ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডিসেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নির্দলীয় সরকার প্রশ্নে অনড় বিএনপি সংবিধানের বাইরে যাবে না আ.লীগ

নির্দলীয় সরকার প্রশ্নে অনড় বিএনপি সংবিধানের বাইরে যাবে না আ.লীগ

চলতি বছরের ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে রাজনৈতিক মহল। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তবে বর্তমান সরকারের অধীনে নয়। নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের অধীনে ভোট হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে বিএনপি। আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না বলে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে জোটবদ্ধ হয়ে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি ও তার মিত্ররাও। এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংবিধানের আলোকে নির্বাচনে অংশ নিবে বলে অনড় অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। এদিকে নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ‘সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে জোর গলায় জানান দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের নির্বাচন খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। খালি মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ নেই। সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও বারবার বলছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আগাচ্ছে আওয়ামী লীগ। মানুষের বাড়ির উঠানে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। পাশাপশি সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন তারা। এদিকে রাজপথে থাকা আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচন অংশ নিবে না বলেনি। দলটির নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সংবিধানের আলোকে নির্বাচনে অংশ নিবে না তারা। কিন্তু বিএনপির দফাওয়ারী আন্দোলন দলটিকে ভোটের মাঠে নিয়ে যেতে পারে। বিএনপি অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও ভোটে অংশ নিবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না আসুক সেজন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, সংবিধান মেনে বাংলাদেশেও সেভাবে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে বিএনপি এলো কি এলো না, তার জন্য নির্বাচন বসে থাকবে না। সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন হবে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাাদক ওবায়দুল কাদের সাফ জানিয়েছে দিয়েছেন, সংবিধানের বাইরে অন্য কোনো পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনের সময় সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক কাজ করবে বাকি সব করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আালোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে নির্বাচনে জনরায় প্রতিফলিত হবে। জনগণের কাছে যদি বিএনপির কোনো কমিটমেন্ট ও দায়িত্ববোধ থাকে তাহলে তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করে নির্বাচনে আসা ছাড়া বিএনপি-জামায়াত বা অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার আর কোনো পথ খোলা নেই। জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়েই দেশ পরিচালনা করতে হবে। কে নির্বাচনে এলো বা না এলো সে হিসাব তো পরে হবে। বিএনপিকে জনগণ গুরুত্ব না দিলে আন্তর্জাতিকভাবেও বিএনপির গুরুত্ব কমে যাবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিতকা রক্ষা করতে হবে। সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন হবে। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তনের অন্য কোনো পথ নেই। কে নির্বাচনে আসল আর কে আসল না সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু-অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হলো কি না। বিএনপির বাইরেও দেশে অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে। কোনো একটি দলের জন্য তো নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে না। অন্যান্য রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে। জনগণ হচ্ছে ক্ষমতার উৎস। জনগণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তো আর কোনো দল বা ব্যক্তি মুখ্য বিষয় নয়।

বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও বহির্বিশ্বে তার কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক এসএম কামাল হোসেন। তার মতে, ২০১৪ সালেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তখনো বহির্বিশ্ব বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করেছে। দেশ এগিয়ে গেছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন, দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দাওয়াত দিয়েছেন। বিশ্বের অনেক দেশের সরকারপ্রধান-রাষ্ট্রপ্রধানরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বক্তব্যকে অনুকরণ করছেন।

আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু সুজিত রায় নন্দী বলেন, প্রতিটি ব্যক্তি ও দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের যেমন অধিকার রয়েছে, বর্জনেরও অধিকার রয়েছে। এটা হচ্ছে গণতন্ত্রের নীতি ও রীতি।

আমরা আশা করব, আগামী সংসদ নির্বাচন সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু হবে। পৃথিবীর সব দেশে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সে পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত