অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্ষীণ

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো। তারা বলছেন, রাজনৈতিক বড় দুটি দল এবং মাঝখানে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের অবস্থানে অনড় থাকায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ মূলক না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে চায় ইসি। এ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সব প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রয়োজন, সে বিষয়ে কোনো সুরাহা হচ্ছেনা। কোনো পক্ষ ছাড় দিচ্ছে না। এ বিষয়ে একাধিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচন মানে সুষ্ঠু নির্বাচন, নির্বাচন মানে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন, এক তরফার নির্বাচন নির্বাচন নয়। অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সবার প্রত্যাশা। এখন যে ভাবে দেখা যাচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ মসৃণ নয়। সামনে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে। আমরা জানিনা এর পরিণতি কী হবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে তিনিটি পরিস্থিতি হতে পারে। একটি হচ্ছে পরিস্থিতি সহিংস হবে, দ্বিতীয়টি হচ্ছে নির্বাচন কিছুটা হিংসাত্মক হবে, তৃতীয়টি হচ্ছে নির্বাচন অংশহণমূলক এবং সুষ্ঠু হবে। তবে তৃতীয়টি হওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ। বর্তমান পরিস্থতি নিয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশে বিস্ফোরণসহ কিছু ঘটনা ঘটলো, এগুলোর বিষয়ে অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। এগুলো পরিস্থিতিকে খারাপের দিকে নিচ্ছে।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেছেন, গত ২০১৪ ও ২০১৮ মত এবারের নির্বাচন হবেনা। এবারের নির্বাচন কঠিন হতে পারে। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন বলে মনে করেন জানিপপ চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা। যারা নির্বাচনের মূল স্টেকহোল্ডার তাদের নির্বাচনে আনা। সেই সঙ্গে গত নির্বাচন কমিশনের যে নেতিবাচক ইমেজ সেখান থেকে নির্বাচন কমিশনকে বের করে এনে ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করা। এদিকে অধিকাংশ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা বলছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে ইসি শক্ত কোনো ভূমিকা না নিলে এবং রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ সংস্থার তেমন কিছু করার নেই। এর আগে নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নতুন করে কোনো সংলাপের সুযোগ নেই। সিইসি বলেছেন, ‘বিএনপিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অথচ বিএনপি আমাদের সে অনুরোধ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে অনড়। এক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের আর কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসেনি, জোর করে এসেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে সংসদ গঠন করেছে। পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে সরকার গঠন করেছে।

তিনি বলেন, আবার সামনে নির্বাচন আসছে। একইভাবে এই সরকার আবারো একটা পাতানো ও ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ভোট কখনো নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে না। এবার আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো তামাশার নির্বাচন হতে দেব না। এ দেশের মানুষ হতে দেবে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার পুরো দায় বিএনপির বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। তিনি বলেন, যারা বলেছিল পাগল আর শিশুরা ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে কেউ নয়, এখন তারাই আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে। তারপরও যদি নির্বাচন নিয়ে সংলাপের প্রয়োজন থাকে, সেটা আওয়ামী লীগ একা চাইলে হবে না। সংলাপ হচ্ছে দুই পক্ষের বিষয়। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। দুটি কারণে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে না। প্রথমতো হতে পারে এমন, পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসিতে সারা পৃথিবীতে আপনি দেখবেন, পুরো নির্বাচনটা পরিচালিত হয় পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে। আওয়ামী লীগ কোনো সংঘাত চায় না। আমরা শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।