ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত বেড়ে ২০০

নেপথ্যে মাদক কারবার নিয়ে চাঁদাবাজি ও স্থানীয় প্রভাব

নেপথ্যে মাদক কারবার নিয়ে চাঁদাবাজি ও স্থানীয় প্রভাব

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার দ্বিতীয় দিনেও গতকাল উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা জড় হতে শুরু করে চারুকলা বিভাগের সামনে। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী রাবি ভিসির বাসভবন ঘেরাও করে। এসময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে তাদের উপর হামলা চড়াও হয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভিসি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে এলে তাকে শাবাশ বাংলা মাঠে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিসিকে সাবাস বাংলা মাঠে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ভিসিকে রাবির শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনেও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। দুপুর ১টার দিকে রাবির বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় কোনো যানবাহন এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দেয়া হয়নি। বিশেষ করে বাহিরাগত কাউকে দেখলে তারা মারমুখী হয়ে তেড়ে যায়। বলা যায় পুরো রাবি ক্যাম্পাস ও রাবি এলাকার রাস্তা দখল নিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পারিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় রাবি এলাকায় শনিবার রাত ১০টার দিকে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এর আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ডাকা হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীর সাথে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের আঘাতে এবং শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ২০০ জন আহত হয়েছে।

অভিযোগ করা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবন ঘেরাও করার সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা চ্যানেল ২৪ এর রিপোর্টার আবরার শাঈর ও ক্যামেরা পারসনস জুয়েলের উপর হামলা চালায়। এতে ক্যামেরা ভেঙে যায়। এছাড়াও কালেরকণ্ঠ পত্রিকার ফটোসাংবাদিক সালাহ উদ্দিনের উপর হামলা করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তার ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়।

শিক্ষার্থীরা গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন দাবিতে ভিসির বাস ভবন ঘেরাও করে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী স্থানীয় ও পুলিশ সদস্যদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিক করা, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। তবে রাজশাহী নগরীর মতিয়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

রাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে এই ধরনের সহিংস ঘটনা নতুন নয়। অতীতেও নিরীহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বহিরাগত ও মাদক কারবারীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে। ক্যাম্পাসের বাসিন্দাদের অভিমত রাবি ক্যাম্পাস বহিরাগতদের কবল থেকে রক্ষা না করলে এবং মাদক কারবার নির্মূল করা না গেলে ক্যাম্পাস কখনোই পুরোপুরি শান্ত হবে না। ফিরে আসবে না শিক্ষার পরিবেশ। তারা বলছেন, উদারহণ হিসেবে বলা যেতে পারে ২০২২ সালের ১৯ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামসুলের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আবাসিক হলে ছাত্ররূপী একদল উচ্ছৃখল যুবকের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। চাঁদা না দেয়ার কারণে তিন ঘণ্টা ধরে তার ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। কেড়ে নেয়া হয় তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা। একই বছরের ২৮ মার্চ খাবারের মূল্য নিয়ে সংঘর্ষ বাধে স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের কিছু দোকানে এক প্লেট ভাতের দাম রাখা হচ্ছে ১০ টাকা, অন্য দোকানে ১৫ টাকা। একটা সিঙ্গারা, চপ ও পুরির দাম কিছু দোকানে ৫ টাকা আবার কিছু দোকানে ৬-৮ টাকা। আগে এক প্লেট ‘সিস্টেম’ ছিল ২৫ টাকা, যা এখন ৩৫ টাকা। বিনোদপুর বাজারে এক প্লেট খিচুড়ির দাম ১৫ টাকা হলেও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ২০ টাকা এবং পরিমাণেও কম। ফলে দাম নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এতে বিভিন্ন সময়ে দোকানদারদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বরও এমন ঘটনা ঘটে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

বিনোদপুর বাজার থেকে, মিজানের মোড়, ডাঁশমারী, জাহাজঘাট, ফুলতলা, পাক ইসলামপুর, কাটাখালী এলাকাগুলো পদ্মারচর ঘেঁষা হওয়ায় মাদকের রমরমা কারবার চলে এসব এলাকায়। এই মাদক কারবার নিয়ে নানা অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেছে অতীতে। বিভিন্ন সময় নিরীহ ছাত্ররা শিকার হয়েছে মাদক কারবার নিয়ে সহিংস ঘটনায়। মাদক কারবার নিয়ে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই চক্র। মাদক ও চাদাবাজির ঘটনায় স্থানীয়দের প্রভাব ও আধিপত্য প্রকাশে চলে আসায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বাড়ছে। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত এবং তুচ্ছ বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনা অতীতেও কম ঘটেনি। দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার মাদকের কারবার বন্ধ হচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধ না করলে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত