আলোকিত বাংলাদেশকে আমিনুল ইসলাম আমিন

সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে তরুণ সমাজকে আশার মুখ দেখাব

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

আমিনুল ইসলাম আমিন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক। এর আগে তিনি দুই দফা দলটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১২ সালেও একই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে দলটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২১তম কাউন্সিলের পরও তাকে পুনরায় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন। তবে ছাত্রলীগের হাত ধরেই রাজনীতিতে পদচারণা তার। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের সম্মেলনের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়ে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হয়েছেন তিনি। রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছে আলোকিত বাংলাদেশ।

প্রশ্ন : নির্বাচনি বছরে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হিসেবে দলের জন্য কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন?

আমিনুল ইসলাম আমিন : আমাদের মতো দেশে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদকের পদে থেকে সারা বছরই পিছিয়ে পড়া জনগণের কল্যাণে কাজ করা যায়। আমার আগে যিনি আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ছিলেন, তিনি করোনাকালীন দুর্যোগের সময় অনেকগুলো সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে আমাদের কর্মসূচিগুলো শুধুমাত্র দুর্যোগ কেন্দ্রিক না রেখে, বছরব্যাপী সমাজের পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন অংশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। সে প্রসঙ্গে আমরা দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলব, দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ করব। উনাদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা নিয়েই কাজ করব।

প্রশ্ন : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে কী করণীয় বলে মনে করেন?

আমিনুল ইসলাম আমিন : গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে প্রত্যেকটি দল নিজেদের স্বার্থে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়। কারণ প্রত্যেকটি দলের লক্ষ্য থাকে মানুষকে সেবা করা। মানুষের সেবা করতে হলে ক্ষমতায় যেতে হবে। ভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া হচ্ছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। দুর্ভাগ্যবশত ৭৫-পরবর্তী জিয়া ও এরশাদ দুজনই বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রত্যেকটি দলই চায় নির্বাচন করবে ও জনগণের মতামত নেবে। সেখানে যদি কেউ নির্বাচনে আসতে না চায়, সরকারি দলের দায় থাকে না, হাতে-পায়ে ধরে তাদের নির্বাচনে আনার।

প্রশ্ন : বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে না- এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী?

আমিনুল ইসলাম আমিন : একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, দুইটি কারণে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে না। প্রথমত হতে পারে এমন, পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসিতে সারা পৃথিবীতে আপনি দেখবেন, পুরো নির্বাচনটা পরিচালিত হয় পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে। বিএনপিতে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো লোক নেই। কারণ বিএনপির চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনেই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাই তারা কেউই নির্বাচন করতে পারবেন না। তাছাড়াও বিএনপি ঘোষিত ২৭ দফায় একটি প্রস্তাব রয়েছে, এক ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। ধরে নিলাম বেগম খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত নয় কিন্তু এরই মধ্যে তিনি দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে বিএনপি খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থেকে দূরে রাখছে। এটা তারেক রহমানের নির্দেশে কি না রাজনীতি বিশ্লেষকদের কাছে বড় প্রশ্ন। আরেকটা কারণ হচ্ছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে এমন একটা সরকার চায় বিএনপি, যারা তাদের ক্ষমতায় যাওয়া পথ নিশ্চিত করবে, তাহলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। যেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিএনপি বারবার দাবি করেছে, জনগণ তাদের পক্ষে তাহলে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির সমস্যা কোথায়?

প্রশ্ন : নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘাত এড়াতে সংলাপের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কি না?

আমিনুল ইসলাম আমিন : সংলাপ হচ্ছে দুই পক্ষের বিষয়। আওয়ামী লীগ একা চাইলে তো সংলাপ হবে না। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তারা সংলাপে অংশ নেননি। বিএনপি সংলাপের সব ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আওয়ামী লীগের ঠেকা পড়েনি। তাছাড়া বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য সাংবিধানিক দায় নেই। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সংলাপের দায়িত্ব ইসির ওপরে বর্তায়, আওয়ামী লীগের নয়।

প্রশ্ন : বিএনপি নির্বাচনে না আসলে দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে কি না?

আমিনুল ইসলাম আমিন : কোনো একটি দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করলে দেশের রাজনীতিতে খুব বেশি ইফেক্ট হবে বলে মনে করি না, যদি বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসে। বিএনপির মূল দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিএনপি এক সময়ে বলেছিল, পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ তত্ত্বাবধায়ক হতে পারে না। সেই তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারকে তাঁরাই বিতর্কিত করেছে। তাদের বিতর্কিত করার কারণে হাইকোর্ট সেটা বাতিল করে দিয়েছে। এর পুরো দায় বিএনপির। উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো চাচ্ছে একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তারাও কিন্তু একবারও বলেনি তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। তারা চাচ্ছে, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। আওয়ামী লীগও সেটাই চাচ্ছে।

প্রশ্ন : বিএনপির সঙ্গে অনেক দল আছে যেগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে, তাদের উদ্দেশ্য কী বলবেন?

আমিনুল ইসলাম আমিন : বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে, যাদের বাটি চালান দিয়েও ১০ জনকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এদের সংখ্যা ধরে লাভ হবে না। বাস্তবতায় যেতে হবে।

প্রশ্ন : আগামী নির্বাচনে দেশের তরুণ প্রজন্ম আওয়ামী লীগকে কেনো ভোট দিবে বলে মনে করেন?

আমিনুল ইসলাম আমিন : ইতিমধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা করেছি। আমরা যখন ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম, তখন কিন্তু অনেকে আমাদের তাচ্ছিল্য করেছিল। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা প্রমাণ করেছি, আওয়ামী লীগ যা বলে তা বাস্তবায়ন করে। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি, ২০৪১ সালে দেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে যাবে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মানদণ্ড নয়, চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা ও শিক্ষায়। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের তরুণ ও যুবসমাজের কাছে সেই বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা পেশ করব। ২০০৮ সালে যেভাবে দেশের তরুণ ও যুবসমাজের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দেশের যুবসমাজ শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণায় আস্থা রেখে ভোট দিবে। শেখ হাসিনার পক্ষে থাকবে। কারণ তারা যখন গভীরভাবে চিন্তা করে দেখবে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশে খাদ্য ঘাটতি হয় না। দেশের ৯ লাখ ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষ, ভূমি পায়, গৃহ পায়। তৃতীয় বিশ্বের আর কোনো দেশ এটা করতে পারেনি। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে পিছিয়ে পড়া, কষ্টে থাকা দেশে ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে ৩৫ টাকায় খাবার দিচ্ছে। ওএমএসের মাধ্যমে ১৫ টাকায় চাল দিচ্ছে। আর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভিজিএফএ’র মাধ্যমে বিনামূল্যে চাল দিচ্ছে। এটা পৃথিবীর আর কোথায়ও নেই। তরুণ ও যুবসমাজ যখন দেখবে, এক সময় বৃদ্ধ মা-বাবা, স্বামী পরিত্যক্ত নারীরা ছিল সমাজের বোঝা। তাদের শেখ হাসিনা সরকার সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টুনিতে এনে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে সম্পদের পরিণত করেছেন। যে দেশে এক সময় বাবা-মায়েরা ছেলে-মেয়েদের বই কেনা ও বেতনের টাকার জন্য স্কুলে পাঠাতে পারত না, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকায় সেই সন্তানরা বিনামূল্যে বই পাচ্ছে, তাদের উপবৃত্তির টাকা মোবাইলের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে তরুণ প্রজন্ম আগামীতেও নৌকায় ভোট দেবে।

প্রশ্ন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন কি না?

আমিনুল ইসলাম আমিন : প্রতিটি রাজনীতিবিদের জীবনে জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন থাকে। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। আমি কয়েকবার মনোনয়নের চেয়েছিলাম, দুর্ভাগ্যজনক কারণে আমার মনোনয়ন হয়নি। মনোনয়ন না পেলেও এক সেকেন্ডের জন্য আমি আমার লোহাগড়া-সাতকানিয়ার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করিনি। আমরা যারা রাজনৈতিক কর্মী, মনোনয়নটা হচ্ছে আমাদের কাছে সেকেন্ড পার্ট। প্রথম হচ্ছে রাজনীতি। বর্তমানে অনেকে রাজনীতিতে এসেছেন মনোনয়নের জন্য। আর আমি তো রাজনীতিতে আছি কমিটমেন্ট নিয়ে। যাকে ঘিরে দেশের লাখো নেতাকর্মীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আবর্তিত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, তিনি তো আমাকে মূল্যায়ন করেছেন দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দিয়েছেন।

প্রশ্ন : সাতকানিয়া-লোহাগড়া নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না?

আমিনুল ইসলাম আমিন : প্রথমে আমাকে কিছু বেসিক প্রবলেম খুঁজে বের করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও সাতকানিয়া লোহাগড়া কিছুটা পিছিয়ে আছে। সেটা কার ব্যর্থতা সেই জায়গায় আমি যাব না। আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষই ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার বিষয়গুলো রয়েছে, কীভাবে তাদের সুবিধাগুলো আরো বাড়ানো যায়। ব্যবসা-বাণিজ্য হলেই অর্থনৈতিক গতিশীল হবে। সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এলাকাকে একটি শান্তির জনপথ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করব। এছাড়া নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসে কোথায় কোথায় কি কি কাজ অপূর্ণাঙ্গ আছে, সেগুলোকে খুঁজে বের করব। এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে তৈরি করব। জাতিকে শিক্ষিত করতে না পারলে শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন দিয়ে হবে না। এই ধরনের কিছু কাজ আমাদের করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রযুক্তিগত কানেক্টিভিটি বাড়ানো। প্রযুক্তিগত দিকে এগিয়ে নেয়া। ব্যাপক মানুষকে কর্মমুখী শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা। যেটা স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে খাপ খায়। আমার চেষ্টা থাকবে সৃষ্টিশীল কিছু করা, যাতে তরুণ সমাজ আশার আলো দেখতে পায়।

প্রশ্ন : সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার স্থানীয় নেতাকর্মীরা আপনার সঙ্গে রয়েছে কি না?

আমিনুল ইসলাম আমিন : আমার বেড়ে ওঠা শৈশব-কৈশোর সবই চট্টগ্রাম শহরে। আমার রাজনীতির হাতেখড়িও চট্টগ্রাম শহরে। তবে আমি ২০০৩ সালের অক্টোবর থেকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আসা-যাওয়া শুরু করছি। আমার গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া হলেও খুব কম সংখ্যক নেতাকর্মী জানতেন, আমি সাতকানিয়ার মানুষ। ২০০৩ সালে যখন আমি সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গেলাম, তখন আমার বক্তৃতা শোনার পর কয়েকজন সিনিয়র নেতা আমাকে খুব করে রিকোয়েস্ট করেছিলেন, আমি যেন সাতকানিয়াতে আরও কয়েকটি প্রোগ্রাম করি। তখন সাতকানিয়া স্বাধীনতা বিরোধীদের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। সেখানে আওয়ামী লীগ খুবই দুর্বল সংগঠন ছিল। তখন আমি চিন্তা করলাম যে, সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের জন্য সাফল্য আনা মানেই পাথরে ফুল ফোটানোর মতো আনন্দের বিষয়। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাতকানিয়াতে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব অনেক ভয়াবহ পর্যায়ে ছিল, অনেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মী তাদের মৃত বাবা-মায়ের জানাযায় যেতে পারতেন না। ভাই-বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া তো স্বপ্নের ব্যাপার ছিল। অর্থাৎ কঠিন একটা সময়। গোলাম হোসেনসহ অসংখ্য নেতাকর্মী শিবিরের হাতে নিহত হয়েছেন। শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সে সময় আমি কয়েকজন সাহসী নেতাকর্মী নিয়ে সাতকানিয়ায় যাওয়া-আসা শুরু করি। ধীরে ধীরে সেখানে মানুষের মাঝে একটা অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করেছি। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে, সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছি। বিশেষ করে নিরীহ অসহায় মানুষ যেন কোথাও হয়রানির শিকার না হয় সেই জায়গায় খুব সচেতনভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি। সাতকানিয়ার ও লোহাগাড়ার জনসাধারণ ও নেতাকর্মীদের মাঝে আমি স্বতন্ত্রভাবে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। দলের দুঃসময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমি নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী জামায়াত-শিবির, যে কয়েকটি জায়গায় ভয়ংকর অগ্নিসন্ত্রাস জ্বালাও পোড়াও তাণ্ডব চালিয়েছিল, তার মধ্যে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অন্যতম। সেই আগুনের মধ্যে ঢাকা থেকে আমি নেতাকর্মীদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন আমার স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবসহ অনেকে আমাকে সেখানে যেতে নিষেধ করেছিল। পলিটিক্যাল সিনিয়র নেতারা বলেছিলেন পরে যাও। তখন সাতকানিয়ার অবস্থা এমন হয়েছিল যে, জামায়াত-শিবির আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যেখানেই পেয়েছে, মেরেছে, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে পুনরায় মেরেছে। অনেকে চিকিৎসার অভাবেই মারা গেছে। সে সময়ও আমি নেতাকর্মীদের পাশে ছুটে গিয়েছি। সেখানে জামায়াত-শিবিরের নৈরাজ্য, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশাল সমাবেশ করেছি, মিছিল করেছি। সেই মিছিল সমাবেশের ৬ দিন পর থেকেই জামায়াত-শিবির রুদ্ধ হয়েছে। তখন প্রশাসনের লোকজনও জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক করার জন্য দুঃসাহসিক ভূমিকা রেখেছিল। এই বিষয়গুলো আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা ভুলেনি, তাই আমি মনে করি, তাদের মাঝে আমার একটা স্বতন্ত্র অবস্থান আছে।