ফিল্মি কায়দায় গাড়ি আটকে ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাই

উদ্ধার ৯ কোটি, আটক ৭

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে গাড়িতে করে বিভিন্ন বুথে টাকা রাখার জন্য রওনা হলে ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে এসব টাকা নিয়ে যায় বলে পুলিশ ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া তল্লাশির মুখে লুট হওয়া টাকার চারটি ট্রাঙ্কের মধ্যে তিনটি ট্রাঙ্ক থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকার মতো উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিএমপি-ডিবি)। অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, রাজধানীর খিলক্ষেতের হোটেল রিজেন্সির আশপাশের এলাকা থেকে আমরা লুট হওয়া বেশিরভাগ টাকা উদ্ধার করেছি। এখনও অভিযান চলছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোট চার ট্রাঙ্ক টাকা লুট হয়েছিল। এর মধ্যে তিন ট্রাঙ্ক উদ্ধার হয়েছে। এখনও গোনা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ৯ কোটি টাকার মতো হবে উদ্ধার করা হয়েছে।

টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা পরিকল্পিত জানিয়ে গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, মানিপ্ল্যান্ট লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের টাকা আনা-নেয়ার বিষয়টি ছিনতাইকারীরা অনেক দিন ধরে ফলো করছিল। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। মানিপ্ল্যান্ট লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের দুজন পরিচালকসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের০ জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (গতকাল রাত ৮ টা) অভিযান অব্যাহত ছিল।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর ডিওএইচএসের সিকিউরিটি কোম্পানি মানি প্ল্যান্টের গাড়িতে করে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা সাভার ইপিজেডের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথে সশস্ত্র কয়েকজন ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইয়ের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তুরাগ থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা (ডিউটি অফিসার) শেখ জাহিদ। তিনি বলেন, ঘটনার পর উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার, ওসিসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসেছেন। এ ঘটনার বিষয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে, প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র ঠেকিয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তল্লাশি চালায় ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে রাজধানীর উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় কড়া তল্লাশি চালায় পুলিশ। দুপুরে তুরাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার বলেন, টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই উত্তরাসহ আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। আমরা টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজ শুরু করা হয়েছে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকায় এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আড়াআড়ি করে মাইক্রোবাস দাঁড় করিয়ে ব্যাংকের টাকা বহন করা গাড়িটির গতিরোধ করা হয়। মাইক্রোবাস থেকে ১০ থেকে ১২ জন সশস্ত্র ডাকাত নেমে টাকা বহন করা গাড়ির দরজা ভেঙে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে সোয়া ১১ কোটি টাকা ভর্তি ট্রাংক ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন গণমাধ্যমকে জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে, এতে আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ, টাকা বহন ও এটিএম বুথে জমার দায়িত্ব নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের। আবার এই টাকা বিমার আওতায় রয়েছে। ফলে এ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সগীর আহমেদ বলেন, মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি বার্ষিক চুক্তিতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নির্ধারিত বুথে টাকা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বে আছে। তাদের হাত থেকেই টাকা ছিনতাই হয়।

এ বিষয়ে মানি প্লান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, আমাদের কোম্পানি প্রতিদিনই এটিএম বুথে টাকা লোড করে। গতকাল সকাল ৭টার দিকে সাভার ইপিজেডে যাচ্ছিল তারা। উত্তরা দিয়াবাড়ী দিয়ে যাওয়ার সময় কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস আমাদের টাকার গাড়ির সামনে এসে পথ আটকে দেয়।

এরপর ওই মাইক্রো থেকে চার থেকে পাঁচজন লোক বের হয়ে আমাদের ড্রাইভারসহ সিকিউরিটি গার্ডকে মারধর করে চাবি কেড়ে নেয় এবং গাড়ি থেকে লোকজনকে ফেলে দেয়। পরে তাদের একজন আমাদের গাড়িটা ড্রাইভ করে চলে যায়।

তিনি বলেন, আমাদের গাড়ি নিয়ে কিছু দূর গিয়ে তারা দেখে তখনও আমাদের একজন লোক গাড়িতে ছিল। এরপর গাড়ি থামিয়ে তাকে মারধর করে ফেলে দেয়। পরে চারটি (টাকার) ট্রাংক নিয়ে ‘ডাকাতরা’ তাদের গাড়িতে উঠে চলে যায়।

তুরাগ থানায় গিয়ে পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করলে তৎপরতা শুরু হয় বলে জানান যশোদা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদিন আমরা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বিভিন্ন বুথ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ওই টাকা আবার ছেঁড়া-ফাটা বাছাই করে ভালো টাকাগুলো লোড করি। এটাই আমাদের সার্ভিস।