বঙ্গবন্ধুর ডাকে অব্যাহত ছিল আন্দোলন

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চের ১১তম দিন আজ। ১৯৭১ সালে মার্চের অন্য দিনগুলোর মতো এ দিনটিও ছিল ঘটনাবহুল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অব্যাহত ছিল অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে শুরু করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যাবতীয় কার্যক্রম। যেসব যানবাহন চলার কথা, সেগুলো চলাচল করে; যেসব বেসরকারি অফিস খোলা রাখার কথা, সেগুলো খোলা রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়। স্বাধিকারের দাবিতে অটল সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে থাকেন। ঢাকাসহ নগরীগুলোয় চলতে থাকে লাগাতার মিছিল ও সমাবেশ। স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনকারীরা এ দিন আন্দোলনে নতুন এক চমক নিয়ে আসেন।

এ দিন নারায়ণগঞ্জের সিনেমা হলগুলোতে ছবি প্রদর্শনের আগে পাকিস্তানের জাতীয় সংগীতের পরিবর্তে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গান বাজানো হয়। এ দিন বরিশালের কারাগার থেকে পালিয়ে যায় ২৪ কয়েদি। এ সময় কয়েদি ও কারারক্ষীর মধ্যে সংঘর্ষ দুজনের মৃত্যু হয়। আহত হন ২৪ কারারক্ষী ও ২০ কয়েদি। এ দিন কুমিল্লা কারাগার ভেঙে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন কয়েদিরা। তবে তারা সফল হননি। এ ঘটনায় কারারক্ষীদের গুলিতে তিন কয়েদি মারা যান। আহত হন প্রায় ১০০ পুলিশ ও কয়েদি। দীর্ঘদিন অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য এ দিন তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জারিকৃত নির্দেশগুলোকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে। এদিন সিএসপি ও ইপিসিএস সমিতির পদস্থ বাঙালি সরকারি কর্মচারীরা অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে আওয়ামী লীগের তহবিলে একদিনের বেতন প্রদান করেন। এদিন পাকিস্তানের পিপলস পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর কাছে একটি তারবার্তা পাঠান। তাতে তিনি বলেন, ‘উদ্ভূত সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। আমরা আজ বিরাট সংকটের মুখোমুখি। দেশের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত। এ ব্যাপারে আমাদের উভয়ের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ধ্বংস এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই আমাদের করতে হবে। যে কোনো মূল্যে দেশকে রক্ষা করতেই হবে।’ ভুট্টোর এ উপলব্ধিতে জল ঢেলে দিয়ে করাচিতে গণঐক্য আন্দোলনের নেতা অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত পট পরিবর্তন হচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানই কার্যত এখন ঢাকার সরকার। এ দিন টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধুঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ৭ কোটি বাঙালির নেতা। সবাই নেতার নির্দেশ পালন করুন। এদিন জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত খেতাব বর্জন করেন।