ইংল্যান্ডকে হারাল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শফিক কলিম

বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমে এবার পাত্তাই পেল না ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ প্রাণ ভোমরা সাকিব আল হাসানের জাদুকরী নৈপূণ্যে বাংলাদেশ তুলে নিলো দারুণ জয়। লম্বা সময়ের মধ্যে দেশের মাটিতে প্রথমবার টানা চার ওয়ানডে হারার শঙ্কায় পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ জিতল ৫০ রানে। ২৪৬ রানের পুঁজি নিয়ে দারুণ বোলিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের থামিয়ে দিল ১৯৬ রানে।

প্রায় ৯ বছরের মধ্যে প্রথমবার দেশের মাটিতে কোনো ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার শঙ্কায় পড়ে যাওয়া বাংলাদেশকে পথ দেখালেন সাকিব। ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো উপহার দিলেন, ফিফটি আর ৪ উইকেটের ডাবল। ব্যাটিংয়ে পেলেন মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর সহায়তা। বোলিংয়ে আলো ছড়ালেন ইবাদত হোসেন চৌধুরি। সাড়ে ৬ বছর পর ইংলিশদের বিপক্ষে ম্যাচ জিতল তামিম ইকবালের দল। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ওয়ানডে ও টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪ ম্যাচে এটা বাংলাদেশের পঞ্চম জয়। হোয়াইটওয়াশ হওয়ার চিন্তায় পড়ে যাওয়া দলটি ঘরের মাঠে নিজেদের রেকর্ড ধরে রাখল। এক সময়ে অহরহ হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশই ২০১৪ সালের পর তেতো এই স্বাদ নেয়নি। ১১ বছর ধরে কোনো দলই বাংলাদেশকে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে ধোলাই করতে পারেনি। গতকালের এই জয়ে সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রইল।

রান তাড়ায় নেমে ইংল্যান্ড বেশ ভালোই শুরু করেছিল। কিন্তু ৫৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর ১ রানের মধ্যে নেই আরো ২ উইকেট! ২৫ বলে ৩৫ রান করা ফিল সল্টকে দিয়ে শুরু করেন সাকিব। স্কোরবোর্ডে ১ রান যোগ হতেই ডেভিড মালানকে (০) মাহমুদ উল্লাহর তালুবন্দি করেন ইবাদত। দলীয় ৫৫ রানেই সাকিব ফেরান আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জেসন রয়কে (১৯)। এরপর ৪৯ রানের জুটি গড়েন স্যাম কারেন আর জেমস ভিন্স। ২৪তম ওভারে স্যাম ৪৯ বলে ২৩ রান করা কারেনকে লিটন দাসের তালুবন্দি করেন মিরাজ। ফের মঞ্চে সাকিব, তার বলে কিপার মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন জেমস ভিন্স (৩৮)। ইবাদত হোসেনের বলে অলরাউন্ডার মঈন আলী (২) বোল্ড হয়ে গেলে ১৩০ রানে ৬ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এরপর সবচেয়ে বড় শিকারটি ধরেন তাইজুল। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ২৪বলে ২৬ রান করা জস বাটলার। ম্যাচ পুরোপুরি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার আদিল রশিদ (৮)। মিরাজদের দুর্দান্ত ক্যাচে রেহান আহমেদকে (২) ফিরিয়ে সাকিব ধরেন চতুর্থ শিকার। যা সাকিবের ৩০০তম ওয়ানডে উইকেট। এবাদতের বলে তামিম ক্যাচ না ফেললে ম্যাচটা ৪২ ওভারেই শেষ হয়ে যেত। সাকিবের করা ৪৩তম ওভারের শেষ বলে রিভিউ নিয়ে লেগ বিফোর থেকে বেঁচে যান জোফরা আর্চার। পরের ওভারের প্রথম বলেই ক্রিস ওকসকে (৩৪) কট অ্যান্ড বোল্ড করে ব্রিটিশদের ইনিংসে ইতি টেনে দেন মুস্তাফিজ। ৪৩.১ ওভারে ১৯৬ রানে অল আউট হয় ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ পায় ৫০ রানের দারুণ জয়।

তবে হোয়াইটওয়াশড এড়ানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামা দলের যেভাবে ইনিংসের শুরু হওয়ার কথা, বড় সংগ্রহ তো দূরের কথা; লড়ার মতো পুঁজি গড়াই কঠিন মনে হওয়া কথা। আগের ম্যাচের মতো তৃতীয় ওয়ানডেতেও ইংল্যান্ডের পেসার স্যাম কারানের বোলিং তোপে শুরুতে এলোমেলো বাংলাদেশের ইনিংস। ১৭ রানের মধ্যে তাদের দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও তামিম ইকবালকে ফিরিয়ে দেন স্যাম কারান। শুরুর ধাক্কায় বাংলাদেশ তখন দিশাহারা, এমন সময়ে ত্রাতা হয়ে দেখা দেন শান্ত ও মুশফিক। দ্রুততার সঙ্গে উইকেটে মানিয়ে নিয়ে জুটি গড়ে তোলেন তারা। তৃতীয় উইকেটে ১২৮ বলে ৯৮ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। এর মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ার ও চলতি সিরিজের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। এর পরই দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটে কাটা পড়তে হয় তাকে। সাজঘরে ফেরার আগে ৭১ বলে ৫টি চারে ৫৩ রান করেন তিনি। শান্তর বিদায়ের পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৩তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা মুশফিককে ফেরান আদিল রশিদ। ইংলিশ এই লেগ স্পিনারের বলে আউট হওয়ার আগে ৯৩ বলে ৭০ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। শান্ত-মুশফিকের পর সাকিব একাই লড়েছেন প্রায় শেষ পর্যন্ত। মাঝে আফিফ হোসেন ধ্রুব কিছুটা সময় উইকেটে ছিলেন।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজরা কিছুই করতে পারেননি। অন্য প্রান্তে নিয়মিত ধারায় উইকেট পড়লেও সাকিব চেনা ছন্দে ব্যাট চালিয়ে যান। ৪৯তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৭১ বলে ইনিংস সেরা ৭৫ রান করেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। আফিফের ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান। জফরা আর্চার ৩৫ রানে ৩টি উইকেট নেন। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভোগানো আদিল ৫ ওভারে ২১ রানে নেন ২ উইকেট। স্যাম কারানের শিকারও ২ উইকেট। ক্রিস ওকস ও অভিষিক্ত রেহান আহমেদ একটি করে উইকেট পান।