ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সিদ্দিকবাজারের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ২৪

‘তিতাস গ্যাসের পরিত্যক্ত লাইন থেকে বিস্ফোরণ’

‘তিতাস গ্যাসের পরিত্যক্ত লাইন থেকে বিস্ফোরণ’

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা তিতাস গ্যাসের পরিত্যক্ত লাইনের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাস জমে হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। অপরদিকে বিস্ফোরণের পর ভবনটির মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া দুটি নকশার অনুলিপি পর্যালোচনা এবং গ্রেপ্তার হওয়া ভবনের দুই মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানতে পেরেছে- সিদ্দিকবাজারের সাততলা ভবনটির অনুমোদন ছিল পাঁচতলা পর্যন্ত। নিচতলার সামনের দিকের তিনটি দোকান ছাড়া ভবনের বাকি অংশ আবাসিক ব্যবহারের জন্য রাজউক অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু ভবনটির বেজমেন্ট থেকে তিনতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। চার থেকে সাততলা ছিল আবাসিক। পরে ১০ আরো কয়েকটি তলা করার জন্য আরেকটি নকশা তৈরি করেছিলেন মালিকেরা, কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত দাখিল করেননি। এদিকে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আজম মৃধা। গতকাল শনিবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডাক্তার এসএম আইউব হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দগ্ধ মির্জা আজম চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে মারা যান। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে।

আজম সিদ্দিকবাজারে ওই ভবনটিতে বাংলাদেশ স্যানিটারি নামের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ঘটনার সময় দোকানেই ছিলেন তিনি। বিস্ফোরণের পর দগ্ধ হয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ছিলেন। মারা যাওয়া আজমের চাচা আবুল বাসার বলেন, আজম পটুয়াখালী জেলার বগা এলাকার শাজাহান মিয়ার ছেলে। স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে তিনি মগবাজারের মধুবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক এসএম আইয়ুব হোসেন বলেন, আজম মৃধার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আজম মৃধা ছিলেন বড়। লাভা নামের প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৬ বছর বয়সী এক মেয়ে আছে তার। স্ত্রীর নাম রিয়া আক্তার। বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে আজম মৃধার মরদেহ নিয়ে গেছে তার বাবা শাজাহান মৃধা।

বিস্ফোরণে আহত ১২ জন এই ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে যান। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেলেন। আজম মৃধার আগে গত বুধবার রাতে মো. মুসা (৪৫) নামের একজন মারা যান। লাইফ সাপোর্টে থাকা ইয়াসিন আলী (২৬) নামের আরও একজনের মৃত্যু হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে। এখন বার্ন ইনস্টিটিউটে দুজন আইসিইউতে আছেন। তাদের মধ্যে একজন লাইফ সাপোর্টে। মো. মোস্তফা (৫০) ও কামাল শেখ (৪০) নামের দুজন চিকিৎসা নিয়ে এখান থেকে চলে যান। বাকি পাঁচজনের মধ্যে কারও কারও শ্বাসনালিও পুড়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত রয়েছে। কাচসহ ছিটকে আসা বিভিন্ন পদার্থে শরীরও কেটেছে। হাসপাতাল সূত্র বলছে, সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখনো ২১ জন চিকিৎসাধীন।

গত ৭ মার্চ বিকাল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানের বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটির বেসমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা অনেকটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। দুই পাশে লাগোয়া দুটি ভবনের কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। বিস্ফোরণের দিনই ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। পরে বাকিদের মধ্যে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার হয় ঘেটনাস্থল থেকে। অন্য চারজন মারা যান হাসপাতালে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবনটির মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং ভবনের একটি দোকানের মালিক আবদুল মোতালিব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা এখন পুলিশের রিমান্ডে আছেন।ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে বংশাল থানায় মামলা করে। এর আগে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ।

সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ঘটনাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ছায়া তদন্ত করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত