ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শোক জানায়নি বিএনপি

দোহারে চিরনিদ্রায় শায়িত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা

দোহারে চিরনিদ্রায় শায়িত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা

কয়েকদফা জানাজা শেষে ঢাকার দোহারে শাইনপুকুরে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আলোচিত রাজনীতিবিদ, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও নতুন নিবন্ধন পাওয়া দল তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। গতকাল সোমবার বাদ আছর তাকে সেখানে দাফন করা হয়।

এর আগে গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮০ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ব্যারিস্টার সিগমা হুদা এবং দুই কন্যা অন্তরা হুদা সামিলা ও শ্রাবন্তী হুদা আমিনাসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদা বলেন, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত শুক্রবার তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর রাতে তার লাশ ধানমন্ডির বাসভবনে রাখা হয়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, গতকাল বেলা ১১টায় ধানমন্ডির বায়তুল আমান জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নাজমুল হুদার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মরহুমের কফিন নেয়া হয় বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে। দুপুর সাড়ে ১২টায় সেখানে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এ সভাপতি দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সুপ্রিমকোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও জয়নুল আবেদীন, সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল, সাবেক সম্পাদক এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতাসহ আইনজীবীরা।

পরে তার লাশ নেয়া হয় দোহারে। সেখানে জয়পাড়া স্কুল মাঠে বাদ জোহর তৃতীয় এবং বাদ আসর পদ্মা কলেজ মাঠে চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে সমাহিত করা হয়।

সূত্র মতে, বিএনপি গঠনের সময়ই দলটিতে যুক্ত হন ব্রিটেন থেকে আইনে ডিগ্রি নিয়ে আসা নাজমুল হুদা। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে নিয়েছিলেন তাকে।

খালেদা জিয়ার সরকারে ১৯৯১ সালে তথ্য ও ২০০১ সালে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে মাঝে একবার দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পুনরায় ফিরেছিলে।

১/১১ সময়ে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির মামলা দেয় এবং তিনি গ্রেপ্তার হন।

২০১০ সালে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে আবার আলোচনায় এসেছিলেন। তখন দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা নাজমুল হুদাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত হলেও তিনি দলীয় কাজ করতে থাকলে এক বছর পর ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তার সদস্যপদ আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরের বছর ২০১২ সালেই আবার বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয়। এবার নাজমুল হুদা পদত্যাগ করলে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক চুকেবুকে যায়; গঠন করেন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল।

পরে সেই দল থেকে তাকেই বহিষ্কার করে ২০১৪ সালে এমপি হন দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।

এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটে ভেড়ার চেষ্টা করেন হুদা।

তাতে সফল না হলে ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর তৃনমূল বিএনপি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। যদিও এ দলের রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি তিনি শুরু করতে পারেননি। কয়েক বছরের আইনি লড়াই শেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তার দল নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায়। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দলটিকে নিয়ে নাজমুল হুদার নানা পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছিল। তবে তা বাস্তবায়নের আর সুযোগ পেলেন না তিনি। এদিকে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও নাজমুল হুদার মৃত্যুতে দলটির পক্ষ থেকে কোনো শোক বার্তার দেয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বিএনপি ত্যাগ করা এই নেতা নতুন দল গঠনের মাধ্যমে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিএনপির জন্য চাপা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত