আসছে নতুন নিয়োগ বিধিমালা

পদোন্নতির সুযোগ কমায় এটিইওদের মাঝে হতাশা

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-২০২১ করছে সরকার। এরই মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের কাজ শেষ করে তা আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে।

সূত্রমতে, নতুন এই বিধিমালায় সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারদের (এটিইও) পদোন্নতির সুযোগ ৮০ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। নবীনের উদ্যোম ও প্রবীণের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

তবে এটিইওরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকের অন্যান্য পদেও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদেরই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটিইওদের ক্ষেত্রেই শুধু ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া শুধু পদোন্নতিই নয়, নতুন বিধিমালায় এটিইওদের বেতন গ্রেডেও রয়েছে বৈষম্য। এতে মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। প্রস্তাবিত এই নিয়োগবিধির বিরুদ্ধে আদালতে রিটও হয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসোসিয়েশন শিগগিরই কর্মসূচি দেবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সূত্রমতে, আগে প্রাথমিক শিক্ষায় মেধাবীরা তেমন আসতেন না। সম্প্রতি সে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু নতুন নিয়োগবিধিমালায় প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞদের পদোন্নতির পরিবর্তে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ রাখা হচ্ছে। এতে এই সেক্টরে মেধাবীদের আসার পথ আবারও সংকুচিত হতে যাচ্ছে। এ ধরনের সিদ্ধান্তে মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা নেমে এসেছে।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার (টিইও) পদে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) পদ থেকে ৮০ শতাংশ পদোন্নতি দেয়া হতো। আর ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু প্রস্তাবিত নতুন নিয়োগ বিধিমালায় টিইও পদে এটিইওদের মধ্য থেকে মাত্র ৫০ শতাংশ পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আমরা চাই নবীনের উদ্যোম ও প্রবীণের অভিজ্ঞতা। দুটোই আমাদের দরকার। এ জন্যই আমরা ৫০ শতাংশ পদোন্নতি ও ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের বিধান রেখেছি।

৮০ শতাংশ পদোন্নতির স্থলে ৫০ শতাংশ করলে প্রাথমিক শিক্ষায় সেটি বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে যে ৮০ শতাংশ পদোন্নতির বিধান ছিল, সেটা একটা জাল রায় বা প্রতারণার মাধ্যমে করা হয়েছিল। এ জন্যই আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের মতামত ও বিচার বিশ্লেষণ করে আগের বিধান থেকে সরে এসেছি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিকের অন্যান্য পদেও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদেরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটিইওদের ক্ষেত্রেই শুধু ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ৮০ শতাংশের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। আবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার থেকে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (এডিপিইও) এবং এডিপিইও থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) পদে শতভাগ পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে।

জানা যায়, শুধু পদোন্নতিই নয়, এটিইওদের বেতন গ্রেডেও রয়েছে বৈষম্য। ১৯৯৪ সালের নিয়োগ বিধিমালায় বর্তমান এটিইও পদটি দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। সে সময়ে প্রধান শিক্ষক পদটি ১৪তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষক পদটি ১৮তম গ্রেডে ছিল। প্রধান শিক্ষক পদটি তিন দফায় উন্নীত করার ফলে ২০১৪ সালে ১১তম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষক পদটি চার দফায় ২০২০ সালে ১৩তম গ্রেডভুক্ত হয়। একই সময়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদটি নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে, পিটিআই সুপারিনটেনড্যান্ট পদটি নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে এবং পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদটি নবম গ্রেডে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। কিন্তু ২৮ বছর ধরে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদটি দশম গ্রেডেই রয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক এটিইও জানিয়েছেন, এটিইও এবং টিইও দুই পদেই শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো ব্যবধান নেই। টিইও পদে যারা সরাসরি নিয়োগ পান তাদের মূলত এটিইওদের কাছ থেকেই কাজ শিখতে হয়। এখন মন্ত্রণালয় যদি নবীন কর্মকর্তাদের টিইও পদে চায় তাহলে এটিইও পদে চাকরির অভিজ্ঞতা কমিয়ে পদোন্নতির সুযোগ আরও সহজ করে দিক।

তারা বলেন, শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ৩টি মামলা চলমান রয়েছে। তার মধ্যে ২টিতে স্থগিতাদেশ এবং ১টি মামলায় স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ‘এক্সটেন্ডেড টিল ডিসপোজাল’।

বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করার জন্য নিয়োগবিধির সংশোধন করে অনেক মন্ত্রণালয়ে ১০ম গ্রেডের পদ হতে ৯ম গ্রেডের পদে পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু অভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়া ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় যোগদানের পরেও এটিইও সমগ্র চাকরি জীবনে একটিমাত্র পদোন্নতির সুযোগও পাচ্ছে না। এছাড়া নতুন এই নিয়োগবিধি বাস্তবায়ন হলে সম-গ্রেডের (১০ম) পদে ১১-২০ বছর পরে যোগদান করেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের (এটিইও) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে পরিণত হবে।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএএস রবিউল ইসলাম বলেন, টিইও পদ ৫১৩টি আর এটিইও পদ ২ হাজার ৬০১টি। সরকার যদি শতভাগ পদোন্নতিও দিত তাহলেও প্রতি পাঁচজনে একজন মাত্র পদোন্নতির সুযোগ পেতেন। কিন্তু সেটা না করে উল্টো পদোন্নতির সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রবিউল ইসলাম আরও বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে আমাদের কর্মকর্তারা সংক্ষুব্ধ। এ জন্যই প্রস্তাবিত নিয়োগবিধির ওপর এরই মধ্যে শত শত কর্মকর্তা রিট করেছেন। এ ছাড়া অন্য এক মামলায় টিইও পদে সরাসরি নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করলে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালত তাতে সম্মতি দিয়েছে। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।