ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অংশগ্রহণমূলক দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

বিপরীত অবস্থানে প্রধান দুই দল, সংকটে ইসি

বিপরীত অবস্থানে প্রধান দুই দল, সংকটে ইসি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অনড় অবস্থানের কারণে সংকটে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বিপরীত অবস্থানে থাকায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায় আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু পারা যায় ছাড় দিয়ে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন হোক। তবে আইন অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ভোট হতে হবে। এর বাইরে কোনো কিছু ভাবার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে দলটি। অন্যদিকে বিএনপি এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যেতে অগ্রহী নয়। এমনকি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন সংলাপ বা ভোটে যেতে চায় না বিএনপি।

সূত্র জানায়, নির্বাচনি রোডম্যাপ অনুযায়ী সব কাজ সময় মতো করে যাচ্ছে ইসি। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ এর আগে করেছে ইসি। এখন সীমানা, ভোটার তালিকা, ভোটকেন্দ্র ও নতুন দল নিবন্ধনসহ সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ ভোটে বিএনপিসহ অনেক দল আসতে না চাইলেও তাদের আনার জন্য নতুন করে কোনো উদ্যোগ নিবে না ইসি। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের প্রত্যাশা- এ সংসদ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক। প্রয়োজনে সরকারকে ছাড় দিয়ে হলেও বিরোধী দলগুলোর আস্থা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছে তারা। এ পটভূমিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে জাতীয় নির্বাচনে আনতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও নানামুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন বিশেষ ব্যবস্থায় কারাগার থেকে মুক্তি পান, তখন বিদেশ ভ্রমণ ও রাজনীতি না করার শর্ত দেয়া হয়েছিল। তবে গত রোববার আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, তবে রাজনীতি করতে বাধা নেই। এ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীর নামে করা মামলাগুলোর পর্যালোচনা চলছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে আসতে রাজি হলে কয়েক মাসের মধ্যে হতে পারে এসব মামলার ফয়সালা। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের এমন তৎপরতায় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের আভাস মেলে।

সূত্র জানায়, বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আগামী মাসে কূটনীতিকদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বিরোধীদের আস্থা অর্জনে সরকারের ছাড় দেওয়ার বার্তাটি দলটির নেতাদের জানানো হতে পারে। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সহযোগিতা চেয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। দলটিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। কেননা তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানেই ছিল। তিনি বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার জামায়াত ও আওয়ামী লীগের দাবি নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ‘এই মুহূর্তে দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ কার দাবি ছিল; জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক উইংয়ের প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপির আগামী নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একমাত্র নির্দলীয় সরকারের অধীনে হলেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। সেই নির্দলীয় সরকার নিয়ে শুধু কথা হতে পারে, অন্য কিছু নয়। বিএনপির এ অবস্থান দেশি-বিদেশি সবাই জানেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলেছেন- জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দেবে নির্বাচনকালীন সরকার। বিএনপি ভেতরে ভেতরে সংলাপ চাইছে। তবে সেটা তাদের স্পষ্ট করতে হবে। তারা আনুষ্ঠানিক সংলাপের কথা বললে ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হবে। কেননা সংলাপে আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের।

ইসির একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, আমরা আইন অনুযায়ী ভোট করব, কে আসল কে আসল না এটা আমাদের দেখার কাজ না। আমাদের দায়িত্ব আইন অনুযায়ী সুন্দর ভোট করা। যে ক’টি দল ভোটে আসবে তাদের নিয়ে আমরা ভোট করব। এ কমিশনার আরো বলেন, আমরা সংলাপ করেছি অনেকে আসেননি। আমাদের কিছু করার নেই। আর নতুন করে ভোটে আনার জন্য আমরা কোনো সংলাপ করব না। তারা চাইলে যে কোনো সময় আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বড় দুই দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক।

দুই দলের অনড় অবস্থান, গণতন্ত্রের লিমিটশনের জায়গা কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ অবস্থানটুকু খুব বিপজ্জনক দেশের জন্য। যদি নির্বাচনে এ অনড় অবস্থার কারণে কোনো বড় দল অংশ না নেয়, আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বলবো তাহলে নির্বাচনের মূল ফলাফলের ওপর একটা ঝুঁকি থাকতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা চাই না ওই ধরনের কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। সরকারে অধিষ্ঠিত দলের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে আপনারাও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যান বিরোধীদলগুলোকে সঙ্গে নিতে। তারাও যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনটাকে আমরা যেন অবিতর্কিতভাবে তুলে আনতে পারি। পুরো জাতির কাছে নির্বাচনটি যেন গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে ও বিদেশে সেই স্বীকৃতি যেন লাভ করতে পারি।

সিইসি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সব রাজনৈতিক দল বিশেষ করে প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলো যেন অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে। কারণ, নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে যদি কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হয়, তাহলে প্রত্যাশিত ভারসাম্য সৃষ্টি হবে না।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা আশা করি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হয়ে দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আমাদের বিভিন্ন দল থেকে বলা হয়েছে তারাও বিশ্বাস করেন একটা সমঝোতা হবে। আমরাও আশাবাদী অবাধ-নিরপেক্ষ উৎসবমুখর পরিবেশে ফলপ্রসূভাবে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন নিয়ে কিন্তু গবেষণা লাগবে। এটাকে আরও বেশি সহজ-সরল গণমুখী কিভাবে করা যায় তা দেখতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত