ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার ফুল : ভাষা শহীদদের স্মরণ

শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার ফুল : ভাষা শহীদদের স্মরণ

মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে জাতি। একুশের প্রথম প্রহরেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ব্যক্তিগতভাবে এবং দলবদ্ধ হয়ে একের পর এক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং তারপর প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের নেতারা দলের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু শ্রদ্ধা জানান। তাদের পর ফুল দেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল। এরপর ১৪ দলের পক্ষ থেকে হাসানুল হক ইনু, অসীম কুমার উকিল ও অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, চিফ হুইপের পক্ষ থেকে হুইপ মো. ইকবালুর রহিম, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান, বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা শ্রদ্ধা জানান। এরপর কূটনীতিক, হাইকমিশনার, রাষ্ট্রদূত, বিদেশি সংস্থার প্রধানরা শ্রদ্ধা জানান। এরপর র‍্যাবের প্রধান এম খুরশীদ হোসেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পুলিশের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, কারা অধিদপ্তর, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সরকারি কর্মকমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ বাজানো হয়। এরপর রাত ১২টা ১৪ মিনিটে শহীদ মিনার সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুলে দেয়া হয়। এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করে সর্বস্তরের মানুষ।

গতকাল সকালে কালো ব্যাজ ধারণ ও প্রভাতফেরির মাধ্যমে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে আওয়ামী লীগ। আজিমপুরের পুরাতন কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন শহীদ বরকত, জব্বার ও শফিউর। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

এসময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সংস্কৃতিক বিষয়ক অসীম কুমার উকিল, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, উপ প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজি, তারানা হালিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সকাল সাড়ে ৬টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

শ্রদ্ধা জানাতে আসা এসব মানুষের হাতে ছিল নানান রকমের ফুল। কেউ শুধু একটি করে গোলাপ আবার কেউ ফুলের তোড়া ও ডালায় নিজেদের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে প্রবেশ করেন শহীদ মিনারে। তাদের বেশিরভাগের পরনে ছিল কালো পাঞ্জাবি, শাড়ি। অনেকে বুকে লাগিয়েছেন কালো ব্যাজ। দেশের সর্বত্র শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে মানুষ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। অনেক স্থানে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার তৈরি করে কিংবা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রভাতফেরিতে অংশ নেয়। সারা দিন অলিতে-গলিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে ভাষার গান পরিবেশন করা হয়।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে না হতেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার কেড়ে নিতে উদ্ধত হয়। কিন্তু বীর বাঙালি প্রতিবাদী হয়ে বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত করে রাজপথ। প্রতিষ্ঠা করে মায়ের ভাষা। সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল গতকাল।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা যখন অন্যায়ভাবে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাঙালির ওপরে চাপিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিল, তখন বাঙালি ফুঁসে উঠেছিল প্রতিবাদে, বিক্ষোভে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল করে এগিয়ে যেতে থাকলে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। এরপর থেকেই জাতি শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে মহান শহীদ দিবস পালন করে আসছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত