ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বগুড়ায় ইডিসিএলের অ্যান্টিবায়োটিক প্ল্যান্ট

ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন বুনছে এলাকাবাসী

ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন বুনছে এলাকাবাসী

বগুড়ায় বছরে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বগুড়া ইউনিট স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক বা ইনজেকশন উৎপাদন যুগে প্রবেশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে উদ্বোধনের পর জীবানু মুক্তকরণের কাজ চলছে। আগামী রোববার থেকে পরপর তিন দিন ট্রায়াল বেসিসে ৮ হাজার করে ২৪ হাজার ভায়াল ইনজেকশন তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে জীবন রক্ষায় ব্যবহৃত এ মূল্যবান ওষুধের মেশিনগুলো। ইডিসিএলের বগুড়ার প্ল্যান্ট প্রধান ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. মনিরুল ইসলাম দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ মাসের ২৬, ২৭ ও ২৮ তারিখ ৩ দিন ট্রায়াল বেসিসে ৮ হাজার করে ২৪ হাজার ভায়াল ইনজেকশন তৈরি করা হবে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্মাসিয়াল বেসিস উৎপাদন শুরু হবে। তখন প্রতিদিন ২৪ হাজার থেকে ৩২ হাজার ভয়াল ইনজেকশন তৈরি করা হবে।

মনিরুল ইসলাম আরও জানান, সরকারের এ প্রজেক্টে যেমন দেশের মানুষের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের চাহিদা মেটাবে তেমনি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। এ ইউনিটে ১৫০ জন লোকের কাজের সুযোগ হয়েছে। ভবিষ্যতে সক্ষমতা আরও বাড়বে। তখন কর্মসংস্থানও বাড়বে। এ অবস্থায় ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন বুনছে এলাকাবাসী।

তিনি আরও জানান- সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি ও আগে আমদানিকৃত ফেলে রাখা যন্ত্রপাতিকে ব্যবহারপযোগী করা হয়েছে। বর্তমানে ৬ টি ননস্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক সেফিক্সিম ২০০, সেফিক্সিম ৪০০, সেফরাডিন ৫০০ ক্যাপসুল এবং সেফিক্সিম ৫০ মিলি, সেফিক্সিম ১০০ মিলি, সেফরাডিন ১০০ মিলি ড্রাইসিরাপ উৎপাদন করে এগিয়ে যাচ্ছে সেফালোস্পোরিন প্রকল্পের ননস্টেরাইল বিভাগ। এখন ইনজেক্টেবল ইউনিট উদ্বোধন করায় ১ গ্রাম এবং ৫০০ মিলিগ্রাম এই দুই প্রকার ইনজেকশন উৎপাদন হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান বলেন, সরকার স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন করে চলেছে। তার অংশ হিসেবে সরকারি ওষুধ কোম্পানি ইডিসিএলের সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বগুড়ায় মুল্যবান অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনে কারখানা স্থাপন করা হল। এর মাধ্যমে সরকার বগুড়াবাসিকে সম্মানিত করেছে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আব্দুল আজিজ বলেন, বগুড়ায় একটা দামি ও জীবন রক্ষাকারি মেডিসিন কারখানা করায় সরকারকে ধন্যবাদ। এ কারখানায় আমাদের এ উত্তরাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। বিশেষ করে এটি সরকারি ওষুধ হওয়ায় সে ওষুধ সাধারণ মানুষ বিনা পয়সায় পাবে এটাও গুরুত্বপূর্ণ। বগুড়ার মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে এই কৃতিত্বের ভাগিদার হতে পেরে।

সেফালোস্পোরিন উইনিটে কর্মরত মাইক্রো ডজিং মেশিন অপারেটর শামিম তালুকদার দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বগুড়ায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ইনজেকশন তৈরির কারখানা হওয়ায় বাড়িতে থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ ইনজেকশন তৈরিতে অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এছাড়া কথা হয় ভায়াল ওয়াশিং মেশিন অপারেটর মো. খোকন মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, যে ভায়ালে সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিক পেকিং করা হয় সেই ভয়াল জীবানু মুক্ত করে প্রস্তুত করা আমার কাজ। অটোমেটিক মেশিনের মাধ্যমে ট্রায়াল বেসিসের সময় প্রতিদিন ৮ হাজার এবং কমার্শিয়াল বেসিস উৎপাদনের সময় ২৪ হাজার থেকে ৩২ হাজার ভায়াল উৎপাদিত ইনজেকশন পেকিং হবে।

এই ইউনিটের সুপারভাইজার রিজভী বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশনায় ওষুধ প্রশাসনের সকল নীতিমালা মেনে এ মহান দায়িত্ব পালন করে থাকি। সব সময় জীবনু মুক্ত হয়ে কাজে যোগদান করতে হয়। প্রতিদিন কাজে যোগদানের আগে প্ল্যান্টে এসে গোসল করে বাসার পরিধেয় জামা-কাপড় ছেড়ে প্ল্যান্টের নির্ধারিত পোশাক পরে প্রবেশ করতে হয়। মান নিশ্চিত করার স্বার্থে কোন ছাড় দেয়া হয় না।

ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জগলুল দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সাধারণ মানুষ ওষুধ কিনতে হিমশীম খেতে হয়। তারা সরকারি হাসপাতালে যায়। কিন্তু অধিক দামের কারণে তুলনামূলকভাবে এ ওষুধ সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় কম মূল্যে উৎপান করে বিতরণ করবো। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে জীবনরক্ষাকারি এ মেডিসিনটি আরও সহজলভ্য হয়ে উঠবে।

ইডিসিএল এমডি আরও জানান, বছরে ১৫০ কোটি থেকে ২০০ কোটি টাকার সেফালোস্পোরিন গ্রুপের স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক বা ইনজেকশন উৎপাদন হবে। ১ গ্রাম এবং ৫০০ মিলিগ্রাম এই দুই প্রকার ইনজেকশন উৎপাদন হবে।

অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জগলুল আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ প্রকল্পকে উৎপাদন উপযোগী করতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন। ২০০৫ সালে নেয়া এ প্রকল্পটি অবহেলায় পড়েছিল। পরবর্তি ১১ বছর নতুন এই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালে ইডিসিএলের এমডির দায়িত্ব পাওয়ারপর মৃতপ্রায় প্রকল্পটির কাজ ২০১৬ সালে নতুন করে শুরু করি।

তিনি বলেন- সরকার স্বাস্থ্য খাতে অভূতপূর্ব ভূমিকার অংশ হিসেবে ইডিসিএলের অবহেলায় পরে থাকা বগুড়ার এই ফোর্থ জেনারেশনের ‘সেফালোস্পোরিন’ অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির প্রকল্পটিকে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ঢেলে সাজানো এবং যুগোপযোগী উৎপাদন নীতিমালা অনুসরণ করে ওষুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে দুই ধাপে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়। প্রথম ধাপে ননস্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক (ক্যাপসুল ও ড্রাইসিরাপ) এবং দ্বিতীয় ধাপে স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক (ইনজেক্ট্যাবলস) উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা হাতে নেয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালে প্রথম ধাপের কাজ শুরু করে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করে অসম্পূর্ণ উৎপাদন বিভাগ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগ, স্টোর বিভাগ এবং ইউটিলিটিজ বিভাগ যুগোপযোগী ও সর্বাধোনিক উৎপাদন নীতিমালা অনুযায়ী সংস্কার করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির এই ইউনিটটির উদ্বোধন করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত