বদলে যাওয়া প্রতিচ্ছবি রাজধানীর আগারগাঁও

গড়ে উঠছে প্রশাসনিক কেন্দ্র বাড়ছে সেবাগ্রহিতাদের ভিড়

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে রাজধানীর আগারগাঁও। বাড়ছে মানুষের পদচারণা। পরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও বিশ্বের উন্নত দেশের মতো প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করার ফলে কয়েক বছরের ব্যবধানে পুরো আগারগাঁও এলাকার চেহারা পাল্টে গেছে। ২৫ ফুটের সড়ক এখন হয়েছে ৬০ ফুট। আবার যেসব সড়ক ছিল ৫০ ফুট, সেগুলো ১০০ ফুট করা হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আগারগাঁও ১৫০ ফুট চওড়া সড়কের কাজ এগিয়ে চলছে। শের-ই-বাংলা নগর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশের কার্যালয়, ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সরকারি সংগীত কলেজসহ শ্যামলী শিশুমেলা মোড় থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়কের আশেপাশে প্রায় ১২টি সরকারি হাসপাতাল, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ আগারগাঁও এলাকায় কয়েক বছর আগেও চোখে পড়ত সরু রাস্তা, বস্তি, অবৈধ স্থাপনা ও নোংরা পরিবেশ।

আগারগাঁও কেন্দ্রিক সরকারি অফিসের কার্যক্রম চলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করছেন। ইউজিসি ভবন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন, পরিসংখ্যান ভবন, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ ভবন), গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, তথ্য কমিশন ভবন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, এলজিআরডি ভবন, আবহাওয়া অধিদপ্তর, বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ডাক ভবন, কোস্ট গার্ডের সদর দপ্তর, প্রত্নতত্ত্ব ভবন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ভবন, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, পর্যটন ভবন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় সমাজসেবা অধিদপ্তর, জাতীয় বেতার ভবন, আরকাইভ ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় নির্বাচন কমিশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও পাসপোর্ট অফিস নিয়মিত চলছে। তবে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি ও সমবায় বাজারের ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি)সহ বেশকিছু সরকারি অফিসের ভবন নির্মাণে প্লট ফাঁকা রাখা আছে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ও আগারগাঁও এলাকায় হবে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় অধিদপ্তরের (এলজিআরডি) কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড একই ভবনে থাকায় সেবাদানকারী সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেমন সেবা দেয়া সহজ হচ্ছে, আবার যারা সেবা নিতে আসতেন তাদেরও ঘোরাঘুরির হয়রানি কিছুটা কমেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি করার সুবাদে আগারগাঁও এসেছেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় যারা একসময় বস্তি ও খালি জায়গা দেখে বড় হয়েছেন তারা আগারগাঁওয়ের রূপান্তরে উল্লসিত। নতুন নতুন রাস্তাঘাট হয়েছে। একের পর এক ভবন হচ্ছে। সরকারি দপ্তরগুলো আসছে। সেইসঙ্গে মানুষের সরগরম বাড়ছে। যারা নিয়মিত মতিঝিল, পল্টন ও সচিবালয় এলাকায় সরকারি ভবনে কাজের জন্য যাতায়াত করতেন তাদের এখন আসতে হয় আগারগাঁওয়ে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুনবাগিচা থেকে ধীরে ধীরে এনবিআররের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগারগাঁও অফিসে যাওয়া শুরু করেছেন। সরকারি অফিস আসতে শুরু করায় সময়ের সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আগারগাঁও এলাকা। অফিসের কাজে দূরদূরান্ত থেকে আসছে মানুষ। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও কেন্দ্রিক প্রশাসনিক ভবন গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে আগারগাঁও বদলে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপ প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আগারগাঁও কেন্দ্রীক সরকারি অফিসগুলো হওয়ায় পুরান ঢাকার দিকে চাপ কমবে। একইসঙ্গে ঢাকার উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণ হবে। আগারগাঁও রাজউক এলাকার নাগরিক সুযোগ সুবিধা ও জীবনমান উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের অফিসও মহাখালী থেকে চলে এসেছে আগারগাঁওয়ে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উল্টো পাশে ১৩তলা পর্যটন করপোরেশনের ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। উল্লেখ, আগারগাঁওয়ে ২৮টি ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। আরো অন্তত সাতটি ভবনের কাজ চলছে।