ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে দেড় লাখ ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে

* বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়নি বেশিরভাগ ভবনে * নকশা অনুমোদনকারী সংস্থার তদারকিতে শৈথিল্য
চট্টগ্রামে দেড় লাখ ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে

তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ভূমিকম্পের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও বেড়েছে আতঙ্ক। চট্টগ্রাম নগরীর ১ লাখ ৮৩ হাজার ভবনের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ ভবনই রয়েছে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে। রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ বা তার চেয়ে অধিক মাত্রার ভূমিকম্প হলে চট্টগ্রাম শহরে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার আগে এখনই প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। যাতে ক্ষয়ক্ষতি অন্তত সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, চট্টগ্রামে গড়ে বছরে ৬/৭ বার ভূকম্পন হয়। বেশিরভাগই মৃদু কিংবা মাঝারি পর্যায়ের। এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় না। তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ছোট ছোট ভূমিকম্প ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের আলামত। চট্টগ্রামে ১৯৯৭ সালে রিখটার স্কেলে পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্পে একটি পাঁচতলা ভবন ধসে পড়েছিল। নগরীর হামজারবাগ এলাকার ওই ভবনটিতে আটকা পড়ে সাদিয়া নামে এক কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনা এখনো অনেকের মনে দাগ কেটে আছে। এরপর থেকে দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতির বড় ভূমিকম্প আর হয়নি। তবে ভূমিকম্পের ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্র জানায়, ভবন নির্মাণের আগে নকশা অনুমোদন করে নিতে হয়। নকশায় রয়েছে ভবন নির্মাণে নানা শর্তসহ নিরাপদ ভবন নির্মাণের দিক নির্দেশনা। নকশা ছাড়া কোনো ভবন নির্মাণ হলে ভেঙে ফেলার নিয়ম রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের জরিমানার বিধানও রয়েছে। নকশা অনুসরণ করে ভবন নির্মাণের তাগিদ দেয়া হয় মূলত ভূমিকম্পের আতঙ্ক ঘিরেই। তাছাড়া ভবনের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার বিষয়টি নকশার সাথে সম্পৃক্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দার সংখ্যা এখন ৬০ লাখের বেশি। নগড়জুড়ে রয়েছে ছোট-বড় নানা ধরনের ভবন। এসব ভবনের বড় অংশ সিডিএ’র নকশা অনুসরণ করে নির্মাণ করা হলেও কিছু ভবন নির্মাণ করা হয়েছে নকশা অনুসরণ না করেই। এ ধরনের ভবনগুলো বড় মাত্রার ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হলে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাবে।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরসংলগ্ন অধিকাংশ বড় স্থাপনা গড়ে উঠেছে বেলে মাটির ওপর। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর, শাহ আমানত বিমানবন্দর ও ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ভূমিকম্পের সময় সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। কোনো পেট্রোকেমিক্যাল স্থাপনায় আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। নগরীর সরু সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অনেক ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলা করাও কঠিন। বড় ভূমিকম্পে কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত পুরোনো কালুরঘাট সেতু ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি ভেঙে গেলে নগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগই ভেস্তে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, পুরোনো ভবনের ঝুঁকি বেশি। চট্টগ্রামে বহু পুরোনো ভবন রয়েছে, যেগুলো বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতি হবে বেশি। এসব ভবন ভেঙে ফেলাসহ বিল্ডিং কোড অনুসরণের ওপর জোর দিতে হবে।

ভূমিকম্পের ক্ষতি এড়াতে সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, দুই ধরনের প্রস্তুতি আছে। একটি প্রি ডিজেস্টার বা ক্ষয়ক্ষতির আগের প্রস্তুতি। আরেকটি আফটার ডিজেস্টার বা ক্ষয়ক্ষতির পরে। আমাদের ক্ষয় ক্ষতির আগের পরিকল্পনার দিকে অনেক বেশি জোর দিতে হবে। এতে ক্ষতি অনেকটা এড়ানো যাবে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চট্টগ্রামে ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। সেজন্য আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। যাতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়। বিশেষ করে ভবন নির্মাণের আগে নকশা অনুমোদন তদারকি খুবই প্রয়োজন। নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে।

ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের কয়েকটি এলাকা ঝুঁকিতে রয়েছে। তার মধ্যে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঝুঁকি অনেকটা বেশি। চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পর ইতিহাস আছে। এতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও তথ্য রয়েছে।

নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাঠানের পরও কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেয়ায় এই আবেদন করা হয় বলে জানান আইনজীবী।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশ মারাত্মক বায়ুদূষণে ভুগছে। আবার এসব দূষণের কারণে যক্ষ্মাসহ নানা রোগে ভুগছেন অনেকেই।

রাস্তায় চলতে দেখা যায় মানুষ রাস্তার পাশেই প্রস্রাব করছে, দেয়ালের আশপাশে থুতু নিক্ষেপ করছে, আবার কেউ কেউ একদম প্রকাশ্যেই ধূমপান করছেন। এর ফলে ওইসব জায়গা দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচলের সময় চরম বিপত্তিতে পড়ে। আগামী সপ্তাহে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে এ ব্যাপারে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত