নিয়ে শক্তিশালী দল অথবা জোট হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এর আগে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। আইন অনুযায়ী তারা নির্দিষ্ট সময়ে ভোট করবে। সে ক্ষেত্রে অনেক দল নির্বাচনে না আসলেও যথাসময়ে ভোট করবে ইসি।

নির্বাচনে সময় যত ঘনিয়ে আসবে রাজনৈতিক মহলের দৌড় ঝাঁপ তত বাড়বে। সেক্ষেত্রে অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, আবার অনেক দল নির্বাচনে নাও আসতে পারে। আবার বিভিন্ন দলের নেতারা এ সময় দল ত্যাগ করবেন। এ সুযোগে তৃণমূল বিএনপি আরো শক্তিশালী হবে।

নতুন দল নিবন্ধন নিয়ে ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের চ্যাপ্টার ছয়-এর বিধান অনুযায়ী- প্রধান কার্যালয় ৩৩ তোপখানা রোড, ১৫/সি মেহেরবা প্লাজা (১৬ তলা), পল্টন ঢাকা-১০০০ অবস্থিত তৃণমূল বিএনপিকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছে। দলের জন্য ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং দলটির নিবন্ধন নং-৪৫।

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০টিতে। এছাড়া বর্তমানে নতুন দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছে। নিবন্ধিত দল ছাড়া কোনো দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য নাজমুল হুদার দলের এতদিন নিবন্ধন ছিল না। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে ইসিতে নিবন্ধন থাকতে হয়।

রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসিতে নিবন্ধনের জন্য ২০১৮ সালে আবেদন করেছিল তার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি। তবে যাচাই-বাছাই শেষে ইসি এই দলটিকে নিবন্ধন দেয়নি। পরে এর বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন নাজমুল হুদা। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে একই বছরের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃণমূল বিএনপিকে অবিলম্বে নিবন্ধন দিতে ইসিকে নির্দেশ দেয়া হয়।

তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইসি ২০১৯ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা বহাল রাখার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ইসি মো. আলমগীর জানিয়েছিলেন শিগগিরই তৃণমূল বিএনপিকে আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন দেয়া হবে।

জানা যায়, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিএনপি গঠনের সময়ই দলটিতে যুক্ত হন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে নিয়েছিলেন হুদাকে।

খালেদা জিয়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে রেখেছিলেন হুদাকে। ১৯৯১ সালে ও ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। তবে মাঝে একবার দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পুনরায় ফিরেছিলেন তিনি। তবে ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে বিএনএফ নামে নতুন দল গঠন করেন হুদা। পরে সেই দল থেকে তাকেই বহিষ্কার করে ২০১৪ সালে এমপি হন দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।

এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটে ভেড়ার চেষ্টা করেন হুদা। তাতে সফল না হওয়ার পর গঠন করেন ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে নতুন দল।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ইসির নিবন্ধন পেতে আবেদন করে তৃণমূল বিএনপি। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন না করা, সরকার নির্ধারিত ফির চালান জমা না দেয়া এবং নিবন্ধন দেয়ার মতো তথ্য না থাকার কারণ দেখিয়ে তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে সে সময় ইসি।

২০০৮ সাল সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নির্বাচন কমিশন নবম সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে। সর্বশেষ ৪৪টি দল নিবন্ধন পায়। এর মধ্যে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় অবশিষ্ট থাকে ৩৯টি দল। তৃণমূল বিএনপি নিবন্ধন পাওয়ায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুনের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার কথা ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।

নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, নতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মহানগর থানায় প্রতিটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনসংবলিত দলিল থাকার শর্ত পূরণ করতে হয়।