তৃতীয় দফার সময় শেষ কাল

এখনো প্রায় ৮০ হাজার হজযাত্রীর নিবন্ধন বাকি

* খরচ বাড়ার প্রভাব, কোটা পূরণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে * নিবন্ধনের সময় বেশি না বাড়ানোর আভাস ধর্ম মন্ত্রণালয়ের

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

চলতি বছরের সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের নিবন্ধনের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া তৃতীয় দফার সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামীকাল। অথচ নির্ধারিত কোটার প্রায় ৮০ হাজার হজযাত্রীর নিবন্ধন এখনো বাকি রয়েছে। কোটা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত প্রাক-নিবন্ধিত তালিকায় থাকা সবাইকে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হলেও নতুন করে সময় খুব বেশি বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে আভাস দেয়া হয়েছে। সৌদি আরবে বাড়িভাড়াসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য কোটা পূরণ না হলেও শিগগিরই এবারের হজের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রাক-নিবন্ধনসহ প্রস্তুতি নিয়েও করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দিন অপেক্ষায় থাকা অনেক হজযাত্রীই এবার খরচ বাড়ার কারণে হজের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার সপরিবারে হজের প্রস্তুতি নিলেও খরচ জোগাড় করতে না পারায় শুধু নিজের জন্য নিবন্ধন করছেন। এ পরিস্থিতিতে হজযাত্রীর কোটা পূরণে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি নিজেদের ব্যবসা নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বেসরকারি অনেক এজেন্সি।

সূত্রমতে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পাদিত হজ চুক্তি অনুযায়ী এ বছর মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশি হজ পালন করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৬৮ জন।

হজে যেতে আগ্রহী প্রাক-নিবন্ধিতদের মধ্য থেকে কোটা অনুযায়ী চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২২ ফেব্রুয়ারি এই সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এসময় খুব অল্পসংখ্যক নিবন্ধন করেন। যে কারণে সময়সীমা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু এসময়ও কোটার পূরণ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয় ৭ মার্চ পর্যন্ত, যা আগামীকাল শেষ হচ্ছে। কোটা পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে নিবন্ধন সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল। তবে এখনও কোটা পূরণের অনেক বাকি থাকায় নিবন্ধনের সময় আরও বাড়ানো হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মোট ৪৭ হাজার ৯৯১ জন হজযাত্রীর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৩৬৩ জন সরকারি এবং ৩৯ হাজার ৬২৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন। অর্থাৎ কোটার হিসেবে এখনও ৭৯ হাজার ২০৭ জনের নিবন্ধন বাকি রয়েছে। নির্ধারিত কোটা পূরণ হতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও ৬ হাজার ৬৩৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭২ হাজার ৫৪০ জনকে নিবন্ধন করতে হবে। তবে নিবন্ধনের বর্তমান গতিতে কোটা পূরণের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ থেকে বেসরকারি একটি হজ এজেন্সি মালিক বলেন, হজযাত্রীদের নিবন্ধনের অবস্থা খুবই খারাপ। তার এজেন্সির মাধ্যমে হজে যেতে দেড় শতাধিক আগ্রহী ব্যক্তি প্রাক-নিবন্ধন করলেও গতকাল পর্যন্ত মাত্র ২০ জনের মতো নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। খরচ বাড়ার কারণে অনেকে হজে যেতে না পেরে খুবই মর্মাহত হচ্ছেন। কারণ প্রাক-নিবন্ধিতদের বেশিরভাগই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তারা যে ১৫/২০ লাখ টাকা পেনশন পেয়েছেন তা দিয়ে আগের খরচের হিসেবে স্বামী-স্ত্রীসহ পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে হজে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় পেনশনের পুরো টাকা দিয়েও হজে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য অনেকে দুঃখ-কষ্টে কান্না করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এর আগে করোনা পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকে পরপর দুই বছর হজে যাওয়ার সুযোগ পাননি কেউ। গত বছর মাত্র ৬০ হাজার ব্যক্তি (স্বাভাবিক কোটার অর্ধেকেরও কম) হজে গেলেও সৌদির শর্তের কারণে ৬৫ বছরের বেশি বয়সিরা বঞ্চিত হন। ফলে প্রাক-নিবন্ধন করেও দীর্ঘ দিন সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। তবে এ বছর পূর্ণ কোটায় হজে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলেও খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আগ্রহী হজযাত্রীরা।

সূত্রমতে, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজে প্রত্যেক হজযাত্রীর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়েছিল।

এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কোরবানি ছাড়াই সর্বনিম্ন প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর আগের বছর যা ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে দেড় লাখ টাকা বেড়েছে। এবার বিমান ভাড়াই লাগছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা, যা গত বছর ছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা।

সূত্রমতে, করোনাকালের আগে ২০১৯ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্য ছিল তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ২০২০ সালে সর্বনিম্ন প্যাকেজ তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও সে বছর করোনার কারণে কারও হজে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।

হজযাত্রী নিবন্ধনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়াসহ অনেক প্রস্তুতির বিষয় আছে। তাই হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আর খুব বেশিদিন দেয়া সম্ভব হবে না। কোটা পূরণ না হলেও কোনো সমস্যা নেই। নির্ধারিত সময়ের পর নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। ৭ মার্চের পর আরেক দফা সময় বাড়ানোর আভাস দিলেও তার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ পরে জানানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।