ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৩০০ আসনের খসড়া প্রকাশ পরিবর্তনের প্রস্তাব ৬ আসনে

৩০০ আসনের খসড়া প্রকাশ পরিবর্তনের প্রস্তাব ৬ আসনে

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ সংসদীয় আসনের প্রাথমিক খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২০১৮ সালের সীমানা অপরিবর্তিত রাখায় এবং নতুন কয়েকটি প্রশাসনিক সীমানা যুক্ত হওয়ায় খসড়ায় মাত্র ছয়টি আসনে পরিবর্তন এসেছে। খসড়া নিয়ে ১৯ মার্চ পযন্ত দাবি, আপত্তি করার সময় দেয়া হয়েছে।

গতকাল ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তা গেজেট আকারেও প্রকাশ করা হবে।

জানা যায, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের আবেদন পাওয়ার পর দাবি, আপত্তি, সুপারিশ ও মতামত নিয়ে শুনানি করার পর চূড়ান্ত সীমানা পুনর্নির্ধারণ করবে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এ বছরের মাঝামাঝি পুনর্নির্ধারিত সীমানা গেজেটে প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ সীমানা দিয়েই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আবেদনের পর শুনানিতে বক্তব্য যৌক্তিক হলে মেনে নেব। যাই হোক না কেন জুনের মধ্যে চূড়ান্ত করব। ৫ বছর আগের সীমানা বহাল রেখেই এবার খসড়া প্রকাশ করায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসেনি ৩০০ আসনের নির্বাচনি এলাকার সীমানায়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নতুন সিটি করপোরেশন হওয়ায় ময়মনসিংহ-৪ আসন, নতুন প্রশাসনিক এলাকায় হওয়ায় মাদারীপুর-৩, সুনামগঞ্জ-১, সিলেট ১, সিলেট-৩, কক্সবাজার-৩ এবং সুনামগঞ্জ-৩ আসনের পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা আরো জানান, শুধু প্রশাসনিক কারণে নামের পরিবর্তন হয়েছে অথবা প্রশাসনিক বিভক্তি যেগুলো হয়েছে, সেগুলো পুরোনো নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম দিয়ে করা হয়েছে। কোনো পরিবর্তন নেই। সম্ভবত পাঁচ-ছয়টি এ ধরনের হতে পারে। কমিশন অনুমোদন করেছে। যে পাঁচ পদ্ধতি অনুসরণ ১. প্রতি জেলার ২০১৮ সালের মোট আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা ২. প্রশাসনিক ইউনিট বিশেষ করে উপজেলা ও সিটি ওয়ার্ড যথাসম্ভব অখণ্ডতা রাখা; ৩. ইউনিয়ন, পৌর ওয়ার্ড একাধিক সংসদীয় আসনের বিভাজন না করা ৪৪. নতুন প্রশাসনিক এলাকার যুক্ত, সম্প্রসারণ বা বিলুপ্ত হলে তা অন্তর্ভুক্ত করা। ৫. ভৌগলিক বৈশিষ্ঠ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায় রাখা।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ষষ্ঠ জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার বলে জানানো হয়।

বিবিএস এর ওই প্রতিবেদনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে ৬ ফেব্রুয়ারি । সেখানে বলা হয়েছে, প্রাথমিক প্রতিবেদন যাচাইয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ তথ্যে অমিল পাওয়া গেছে। এই ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ হলে চূড়ান্ত জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন।

সবশেষ জনশুমারিকে আমলে নেয়ার বিধান থাকলেও চূড়ান্ত না হওয়ায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে তা পুরোপুরি বিবেচনায় আনতে পারছে না ইসি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে আরও বছর খানেক সময় লাগবে। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তিনি বলেন, তাই আমরা অপেক্ষা তো করতে পারছি না। তারা খসড়া যেটা দিয়েছে সেটা আমলে নিয়েছি। তবে প্রশাসনিক অখণ্ডতা এবং ভৌগোলিক বিষয়টাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এটা প্রকাশ করার পর যদি জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় সমস্যা মনে করেন, নির্ধারিত সময়ে সময় দেব, তারা আবেদন করতে পারবেন। এরই মধ্যে যেসব আবেদন পড়েছে, বেশির ভাগই পরিবর্তন না করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

মো. আলমগীর জানান, প্রত্যেকটি আবেদনই শুনানি করা হবে। তাদের বক্তব্য যদি সঠিক হয়, কেউ যদি বিরোধিতা না করেন এবং আইসির কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে তাদের বক্তব্য যৌক্তিক, তখন হয়তো পরিবর্তন আনা হতে পারে। পারি। এছাড়া কোনো পরিবর্তন হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, শুমারি খসড়া তথ্য নেওয়া হয়েছে। তবে প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আইনেও তাই বলা হয়েছে। আগে একটা উপজেলা ছিল এখন দুটি উপজেলা হয়েছে, এমন ক্ষেত্রে আমরা নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি। আর কোনো পরিবর্তন আনিনি। যে কেউ এই ক্ষেত্রে সীমানা পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবেন। সূত্র জানায়, ১৯৮৪, ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। ওই বছর নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৩৩ আসনে সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব করে ইসি। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে। সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এসেছিল। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদার কমিশন সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার আনুপাতিক হার মেনে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে জিআইএস পদ্ধতি অনুসরণ করে শতাধিক সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আনে। এরপর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ৮৭ আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করে আগের ইসির পদাঙ্ক অনুসরণ করে ৫০টি আসনে ছোটোখাটো পরিবর্তন আনে। ২০১৮ সালে কেএম নূরুল হুদা কমিশন সীমানার খসড়ায় ৪০ আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করে; পরে ২৫টি আসনে ছোটোখাটো পরিবর্তন এনে একাদশ সংসদ নির্বাচন করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত