ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘তৃণমূল বিএনপি’ নিয়ে অস্বস্তিতে বিএনপি

‘তৃণমূল বিএনপি’ নিয়ে অস্বস্তিতে বিএনপি

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি ও সমমনা বিভিন্ন দল। তবে বিএনপির কর্মসূচির পাশাপাশি একই দিন ক্ষমতাসীন দলের ‘শান্তি সমাবেশ’ থাকাসহ নানা বাধাবিপত্তির কারণে আন্দোলনের সফলতা নিয়ে বেশ বিপাকে আছে দলটি। এরই মধ্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত ‘তৃণমূল বিএনপি’ রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ায় নতুন করে চাপা অস্বস্তিতে পড়েছে রাজপথের প্রধান এই বিরোধী দলটি।

অবশ্য এর আগে থেকেই ‘আসল বিএনপি’ নামের একটি ব্যানারে মাঝেমধ্যে বিএনপিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নয়াপল্টনে বিএনপির সঙ্গে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এমনই পরিস্থিতিতে সাবেক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপির ভবিষ্যৎ তৎপরতাও নতুন রূপ পাবে বলে অনেকে মনে করেন। যদিও এ ধরনের যত দলই গঠন হোক না কেন, তাতে বিএনপির কোনো ক্ষতি করতে পারবে না এবং এ নিয়ে দলটির কোনো চিন্তা নেই বলে দাবি করেছেন শীর্ষ নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার গতকাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দেশের মানুষ এখন ভোটাধিকারের লড়াই করছে। কারণ গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারেনি। এ অবস্থায় সরকার যত উন্নয়নের কথাই বলুক না কেন আর যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন সব ব্যর্থ হবে। দেশের গতন্ত্রকামী মানুষ বিএনপির পক্ষে আছে। তাই দলছুট নাজমুল হুদার দলের নিবন্ধন দেয়াসহ বিএনপিকে ভাঙার আরও নানা অপচেষ্টা চলবে, কিন্তু এসবে কোনো কাজ হবে না। শান্তি সমাবেশের নামে বিএনপির গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিয়েও কোনো লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সূত্রমতে, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সর্বশেষ ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। মাঝে একবার দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পুনরায় দলে ফিরেছিলেন তিনি। তবে, ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন দল গঠন করেন। পরে সেই দল থেকে তাকে বহিষ্কার করেন দলটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। ২০১৪ সালের ৭ মে মাসে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জোট নামে একটি জোট গঠন করেন এবং ২১ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি নামে দল গঠন করেন। ২০ নভেম্বর ২০১৫ সালে হুদা তৃণমূল বিএনপি নামে আরও একটি নতুন দল গঠন করেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল তৃণমূল বিএনপি। তখন নিবন্ধন মেলেনি। এরপর দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় ইসি। এরপরই দলটিকে নিয়ে বিএনপি অঙ্গনে চাপা অস্বস্তি সৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে।

তৃণমূল বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলের আভাস, আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এখনও অনিশ্চিত। আর শেষ পর্যন্ত কোনো কারণে বিএনপি নির্বাচনে না এলে সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিএনপির তৎপরতা আরও বেড়ে যাবে। বিএনপির পরিবর্তে এই দলকেই নির্বাচনি মাঠে শক্তভাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে পারে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপির বিদ্রোহী বা দলত্যাগ করা কেউ কেউ তৃণমূল বিএনপিতে ভর করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।

নিবন্ধন পাওয়ার আগে সম্প্রতি তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নিজেই এমন আভাস দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছিলেন, বিএনপির বিক্ষুব্ধ অংশটি তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তিনি আরও বলেছিলেন, যারা মনে করেন, বিএনপিতে তাদের অবস্থান নেই, ভবিষ্যতে রাজনীতি করার জায়গা পাবেন না, তাদের তো এই স্ট্যান্ড নেয়া ছাড়া উপায় নেই। তারা তো আওয়ামী লীগে যেতে পারবেন না। তৃণমূল বিএনপিতেই তাদের আসতে হবে। একই কথা আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যারা আওয়ামী লীগে মনোনয়ন পাবেন না, তারা তৃণমূল বিএনপিতে আসবেন।

তবে তৃণমূল বিএনপির নিবন্ধন পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এ নিয়ে (তৃণমূল বিএনপি) বিএনপি কোনো চিন্তাই করছে না। যখন মানুষের জনসমর্থন শূন্য হয়ে যায়, তখন খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়। সরকার এখন এই অবস্থায় চলে গেছে।

তিনি বলেন, আমি এটাকে (তৃণমূল বিএনপি) কোনো সাবজেক্টই মনে করি না। আমাদের দলের কোনো ক্ষতি তো দূরের কথা, যাদের উচ্ছিষ্ট খাওয়ার অভ্যাস আছে, তারা হয়তো চলে যেতে পারে। তবে সত্যিকারের যারা বিএনপি, জিয়ার সৈনিক, যারা বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিশ্বাস করে, তারা কেউ যাবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত