প্রাথমিক বৃত্তির সংশোধিত ফল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

কোডিং সমস্যা তথা কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল সংশোধন করে প্রকাশ করায় তাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এতে প্রথমবারের ফলাফলে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ যেমন সংশোধিত ফলে বাদ পড়েছে, তেমনি নতুন করে বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ হয়েছে অনেকের। একইভাবে বিভিন্ন স্কুলের বৃত্তির সংখ্যা ও গ্রেডিংয়েরও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। যদিও সারা দেশে মোট বৃত্তিপ্রাপ্তির সংখ্যায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষোভ, হতাশাসহ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে সংশোধিত এ ফলাফলে পরিবর্তন আসাকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

সূূত্রমতে, কারিগরি ত্রুটির কারণে চার ঘন্টার মাথায় স্থগিত হওয়া প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার সংশোধিত ফল প্রকাশিত হয় বুধবার রাতে। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এসময় মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৮২ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে বলে জানানো হয়। তাদের মধ্যে ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার এবং সাধারণ কোটায় ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন বৃত্তি পায়। ফলাফল প্রকাশের পর বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক আনন্দ-উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। স্বজনদের মিষ্টিমুখ করা নিয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে। এমনকি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও কেউ কেউ বৃত্তি পেয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে প্রকাশিত ফল নিয়ে নানা বিতর্ক দেখা দেয়।

তবে কিছুক্ষণ পরই এ বিতর্ক ও উল্লাস রূপ নেয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। কারণ ফল প্রকাশের মাত্র ৪ ঘন্টার মাথায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে তা স্থগিত করার কথা জানানো হয়। কারিগরি ত্রুটির কারণে ফল স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে বলে অধিদপ্তর থেকে বলা হয়। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ বিভাগ) ড. উত্তম কুমার দাশ জানান, কোডিং সংক্রান্ত সমস্যার কারণে বৃত্তির ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে কারিগরি ত্রুটি ও কোডিংয়ের সমস্যার কারণে ফলাফল নিয়ে এ পরিস্থিতির কারণ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) নূরজাহান বেগমকে। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্রুত ফল নির্ভুলভাবে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নেয় সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল কমিটি। ওই কমিটির সহায়তায় নানা জটিলতার পর বুধবার রাত ১১টার দিকে এই সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে আগের ফলে ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে তারা।

তবে সংশোধিত তালিকায় সারা দেশে কতজন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে, তার প্রকৃত সংখ্যা জানাতে পারেননি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমত যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও ভুলের কারণে বৃত্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল তারা যেমন বাদ গেছে, তেমনি যারা বৃত্তি পাওয়ার কথা নয়, এমন অনেকের নাম সংশোধিত ফলাফলে বাদ গেছে। আবার নতুন করেও অনেকে বৃত্তি পেয়েছে।

সূত্রমতে, সংশোধিত ফলাফলে প্রথম দফায় প্রকাশিত বৃত্তির সংখ্যা ঠিক থাকলেও ভেতরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এ নিয়ে ফের সংশ্লিষ্ট মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের একজন শিক্ষক আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম দফায় প্রকাশিত ফলাফলে ৪২ জন বৃত্তি পায়। এর মধ্যে ৩৮ জন ট্যালেন্টপুলে ও বাকিরা সাধারণ গ্রেডে। ওই ফলাফল স্থগিতের খবর পেয়ে সবার মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। পরে পরিবর্তিত ফলাফলে সংখ্যা ঠিক থাকলেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্তির সংখ্যা একজন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। এতে স্বাভাবিকভাবেই গ্রেডিং কমে যাওয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে দুঃখ বিরাজ করছে।

একইভাবে রাজধানীর লালবাগের নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রথম দফায় প্রকাশিত ফলে ৫ জন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বেশ মন খারাপ ছিল।

তবে বুধবার রাতে সংশোধিত আকারে ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, এ বিদ্যালয় থেকে মোট ১৭ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। যাদের মধ্যে ১৬ জন মেধা কোটায় বৃত্তি পেয়েছে। আর একজন পেয়েছে সাধারণ কোটায়। এখন তারা বেশ খুশি।

ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়ে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রথমে একজন বৃত্তির খবর পেলেও সংশোধিত ফলে কারও স্থান হয়নি। অর্থাৎ প্রথমবার বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীও পরে বাদ পড়েছেন। এতে সংশ্লিষ্টরা চরম বিব্রত ও দুঃখিত হয়েছেন।

তবে সংশোধিত ফলাফলের এসব পরিবর্তনকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা স্বাভাবিকভাবেই দেখছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র গণসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কোডিং সমস্যার কারণে সংশোধিত ফলাফলে নানা পরিবর্তন এলেও বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ঠিক আছে। এছাড়া ফলাফলের ত্রুটির বিষয়ে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, করোনাকালে দুই বছর বৃত্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকার গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশে বিভিন্ন কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় প্রায় ছয় লাখ শিক্ষার্থী।

প্রাথমিক বৃত্তি পাওয়া ৮২ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণে টাকা পায়। এর মধ্যে মেধা কোটায় বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ কোটায় বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা মাসে ২২৫ টাকা করে পাবে। এ ছাড়া বৃত্তি পাওয়া সব শিক্ষার্থী বছরে এককালীন ২২৫ টাকা করে পেয়ে থাকে।