অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলা

তিন আসামির রিভিউ খারিজ, দুজনের ফাঁসি কার্যকরে বাধা নেই

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামিসহ দণ্ডিত তিনজনের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

এখন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাবেন। আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।

আদালতে গতকাল অধ্যাপক তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ ও তার কন্যা আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল ধার্য দিনে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আসামিদের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য গতকাল দিন ঠিক করে আদেশ দেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় সেটি নিয়ে আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

শিক্ষক তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ৫ এপ্রিল রায় দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে তাহেরের একসময়ের ছাত্র, পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। সালাম ও নাজমূলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকে।

মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর এবং যাবজ্জীবন সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবদুস সালাম পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হয়ে আবেদনটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে।

২০০৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরের ম্যানহোলে তাহেরের মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সেদিন তার ছেলে মতিহার থানায় মামলা করেন। মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। দুজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ২০০৮ সালে নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল এ হত্যা মামলায় রায় দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুজন হলেন মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমূল আলম ও নাজমূল আলমের সম্বন্ধী আব্দুস সালাম। এরপর আসামিরা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল আবেদন করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। এরপর আসামিরা রিভিউ করেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রিভিউর ওপর শুনানি শুরু হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আসামিদের স্বীকারোক্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার ষড়যন্ত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন। শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হতে ড. তাহেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন তিনি। তার ধারণা ছিল যে, তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলম এবং আব্দুস সালাম ও নাজমূল আর্থিক সুবিধা পেতে তাহেরকে হত্যার জন্য মহিউদ্দিনের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন।

এরপর একই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে তাহেরকে হত্যা করা হয়। এরপর এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।