ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখালেন জেলেনস্কিকে

কিয়েভের পাশে থাকার অঙ্গীকার বাইডেনের

কিয়েভের পাশে থাকার অঙ্গীকার বাইডেনের

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যে সোমবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এ সফর ছিল অত্যন্ত গোপনীয়। যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে বাইডেন কিয়েভে যেতে পারেন, এমন গুঞ্জন ছিল আগে থেকেই। তবে তিনি কিয়েভে পৌঁছানোর আগে ঘুণাক্ষরেও কেউ এ সফর সম্পর্কে জানতে পারেনি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, সফরের কয়েক ঘণ্টা আগেই নাকি বিষয়টি রাশিয়াকে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে মার্কিন প্রশাসন কীভাবে বাইডেনের এ গুরুত্বপূর্ণ সফরের তথ্য গোপন রাখল, কীভাবে বাইডেন ওয়াশিংটন থেকে কিয়েভ অবধি যাত্রা করলেন, এসব নিয়ে জনমনে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

বাইডেন যাত্রা শুরু করেন ওয়াশিংটন থেকে। স্থানীয় সময় রোববার ভোররাত ৪টার দিকে ওয়াশিংটনের পার্শ্ববর্তী অ্যান্ড্রুজ বিমানঘাঁটি থেকে মার্কিন বিমানবাহিনীর বোয়িং ৭৫৭ উড়োজাহাজে চেপে বসেন ৮০ বছরের বাইডেন। এ উড়োজাহাজ সি-৩২ নামে পরিচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানের চেয়ে বেশ ছোট। উড়োজাহাজটির সব কটি জানালায় পর্দা দেয়া ছিল।

কিয়েভ সফরে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হন দুজন সাংবাদিকও। তারা বাইডেনের এ সফরের খবর ‘সঠিক সময়ের আগে’ প্রকাশ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

ওয়াশিংটন থেকে যাত্রা শুরু করে বাইডেনের প্রাথমিক গন্তব্য ছিল পোল্যান্ড। তবে বাইডেনকে বহনকারী উড়োজাহাজটি জ্বালানি নেয়ার জন্য জার্মানির রামস্টেইনে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে থামে। সেখানেও উড়োজাহাজের জানালা খোলা হয়নি। আরোহীদের কেউ নামেননি। পরে সেখান থেকে উড়াল দিয়ে উড়োজাহাজটি পোল্যান্ডের রেজেসজো-জাসিওঙ্কা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিমানবন্দরটি ইউক্রেনকে পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র ও মানবিক সহায়তার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

এ বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে গাড়িবহর নিয়ে বাইডেন যান ইউক্রেন সীমান্তে। তবে গাড়িবহরের সামনে ও পেছনে সাইরেন বাজানো হয়নি। দেখে কেউ বুঝতে পারবে না, এ বহরে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশের রাষ্ট্রপ্রধান আছেন। পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের একটি রেলস্টেশনে গিয়ে বাইডেন কিয়েভ অভিমুখী ট্রেনে উঠেন।

মজার বিষয় হলো, ওয়াশিংটন থেকে জার্মানি হয়ে পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের সীমান্ত এলাকায় ট্রেনে চেপে বসেন তিনি। পোল্যান্ডের সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টার যাত্রা শেষে ট্রেনটি সোমবার সকাল ৮টার পর কিয়েভে পৌঁছায়। যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো কিয়েভে পৌঁছান বাইডেন। সবশেষ তিনি কিয়েভ সফর করেছিলেন বারাক ওবামার আমলে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময়।

কিয়েভে পৌঁছে বাইডেন বলেন, ‘আবারও এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে।’ সফরকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করে বাইডেন প্রতিশ্রুতি দেন, যুদ্ধ যত দিন ধরেই চলুক না কেন ইউক্রেনের পাশে থাকবে ওয়াশিংটন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বাইডেন বলেন, ‘আপনি জয়ী হতে চলেছেন বলে আমাদের আস্থা আছে।’

এদিকে বাইডেনের কিয়েভ সফরকে কেন্দ্র করে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, ‘আমরা কয়েক ঘণ্টা আগে সফরের বিষয়টি রাশিয়াকে জানিয়েছিলাম, যেন কোনো সংঘাতের মধ্যে না পড়তে হয়। এ ছাড়া ইউক্রেনের সঙ্গে যোগাযোগের প্রকৃতি সংবেদনশীল হওয়াও একটা কারণ।’

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক ডেপুটি অ্যাডভাইজার জন ফিনার জানান, কয়েক মাস ধরেই বাইডেনের ইউক্রেন সফরের বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সফরটি করা হবে কি না, এ বিষয়ে গত শুক্রবারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বর্ষপূর্তিতে ‘শুধু শান্তির’ আহ্বান জানাবে জাতিসংঘ : রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ করার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আগামী সপ্তাহে একটি খসড়া প্রস্তাবে ভোট দেবে। এতে ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি ব্যাপক, ন্যায্য এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তিতে পৌঁছানো’র ওপর জোর দেওয়া হবে। এই খসড়া প্রস্তাবটি জাতিসংঘের চার্টার অনুসারে তৈরি করা হয়েছে। আক্রমণের বর্ষপূর্তিতে এটিই জাতিসংঘের কর্মসূচি। এ প্রস্তাবে ফের মস্কোর প্রতি রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি তোলা হবে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের দুই দিনের বক্তৃতার পর ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে আগামী বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি নিয়ে ভোট হতে পারে।

ইউক্রেন এবং তার মিত্রদের প্রত্যাশা, কূটনৈতিকভাবে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন রাখতে। এজন্য অবশ্য প্রস্তাবটির পক্ষে সাধারণ পরিষদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশের ‘হ্যাঁ’ ভোট প্রয়োজন হবে। যদি তা নয়, তবু যেনও গত বছরের চেয়ে বেশি সমর্থন অর্জন করে তা চাইছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ওলোফ স্কুগ সাধারণ পরিষদের এই প্রস্তাব তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সদস্যদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করি। ঝুঁকিতে কেবল ইউক্রেনের ভাগ্য নয়, প্রতিটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাও জড়িয়ে আছে।’ জাতিসংঘে রাশিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি খসড়া প্রস্তাবের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বুধবার সদস্য দেশগুলোর কাছে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে।

ইউক্রেন প্রশ্নে জাতিসংঘের পদক্ষেপের জন্য সাধারণ পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। কারণ ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ রাশিয়ার কারণে মূলত পঙ্গু হয়ে গেছে। এটির স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের যে কোনও প্রস্তাবে রাশিয়া ভেটো দিতে পারে। আর এক সদস্য ভোটো দিলে, প্রস্তাবটি পাস হয় না। নিরাপত্তা পরিষদ তাই কোনও প্রস্তাব পাসের পরিবর্তে ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনায় জোর দিচ্ছে।

গত বছর নিরাপত্তা পরিষদ বেশ কয়েক বার বৈঠক আয়োজন করেছে। যুদ্ধ নিয়ে শুক্রবারও মন্ত্রী পর্যায়ের সমাবেশে আলোচনা হবে। কূটনীতিকরা বলছেন, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের নিউ ইয়র্ক সফরের সম্ভাবনা কম। সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব বা রেজুলেশন আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু এর রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। ইউক্রেন চেয়েছিল খসড়া প্রস্তাবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ১০ দফা প্রস্তাবের আলোকে হোক। কিন্তু কূটনীতিকরা খসড়াটি সহজতর করে তৈরি করেছেন যাতে করে যত বেশি সম্ভব সমর্থন পাওয়া যায়। রাশিয়া ও পশ্চিমারা কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের পথে হাঁটার কারণে নির্দিষ্ট কিছু দেশ মনে করছে তীব্র ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যখানে পড়েছে তারা। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড গত মাসে বলেছিলেন, এক দেশ যখন আরেক দেশকে আক্রমণ করছে তখন কেউ নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। এটি জাতিসংঘের চার্টারের ওপর হামলা। এটি একটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা। এটি একটি প্রতিবেশীর ওপর হামলা। সূত্র : বিবিসি রয়টার্স

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত