ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূতির ভাষণে পুতিন

রাশিয়াকে ধ্বংসে বিশ্বযুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে পশ্চিমারা

রাশিয়াকে ধ্বংসে বিশ্বযুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে পশ্চিমারা

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৈশ্বিক যুদ্ধে মস্কোকে পরাজিত করা যাবে, এমন ভুল বিশ্বাসে ভর করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সংঘাতের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের বর্ষপূর্তির দু’দিন আগে গতকাল জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে এসব কথা বলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। রাশিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাতদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাশিয়া সামনের কাজগুলো সাবধানে এবং ধারাবাহিকভাবে সমাধান করবে।

তিনি বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধ এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করেছিল। কিন্তু পশ্চিমা-সমর্থিত ইউক্রেন রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ায় আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের এই দ্বীপ ভূখণ্ড দখলে নেয় রাশিয়া।

পুতিন বলেন, পশ্চিমারা বিশৃঙ্খলা আর যুদ্ধের বীজ বপন করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বোতল থেকে ভূতকে বের করে দিয়েছে। ‘ইউক্রেনের জনগণ কিয়েভ সরকার ও তার পশ্চিমা শাসকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে; যারা রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে এই দেশটিকে কার্যকরভাবে দখল করেছে।’ রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তারা স্থানীয় সংঘাতকে বৈশ্বিক সংঘর্ষে রূপান্তর করতে চায়, আমরা এটা বুঝতে পারি এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাব।’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়াকে পরাজিত করা অসম্ভব।’ ৭০ বছর বয়সি ক্রেমলিনের এই প্রধান বলেন, রাশিয়া কখনই তার সমাজকে বিভক্ত করার পশ্চিমা প্রচেষ্টার কাছে নতি স্বীকার করবে না। বেশিরভাগ রাশিয়ানই যুদ্ধ সমর্থন করছেন বলে জানান তিনি।

গত বছর সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল দখলে নেয়ার পর রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ক্রেমলিন থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরের গোস্টিনি ডভোর প্রদর্শনী কেন্দ্রে গতকাল যখন পুতিন এই বিষয়ে কথা বলেন, তখন কেন্দ্রে উপস্থিত অতিথিরা দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানান।

এ সময় ইউক্রেন যুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সম্মান জানাতে গোস্টিনি ডভোর প্রদর্শনী কেন্দ্রে উপস্থিত আইনপ্রণেতা, সেনা কর্মকর্তা, গোয়েন্দা প্রধান এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তাদের দাঁড়াতে বলেন। যুদ্ধে নিহতদের পরিবারের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতিও দেন

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ‘ইউক্রেন যুদ্ধ’ ক্রেমলিন প্রধান ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য বৃহত্তম বাজি হিসাবে দেখা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতো পশ্চিমের অন্যান্য নেতারা বলছেন, এই বাজিতে পুতিনকে অবশ্যই হারতে হবে।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রুশ সামরিক বাহিনী তিনটি বড় যুদ্ধক্ষেত্রে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও ইউক্রেনের প্রায় এক পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। বছরব্যাপী এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। পুতিন বলেছেন, উদ্ধত পশ্চিমের বিরুদ্ধে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে রাশিয়া। পশ্চিমারা রাশিয়াকে ভেঙে ফেলতে এবং এর বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ চুরি করতে চায়। যদিও ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা রুশ প্রেসিডেন্টের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ডনবাস সংকট শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের সব চেষ্টায় রাশিয়া করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, শান্তির প্রতিষ্ঠায় পশ্চিমা প্রতিশ্রুতি স্রেফ প্রতারণা। ‘নিষ্ঠুর মিথ্যা’ ছাড়া তারা আর কিছু বলতে পারে না।

পুতিন বলেন, ‘আমরা এই সমস্যাটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম। এই কঠিন সংঘাত থেকে বের হতে শান্তিপূর্ণ উপায় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কিন্তু আমাদের পেছন পেছন ভিন্ন দৃশ্যকল্প তৈরি করা হচ্ছে।’

পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যদের সামনে ভাষণে পুতিন ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়ে রাশিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থার বিষয়টি তুলে ধরেন। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ভাষণ শুরু করেন পুতিন।

গোস্টিনি ডভোর হলের এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ, অর্থমন্ত্রী আন্দ্রেই সিলুয়ানভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল। রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরাও এতে যোগ দিয়েছেন।

বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ‘বিদেশি এজেন্ট হিসেবে বিবেচিত করে চলতি বছর আয়োজনে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ভাষণে পুতিন দাবি করেন, জৈবিক ও পারমাণবিক অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছে কিয়েভ। তিনি বলেন, ‘তারা (পশ্চিম) শুধু সময় নিতে চাচ্ছিল। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তারা চোখ বন্ধ করে থাকে।’

ভাষণে পুতিন তার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেছেন, কিয়েভ সরকারের কাছ থেকে হুমকি এবং ঘৃণার পাশাপাশি নাৎসি আচরণ পেয়ে আসছে রাশিয়া। পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেন রাশিয়ার সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছিল। বলা বাহুল্য, এ বিষয়টি কখনোই স্বীকার করবে না ইউক্রেন সরকার।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কিয়েভ সফরকে রাশিয়া স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখছে বলে জানান ভ্লাদিমির পুতিন।

জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে পুতিন বলেন, তিনি চান একটি নিরাপদ আন্তর্জাতিক অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। যার ফলে পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। তিনি বলেন, আমাদের ভুলের পুনরাবৃত্তি করা চলবে না। আমরা আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রুশ জনগণকে দুর্ভোগে ফেলার লক্ষ্যে আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সফল হয়নি। তিনি দাবি করেছেন, রুশ মুদ্রা রুবলের আন্তর্জাতিক লেনদেন দ্বিগুণ হয়েছে। ইউক্রেনে চলমান সংঘাতে পশ্চিমারা উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, তারা একটি অর্থনৈতিক যুদ্ধেও লড়াই করছে। পশ্চিমারা কখনও কোনও কিছু অর্জন করতে পারবে না বলেও অঙ্গীকার করেছেন তিনি। তার দাবি, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দেশগুলো নিজেরাই নিজেদের শাস্তি দিচ্ছে। এই মন্তব্যের সঙ্গে তিনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ব্যবসা বন্ধ ও জ্বালানি সংকটের কথা তুলে ধরেছেন। পুতিন বলেন, তারা সব কিছুর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে আসছে। সুত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত