প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে নির্বাচনের ফলাফলে এর প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া পক্ষপাতহীন দেখতে চায় আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ)।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের আমন্ত্রণে বিদেশি প্রতিনিধিরা আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন সিইসি।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বড় দুই দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক। বড় কোনো দল জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে ফলাফল নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হবে। সবাইকে নির্বাচনে আনতে সরকারি দলকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে বলেও আশা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ইএমএফের সদস্য এবং নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালা নাথ খানাল বলেন, আমরা আজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। এটা পারস্পরিক মতামত আদান-প্রদানের জন্য এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। বাংলাদেশের গণতন্ত্রে কী হচ্ছে আমরা এমন অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলেছি। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে নেপাল ও বাংলাদেশে উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের গণতন্ত্র উন্নয়নশীল। আমাদের কিছু সমস্যা ও সুযোগ আছে। আমরা এর মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিখুঁত করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, কীভাবে খুব পক্ষপাতহীন নির্বাচন করা যায় এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা যায়, এই দিক থেকে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। আমরা এই বিষয়টিও আলোচনা করেছি যে নির্বাচন খুব ব্যয় বহুল হচেছ বিশ্বব্যাপী। কিভাবে এটি কমানো যায়, আমরা আমাদের মতামত আদান প্রদান করেছি। এছাড়া অনেক ভোটার প্রবাসে আছে, যাদের ভোট দেয়ার অধিকার আছে। কীভাবে তাদের সুযোগ দেয়া যায়, এটিও একটি সমস্যা, যা আলোচনা করেছি।
ভোটাধিকার শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ নিয়ে ঝালা নাথ বলেন, আগামী বছর নির্বাচন হবে। আমরা আশাকরি, পক্ষপাতহীন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করবে, সকল নাগরিক তাদের ভোটাধিকার শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করবে।
তিনি আরো বলেন, তারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যংবেক্ষক আমন্ত্রণ করবে। এতে নির্বাচন অনেক অধিক থেকে অধিকতর পক্ষপাতহীন নির্বাচন হবে, আমরা এতে অনেক খুশি। আমরা আশা করবো এই কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন খুব প্রায়োগিক, শান্তিপূর্ণ এবং পক্ষপাতহীন হবে।
জার্মানির জিবিপি ইন্টারন্যাশনালের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ভলকার ইউ. ফ্রেডরিচ বলেন, আমরা সিইসি কাছে থেকে সমস্যা, তা উত্তরণের উপায়, তাদের পরিকল্পনা ইত্যাদি শুনেছি। আমরা পারস্পারিক মতামত আদান-প্রদান করেছি।
কোনোকিছুই পারফেক্ট নয়, এমনকি গণতন্ত্রও নয়।
আমরা আাশা করব, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে। নির্বাচনের পূর্বে আগামী কয়েক মাসে আমার আরো সহকর্মী আসবে পর্যবেক্ষণের জন্য। আমরা সবাই খুব আত্মবিশ্বাসী, যে বাংলাদেশের জনগণ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন পাবে। এতে কারো কোনো রকম হস্তকক্ষেপ ছাড়া তারা তাদের পছন্দের দলকে বেছে নিতে পারবেন। ভোটার এডুকেশন নিয়ে কার্যক্রম চালানোর পরামর্শের কথাও বলেন তিনি। এক্ষেত্রে কেবল প্রাপ্তবয়স্ক নয় এটি কিন্ডারগার্টেন থেকেই এটি শুরু করার প্রতি পরামর্শ রয়েছে তাদের। কেন না, এটি গণতন্ত্রের জন্য এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণের ওপর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করবে বলে মনে করেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্রেডরিচ বলেন, এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যে কোনো একটি দলকে অংশগ্রহণ করতেই হবে। নিবন্ধিত এবং যোগ্যতা থাকলে তাদের ভোটে অংশগ্রহণ করার অধিকার আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এর আগে বিকাল ৫টা থেকে সোয়া ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, বেগম রাশেদা সুলতানা, আনিছুর রহমান এবং ইএমএফ সদস্য নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আলহ্বাজ তাজ মোহাম্মদ মিয়া, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের (ভারত) বিশেষ প্রতিনিধি মিসেস স্বপ্না, ইএমএফ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী, ডুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মজুমদার ও ড. আজাদুল হক ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানাল, মালয়েশিয়া থেকে ইউনাইটেড ন্যাশন ওয়ার্ল্ড পিস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মেরিয়েট্টা এরগুইডো রেফরমাডো, জার্মান থেকে জিবিপি ইন্টারন্যাশনাল এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভলকার ইউ. ফ্রেডরিচ, ভুটান থেকে গ্লোবাল ভিলেজ কানেকশনের চেয়ারম্যান জেকশন দুকপা, ভারত থেকে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের বিশেষ প্রতিনিধি মিসেস স্বপ্না সাহা।