ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সীতাকুণ্ডে তুলার গোডাউন ভস্ম

পানি সংকটে প্রলম্বিত হয় আগুন নিয়ন্ত্রণ

নিয়ম মেনে নির্মাণ হয়নি গোডাউন
পানি সংকটে প্রলম্বিত হয় আগুন নিয়ন্ত্রণ

পানির চরম সঙ্কটে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের তুলার গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা প্রলম্বিত হয়েছে। এতে শত কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে। আগুন নেভাতে পানিশূন্য হয়ে গেছে গোডাউন এলাকার আশপাশের পুকুর জলাশয়। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা গতকাল সকাল ৭টায় আগুন নির্বাপণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে গতকাল বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে আগুন জ্বলছিল। ঘটনা তদন্তে গত শনিবার রাতে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। তদন্ত টিমের প্রধান করা হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক বদিউল আলমকে। আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এসএল গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনিটেক্স কারখানার এই তুলার গোডাউন। আশঙ্কা করা হচ্ছে তুলার গোডাউনে রক্ষিত ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন তুলার বড় অংশ পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনীর আরো কয়েকটি ইউনিটসহ আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে মোট ২৩টি ইউনিট।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবারই আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব ছিল। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর মতো পর্যাপ্ত পানি পায়নি। এতে গোডাউনে রক্ষিত ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন তুলার বড় অংশ পুড়ে গেছে। পানি অনেক দূর থেকে আনতে হয়েছে। আশপাশে পর্যাপ্ত বড় জলাশয় কিংবা পুকুরও ছিল না। তাই পানি আনতে শুধু ফায়ার সার্ভিস নয়, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদেরও বেশ বেগ পেতে হয়।

এদিকে গঠিত তদন্ত কমিটিতে পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি হিসেবে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, ডিআইজি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সীতাকুণ্ড থানার ওসি, বিটিএমসির প্রতিনিধি, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এবং বিটিএমইএর প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আগুন নেভানোর কাজে বিভিন্ন বাহিনীর কর্মীরা অংশ নেন। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও বিজিবির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গতকাল সকাল ৭টায় আগুন নিভেছে। এরপরও কিছু জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। তবে তা সীমিত পরিসরে।

তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রায় ১০ একর আয়তনের এ গুদামের চারিদিকের দেয়াল বুলডোজার দিয়ে ভেঙে চতুর্দিক থেকে ফায়ার টেন্ডার (পানি ছড়ানোর মেশিন) প্রবেশ করানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর চার, নৌবাহিনীর চার, বিমান বাহিনীর দুই এবং বিজিবির চারটি ফায়ার ফাইটিং ইউনিটসহ সর্বমোট ২৩টি ইউনিট কাজ করছে।

আগুন নেভাতে সময়ক্ষেপণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে অগ্নি নির্বাপণে পানি ছাড়া অন্য কোনো রাসায়নিক বা পাউডার ব্যবহার করার উপায় ছিল না। নেভানোর মতো বেশি পরিমাণ পানির উৎস আশপাশে পাওয়া যায়নি। এজন্য অনেক দূর থেকে ক্যান্টনমেন্ট, ভাটিয়ারি, বাড়বকুণ্ডসহ বিভিন্ন সোর্স থেকে পানির যোগান দেয়া হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশের খাল, পুকুর ও রিজার্ভারের পানি প্রায় শেষ হয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, তুলার গুদামের আগুন নিভে গেছে। তবে এখনো থেমে থেমে জ্বলছে। তাই সীমিত পরিসরে নেভানোর কাজ অব্যাহত আছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট কুমিরা এলাকার ওই তুলার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে এসএল গ্রুপের গুদামটিতে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওয়েল্ডিংয়ের স্ফুলিঙ্গ থেকেই আগুন লেগেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের পর বলা যাবে।

এদিকে শনিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। এ সময় তিনি সবাইকে নিরাপদে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানান।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তুলা যেখানে গুদামজাত করা হয়েছিল, তার পাশে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওয়েল্ডিংয়ের আগুনের স্ফুলিঙ্গ উড়ে এসে তুলায় আগুন ধরে যায়। গোডাউনের মালিক এসএল স্টিল করপোরেশনের লোকমান হোসেন। ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেড নামে একটি সুতা তৈরির কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি এটি ভাড়া দিয়েছেন। তুলাগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা আরো জানান, আগুন লাগা তুলার গুদামের দক্ষিণ পাশে ন্যামসন কনটেইনার ডিপো নামে একটি কনটেইনার ডিপোর অবস্থান। সৌভাগ্যবশত ওই ডিপো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। খালি কনটেইনার দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে ডিপোটি। ফলে আগুন থেকে ডিপোটি রক্ষা পায়। এই কনটেইনার ডিপোতে আগুন ছড়িয়ে পড়লে বিপর্যয় সৃষ্টি হতো।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শনিবার সকালে তুলার গুদামে মেরামতের কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে কাটিংয়ের কাজ করার সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ তুলার উপরে পড়ে। এতে গুদামে আগুন লেগে যায়। মুহূর্তের মধ্যে তা পুরো গুদামে ছড়িয়ে পড়ে।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, গোডাউন তৈরি ও পণ্য মজুত রাখার ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি দেখা গেছে। তুলার গোডাউন যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে করা হয়নি। টিনের চাল থেকে রোদের উত্তাপে তুলাতে আগুন ধরার সম্ভাবনা থাকে। আর এই গুদাম নির্মাণে কোনো নিয়ম মানেনি মালিকপক্ষ। গ্যাস কাটার দিয়ে স্ক্র্যাপ লোহা কাটা হচ্ছিল। ওই গ্যাস থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত