রোহিঙ্গা শরণার্থী সহায়তা

জাতিসংঘ সংস্থাসমূহ সিইআরএফ তহবিল বরাদ্দ দিয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জাতিসংঘ কেন্দ্রীয় জরুরি সহায়তা তহবিলের (সিইআরএফ) পক্ষ থেকে ৯ মিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল বরাদ্দের পর ছয়টি জাতিসংঘ সংস্থা কক্সবাজার ও ভাসানচরের শরণার্থী শিবিরে বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকার ও তাদের অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে জাতিসংঘ সংস্থাসমূহ শরণার্থীদের জন্য তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার, খাদ্য সহায়তা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ডব্লিউএএসএইচ) পরিষেবা এবং সুরক্ষা প্রদান করছে। নারী, বালিকা ও প্রতিবন্ধীদেরও এসব প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা দেয়া হবে। কক্সবাজার জেলা এবং ভাসানচর দ্বীপের শিবিরে অবস্থানকারী ৯ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং উখিয়া ও টেকনাফে বসবাসকারী ১৭ হাজার ৮০০ বাংলাদেশির জন্য জীবন রক্ষাকারী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০২২ সালের নভেম্বরে সিইআরএফ কর্তৃক জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), ইউএন উইমেন এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মতো ছয়টি জাতিসংঘ সংস্থার অনুকূলে ৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়।

আইওএম এবং ইউএনএইচসিআর কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে অবস্থানকারী শরণার্থী পরিবারগুলোকে এলপিজি বিতরণ করছে। এর ফলে মোট ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫১ জন শরণার্থী এলপিজি সিলিন্ডার পেতে শুরু করেছে।

এতে শরণার্থীদের স্বাস্থ্য এবং বাসস্থানের পরিবেশ সুরক্ষিত হয়েছে। কক্সবাজারে আইওএম এবং ইউএনএইচসিআর কর্তৃক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে নারী, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী শরণার্থীসহ সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে কমিউনিটি আউটরিচ প্রোগ্রাম ও সচেতনতা সৃষ্টিকারী কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সেবাও দেয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার ও ভাষানচর এলাকায় যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য (এসআরএইচ) এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) সমন্বয় মধ্যস্থতায় সহায়তা করার জন্য ইউএনএফপিএ ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার বরাদ্দ পেয়েছে। ইউএনএফপিএ পরিচালিত প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো ৩ লাখ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও বালিকাকে যে কোনো ধরনের ‘জিবিভি’ থেকে সুরক্ষা প্রদান ও এ সংক্রান্ত সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করা।

এ বছরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়িত হবে এমন যেসব প্রকল্পে ‘ইউএনএফপিএ’ সহায়তা প্রদান করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজনন স্বাস্থ্য কিট, পণ্য, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন বিভিন্ন পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির পাশাপাশি ধর্ষণ-পরবর্তী শুশ্রƒষা কিট সংগ্রহ ও বিতরণ, এসআরএইচ/জিবিভি সংক্রান্ত বিভিন্ন রেফারেল সেবা জোরদার করা, জিবিভি ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী কর্তৃক সহিংসতা-পরবর্তী ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মীদের সামর্থ্য গঠন, মিডওয়াইফ নিয়োগের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবা স্থাপনাগুলোর মধ্যে জিবিভি সংক্রান্ত ঘটনা সুরাহার ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে নারীবান্ধব পরিবেশে নানা ধরনের মৌলিক যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা।

ইউনিসেফ ও এর অংশীদাররা একটি সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে ভাসানচর এলাকায় জরুরি শিশু সুরক্ষা ও জিবিভি সংঘটন প্রতিহত করা এবং এ সংক্রান্ত সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা ও তাদের ক্ষমতায়নের অনুকূল বিভিন্ন কার্যক্রমের মিশ্রণে গঠিত হয়েছে উক্ত সমন্বিত পদ্ধতি। শিশুরা ঘটনা মোকাবিলা, মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা এবং জীবনমুখী দক্ষতাভিত্তিক শিখনের সুযোগ পেয়েছে। ইউনিসেফ কক্সবাজার ও ভাসানচরে বসবাসকারী ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি (ডব্লিউ এএসএইচ) পরিষেবাও প্রদান করবে।

ইউএন উইমেন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে সহিংসতার পর বেঁচে থাকা এবং জিবিভি ঝুঁকিগ্রস্তদের জন্য জীবন রক্ষাকারী ও আবশ্যকীয় জিবিভি সেবাসমূহ ও সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি করছে। সংস্থাটি এরইমধ্যে শিবিরগুলোতে পাঁচটি বহুমুখী নারী কেন্দ্র চালু করেছে এবং এই বহুমুখী কেন্দ্রগুলোতে জীবিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা ও জিবিভি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সিইআরএফ তহবিল বরাদ্দ করা হবে।

‘ডব্লিউএফপি’ বিভিন্ন ‘ফুড ভাউচারের’ মাধ্যমে শরণার্থীদের খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা দিচ্ছে। শিবিরগুলোর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ডব্লিউএফপি আউটলেটগুলোতে ব্যাপক পরিসরে নানা ধরনের শুকনো ও তাজা খাবার এই ফুড ভাউচারগুলোর বিনিময়ে ক্রয় করা যাবে।

অবশ্য তহবিল স্বল্পতার কারণে, ‘ডব্লিউএফপি’ এই ফুড ভাউচারের মূল্য প্রতিমাসে জনপ্রতি ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করতে বাধ্য হয়েছে। এই কর্তন এমন এক সময় এলো যখন পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ‘ডব্লিউএফপি’ এর ওপর নির্ভরশীল এবং এদের শিশু ও নারীরা এরইমধ্যে উচ্চ হারে অপুষ্টিতে আক্রান্ত।

গত বছরের নভেম্বরে তহবিল বরাদ্দের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, শরণার্থী ও এদেশীয় জনগোষ্ঠীকে তাদের নিত্যদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রামে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে অপর্যাপ্ত তহবিল নিয়ে পরিচালিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সহায়তা কার্যক্রমের অনুকূলে উক্ত তহবিলসমূহ বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারীর সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো স্বাগত জানায়। বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় এনজিওসমূহের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সিইআরএফ কর্তৃক বরাদ্দকৃত এই অর্থের মাধ্যমে শরণার্থীদের সুরক্ষা প্রদান, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলা এবং শরণার্থীদের অধিকার ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিবেশ রচনা করা সম্ভব হবে।

সিইআরএফ এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে দাতারা আগাম একটি যৌথ-তহবিল গড়ে তোলে এবং যেখানেই সংকট হানা দেয় সেখানে প্রাথমিক ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে অতিরিক্ত তহবিলের জন্য অপেক্ষারকালে মানবিক ত্রাণ সংস্থাসমূহকে ওই যৌথ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।