ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যবসায়ী নেতাদের আশাবাদ : দামও বাড়বে না

রোজায় ভোগ্যপণ্য সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা নেই

রোজায় ভোগ্যপণ্য সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা নেই

সারাদেশে রমজানের ভোগ্য পণ্য আমদানি বেড়েছে। চট্টগ্রামবন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানি প্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এতে গড়ে উঠছে পর্যাপ্ত মজুত। বিশেষ করে ছোলা আমদানি হয়েছে চাহিদার বেশি। রমজানে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার টন ছোলার চাহিদা আছে। মজুদ আছে প্রায় দেড় লাখ টন। প্রতিদিন ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে আমদানির ছোলা। পাশাপাশি খেজুরসহ আরও কয়েক ধরনের পণ্য আমদানিও বেড়েছে। চিনির কিছুটা ঘাটতি থাকলে রমজানের আগেই পর্যাপ্ত মজুত গড়ে উঠবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।

দেশের আমদানি-রপ্তানির আশি শতাংশের কাজ চলে চট্টগ্রামবন্দর দিয়ে। প্রতি বছর রমজানের আগে ভোগ্য পণ্যের আমদানি বেড়ে যায়। এবার রমজানের আগে থেকে ভোগ্য পণ্যবাহী প্রচুর জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। দেড় মাস আগে ডলার সংকটে এলসি জটিলতায় কিছু জাহাজ থেকে স্বাভাবিক সময়ে খালাস বিঘ্নিত হয়। পরে সংকট কেটে যাওয়ায় সবগুলো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস শেষ হয়। তবে বর্তমানে এলসি জটিলতায় কোনো জাহাজ চট্টগ্রামবন্দর বহির্নোঙরে নোঙর করা নেই। ভোগ্যপণ্যবাহী জাহাজবন্দরে ভেড়ার পর পরই নির্ধারিত সময়ে খালাস শেষ হচ্ছে। এতে বাজারে বেড়েছে ভোগ্য পণ্যের সরবরাহ। চট্টগ্রামবন্দর থেকে খালাস করা ভোগ্যপণ্যের মজুত থাকে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বলে খ্যাত খাতুনগঞ্জে বড় বড় আড়তে মজুত রাখা হয় ভোগ্য পণ্য। আড়ত থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকযোগে পণ্য সরবরাহ হয়। কিছু কিছু ভোগ্য পণ্য বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে খালাসের পর পরই দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরের উদ্দেশে চলে যায়। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোগ্য পণ্যের সরবরাহ পৌঁছায়। গেল এক সপ্তাহ ধরে খাতুনগঞ্জের আড়তে ভোগ্য পণ্যের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। আড়তদাররা জানান, মজুত এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক। তবে সামনে পরিস্থিতি অস্থির হবে কি-না এখনই বলা যাচ্ছে না।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমদ গতকাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, রমজানের ভোগ্য পণ্য পর্যাপ্ত মজুত আছে। বর্তমানে ছোলার মজুত রমজানের এক মাসের চাহিদার প্রায় দ্বিগুন আছে। রমজানে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা থাকে। মজুত আছে অনেক বেশি। তাই ছোলার কোন ধরনের সংকট হবে না। চিনির মজুত এখন যা আছে তা দিয়ে চলবে। তবে সংকট এড়াতে চিনির আমদানি আরও বাড়াতে হবে। আশা করছি রমজানের আগেই চিনির মজুত গড়ে উঠবে।

সরেজমিন খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়ত ঘুরে দেখা যায়, বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাম তেলের দাম মণপ্রতি ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা কমেছে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬৬০ টাকায়। আর প্রতি মণ সয়াবিন তেলের দাম ২৮ টাকা থেকে ৩০ টাকা কমেছে। এই তেল প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৩৬০ টাকায়।

পেঁয়াজেও স্বস্তি ফিরছে। বিশেষ করে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ধীরে কমছে। সেই সঙ্গে দেশীয় পেঁয়াজের দামও কমছে। ভারতীয় আড়তে পেঁয়াজ কেজিতে ৬ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকায়। খুচরায় প্রতি কেজি ৩০ টাকা থেকে ৩২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চীনা রসুন কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৫০ টাকায় এবং চীনা আদা কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। মসুর ডালের দাম কেজিতে ২ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৮ টাকা থেকে ৯০ টাকায়। অস্ট্রেলিয়ান ছোলা কেজি প্রতি ৪ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়, ভারতীয় ছোলা কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। তবে ভারত থেকে ছোলা আমদানি বাড়তে থাকায় ভারতীয় ছোলার দাম দ্রুত কমছে। মটর ডালের দাম কেজিতে ৩ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬১ টাকায়। এলাচের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। লবঙ্গ কেজিতে ২৫ টাকা কমে ১ হাজার ৩৪০ টাকায় আর জিরা ৩০ টাকা কমে ৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামবন্দরে নোঙর করা বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে (লাইটার জাহাজ) করে পণ্য খালাস ও পরিবহণের জাহাজের সিরিয়াল দেয়ার কাজে যুক্ত ডব্লিউটিসি। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুর রশীদ খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, গেল দুই সপ্তাহে অপরিশোধিত চিনিবাহী কয়েকটি জাহাজ থেকে খালাস শেষ হয়েছে। পরিমাণে তা কয়েক লাখ মেট্রিক টন হবে। এছাড়াও ডাল, গমও খালাস হয়েছে প্রচুর। আমার মতে প্রচুর ভোগ্য পণ্য খালাস হওয়ায় রমজানে সংকট হবে না। কেউ যদি মজুত না করেন তবে রমজানে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে বলে আশা করছি।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদার মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, পবিত্র রমজান মাসকেন্দ্রিক ব্যবসার দিকে ব্যবসায়ীদের নজর সারা বছর থাকে। কারণ এই মাসে কিছু কিছু ভোগ্য পণ্য এত বেশি বিক্রি হয় যা সারা বছরের অন্য সময় তেমন হয় না। আমরা মনে করছি এবার পণ্য মজুত ভালো। তাই দাম কমবে। বিশেষ করে ছোলা-খেজুর নিয়ে ক্রেতারা শঙ্কায় পড়বে না। আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম এখন তুলনামূলকভাবে কম। তাই এ মুহূর্তে দাম বৃদ্ধির কোনো শঙ্কা দেখছি না। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম এখন বেশি। চিনি আমদানি পর্যাপ্ত থাকলে কোনো সংকট থাকবে বলে মনে হয় না।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, মজুত পরিস্থিতি ভালো থাকলে দাম সহনীয় থাকে। এবার রমজানের নিত্য পণ্য মজুত এখনও পর্যন্ত ভালো। তাই আশা করছি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত