ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএনপির মানববন্ধনে ফখরুল

ফের নীলনকশার নির্বাচন করতে চায় সরকার

১৮ মার্চ সব মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ
ফের নীলনকশার নির্বাচন করতে চায় সরকার

বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে সব জেলা ও মহানগরে একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট। এরই অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকায় যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে মানববন্ধন করে বিএনপি।

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকারের ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা থাকার খায়েশ জেগেছে। সেই নীলনকশা নিয়েই তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো একই কায়দায় ২০২৩ সালের নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু মানুষ এবার তা হতে দেবে না। উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে জনগণ এদের পরাজিত করবে। দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জানান তিনি।

এসময় যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আাগামী ১৮ মার্চ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে সারা দেশের সব মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নয়াপল্টনের এই কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে প্রধান মানববন্ধন হয় বাড্ডায় সুবাস্তু নজর ভ্যালির সামনে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক। ঢাকা সহ অন্যান্য সব এলাকার মানববন্ধনে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা নেতৃত্ব দেন।

এছাড়া বিএনপির মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনের এই কর্মসূচি পালন করেছে।

গণতন্ত্র মঞ্চ পল্টন মোড়ে, গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি আরামবাগে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগরে পানির ট্যাংকের কাছে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয় নগরে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং কারওয়ানবাজারের হাতিরঝিল মোড়ের রাস্তায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে এলডিপি। এসব মানববন্ধন থেকে ১৮ মার্চ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে সংশ্লিষ্টরা। নয়াপল্টনে বিএনপির মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে এ দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সংবিধানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান হয়েছিল, পরবর্তীকালে সংবিধানে জনগণের প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছিল, তাকে ভেঙেচুরে তারা এখন একদলীয় শাসনব্যবস্থা করার লক্ষ্যে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনের উদাহরণ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে কোনো ভোটার বা মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছে আগের রাত্রে। এখন আবার খায়েশ হয়েছে তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত থাকবে। সেই নীলনকশা নিয়ে তারা আবার ২০২৩ সালের নির্বাচন করতে চায় একই কায়দায়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে কথায় হবে না। এই আন্দোলনে মানুষকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণের উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে এদের পরাজিত করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী বলতে শুরু করেছেন যে বিএনপি ভয় পায়, বিএনপি নির্বাচন করবে। পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, বিএনপি এ সরকারের অধীন, হাসিনা সরকারের অধীন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীন কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এই আন্দোলনে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। এই ১০ দফার মধ্যে আমরা পরিষ্কার বলেছি যে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ আন্দোলনের প্রথম থেকেই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। এ জন্য আপনাদের (সরকারের) খুব গাত্রদাহ হচ্ছে। উসকানি দেয়ার চেষ্টা করছেন, বারবার উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন। জনগণ শুরু করেছে আন্দোলন, এ আন্দোলনে তারা জয়ী এবং তার পরেই ঘরে ফিরে যাবে। আমরা সংঘাতে যেতে চাই না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, আপনারা সেটা মেনে নিন, ১০ দফা মেনে নিন। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন, এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারে হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুতের অসম চুক্তির সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি। এই চুক্তি কোনোমতেই বাংলাদেশের পক্ষে যেতে পারে না। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। মানববন্ধনে বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলের মধ্য দিয়ে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত