ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আ.লীগের নির্বাচনি ইশতেহার

১৬ মার্চ আরো ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

১৬ মার্চ আরো ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

করোনা মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে দেশের অর্থনীতি সাবলীল গতিতে এগোনোর মুহূর্তেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। যার কঠিন প্রভাব পড়ে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর। তবে, অর্থনৈতিক মন্দাভাবকে পাশ কাটিয়ে সারাদেশে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ। আগামী ১৬ মার্চ আরো ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এরই মধ্যে প্রকল্পের দুই ধাপে একশ’ মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। ১৬ মার্চ তৃতীয় পর্যায়ে আরও ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হবে। বরাবরের মতো এবারও গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সারাদেশে মডেল মসজিদগুলো উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে সারাদেশে মোট ১৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন হবে।

জানা গেছে, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনযোগ্য ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ৫০টি মডেল মসজিদ হল- ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার সদর ও বোয়ালমারী, রাজবাড়ী জেলা সদর এবং পাংশা। রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর ও কালাই, নওগাঁ জেলা সদর, পতিœতলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট, পাবনা জেলার ফরিদপুর ও রাজশাহী জেলার চারঘাট, তানোর। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলা সদর, ফুলবাড়ী, লালমনিরহাট জেলা সদর, নীলফামারী জেলা সদর, পঞ্চগর জেলার তেঁতুলিয়া, বোদা, অটোয়ারী, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, দিনাজপুরের পার্বতীপুর। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া, নান্দাইল, নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা, কেন্দুয়া ও মদন উপজেলা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলা সদর, আগৈলঝাড়া। চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আখাউড়া, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড, লক্ষ্মীপুর সদর এবং রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা, সদর, দামুড়হুদা, জীবননগর, ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, খুলনা জেলার তেরখাদা, কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর, মিরপুর, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট, মোল্লাহাট এবং যশোর জেলার সদর উপজেলা। এসব এলাকার মডেল মসজিদ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চারতলা ও তিনতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ১৪টি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এগুলো হলো- মসজিদে হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণসহ পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা, নারী ও পুরুষের পৃথক অজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, প্রতিবন্ধী মুসল্লিদের টয়লেটসহ নামাজের পৃথক ব্যবস্থা, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র, ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামিক গবেষণা ও দ্বীনি দাওয়াত কার্যক্রম, পবিত্র কোরআন হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা ব্যবস্থা, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসন ও অতিথিশালা, মরদেহ গোসল ও কফিন বহনের ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা। এসব মসজিদে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ জন নামাজ আদায় করতে পারবেন। আর তিনতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদে একত্রে ৯০০ জনের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।

এই ক্যাটাগরি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অধীনে, ৬৪টি জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় লিফট সুবিধা এবং ফ্লোর স্পেস ২ হাজার ৩৬০.০৯ বর্গমিটার বিশিষ্ট প্রায় ৬৯টি চারতলা মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে বি ক্যাটাগরির অধীনে প্রতিটি ১ হাজার ৬৮০.১৪ বর্গ মিটার ফ্লোর স্পেসসহ ৪৭৫টি মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে সি ক্যাটাগরির অধীনে ১৬টি মসজিদের প্রতিটি ২ হাজার ৫২.১২ বর্গমিটার মেঝে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটি করে মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর জেলা পর্যায়ে চারতলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এসব মসজিদ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর আগে, প্রথম ধাপে ২০২১ সালের ১০ জুন ৫০টি মডেল মসজিদ এবং দ্বিতীয় ধাপে ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এসব মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।

৫৬৪টি মডেল মসজিদের প্রকল্প পরিচালক ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নজিবুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আগামী অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) ২০০টি মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের মধ্যে যেসব প্রকল্প রয়েছে, এর মধ্যে মডেল মসজিদ প্রকল্প অন্যতম। সেজন্য এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন আইন, ১৯৭৫ প্রণয়ন করেছিলেন। তার চিন্তাধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সারাদেশে মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের মধ্যদিয়ে একটি শক্তিশালী ইসলামী সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই প্রকল্পে নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত