ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আন্দোলনের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতায় জোর বিএনপির

আন্দোলনের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতায় জোর বিএনপির

একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এই আন্দোলনকে কঠোর বা চূড়ান্ত রূপ দেয়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়াচ্ছে দলটি। কারণ আন্দোলনের মাঠ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দাবি আদায়ে বিদেশি বন্ধু মহলের সহায়তাও প্রয়োজন বলে মনে করে বিএনপির হাইকমান্ড।

এরই অংশ হিসেবে গতকাল রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। গুলশানে এবিসি হাউজে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার কথা ইইউ রাষ্ট্রদূতদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের পরিস্থিতি, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ‘নেতিবাচক কর্মকান্ড’ ও দলের অবস্থান তুলে ধরতে দেশে-বিদেশে নানাভাবে বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অবশ্য নির্বাচনকে সামনে রেখে বরাবরের মতো ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদেরও তৎপরতা বেড়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ঢাকায় কূটনীতিকপাড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক দেশের কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে বৈঠকের খবর পাওয়া যায়। সেখানেও বিএনপির কয়েকজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে বিভিন্ন রকম আলোচনা হয়েছে। বিএনপির মিডিয়া সেল সূত্র জানায়, গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে গুলশানে এবিসি হাউজে ইইউ রাষ্ট্রদূততের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু ছাড়াও ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, নেদারল্যান্ড, স্পেন, ডেনমার্ক, নরওয়ের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতেরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, ইইউ রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থা ও নির্বাচন সম্পর্কে দেশের মানুষ যেভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, সারা বিশ্বে যারা গণতান্ত্রিক দেশ আছে, সবাই নিবিড়ভাবে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ করছে। এর অংশ হিসেবে তারা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) দেখছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবস্থা কী? মানবাধিকার, আইনের শাসন, বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেমন। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা কাজ করছে দেশের ভেতরে, দেশের বাইরে, সেটার ওপর তো স্বাভাবিকভাবে একটা দৃষ্টি তাদের আছে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আজকে এই আলাপটা হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে কী আলাপ হয়েছে জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে, তাহলে বাংলাদেশ যে সংকটের দিকে যাবে, এই শঙ্কা দেশের ভেতরে যেভাবে কাজ করছে, দেশের বাইরেও কাজ করছে। এই শঙ্কা থেকে তারা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) জানতে চাইছে যে, কীভাবে আগামী নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে, কীভাবে এটাকে নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক করা যায়।

সকলের উদ্দেশ্য একটাই, বাংলাদেশের মানুষের যে চিন্তা যে এটাকে নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ হবে, নির্বাচিত সরকার হবে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনাটা হচ্ছে।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ইউরোপীয় কূটনীবিদদের সেই অবস্থানও জানানোর কথা বলেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, অবশ্যই এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না- সেটা আমরা খোলাখুলিভাবে বলেছি। বিশ্বে যারা বাংলাদেশের ওপর নিবিড়ভাবে কাজ করছে, পর্যবেক্ষণ করছে, সবার কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বর্তমান সরকারের অধীনে বাংলাদেশের জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি, তাদের সরকার, তাদের সংসদ নির্বাচিত করতে পারবে না। এই বিষয়টা প্রতিনিয়ত যেভাবে বলা হচ্ছে, তাদের (কূটনীতিক) কাছে জানা আছে।বিষয়গুলো নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী মনে করছে জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, তারা কী মনে করেন সেটা তারাই বলতে পারবেন। আমি তো বলতে পারব না। আরেক প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু জানান, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। দলীয় সূত্রমতে, বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার আর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে আছে বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে দলটি যুগপৎ আন্দোলনও শুরু করেছে। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে পর্যায়ক্রমে দাবি আদায়ে এক দফার কঠোর আন্দোলনেরও টার্গেট রয়েছে দলটির। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে এই দাবির পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত রাখছে বিএনপি। যদিও এসব কোন তৎপরতাতেই আমলে নিচ্ছে না সরকার মহল। এতে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমরা তথা জনগণের চাওয়া একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেটা নিরপেক্ষ বা জাতীয় সরকারের অধীনে হতে পারে। সরকার সবার সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিলে এবং ইচ্ছা করলে সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু তারা তা না করে পেশি শক্তির ওপর নির্ভর করছে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের ছিল। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিএনপি এই সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে বর্তমান অস্থিরতা তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত