ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশের সিরিজ জয়

বাংলাদেশের সিরিজ জয়

ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। মিরপুরের চিরায়ত মন্থর ও টার্নিং উইকেটে জ্বলে উঠলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, একাদশে ফিরে করলেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। তার ঝলকে ইংল্যান্ডকে মাত্র ১১৭ রানে আটকে রাখল বাংলাদেশ। পরে দলের চাপে ব্যাট করতে নেমেও দেখালেন মুন্সিয়ানা। প্রথম ম্যাচে দলের নায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (৪৬*) ধরলেন হাল, কঠিন হয়ে যাওয়া পরিস্থিতিতে শেষটাও টানলেন। ৪ উইকেটের দারুণ জয়ে আনন্দে ভাসল বাংলাদেশ। ৮ বল আগে খেলা শেষ করতে পারে স্বাগতিকরা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নেমেই পেল দারুণ জয়। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত করে ফেলল এক ম্যাচ আগেই। ১১৮ রানের লক্ষ্যে পাওয়ারপ্লেতে দুই ওপেনারকে বাংলাদেশ হারিয়েছিল পেসারদের কাছে। স্যাম কারানের আঘাতে ৯ রানে লিটন দাস ফেরার পর সেই ৯ রানেই জফরা আর্চারের বাউন্সারে ফিরেছিলেন রনি তালুকদার। তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে এরপর বিপদ সামলাতে ঝুঁকিমুক্ত ইনিংস খেলার জন্য শান্ত ছিলেন বদ্ধপরিকর। দশম ওভারের পর অবশ্য গিয়ার পাল্টানোর চেষ্টা করেন হৃদয়। এর আগে দারুণ এক ছয় মারলেও রেহান আহমেদ আক্রমণে আসলে তার নিরীহ এক লেগ ব্রেকে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে তিনি ফেরেন ১৭ রানে। হৃদয় ফেরার পর বাংলাদেশ ও শান্তকে অনেকটাই নির্ভার করেছিলেন মিরাজ। আদিল রশিদের বলে কাভারের ওপর দিয়ে যেই ইনসাইড আউট শটে বল মাঠছাড়া করলেন সেটা তো রীতিমতো চোখে লেগে থাকার মতো। তবে আর্চারের বাউন্সারে মিরাজকেও বিদায় নিতে হয় ১৬ বলে ২০ রানের ইনিংস শেষে। মিরাজ ফেরার পরের দুই ওভারেই বাংলাদেশ হারায় দুই উইকেট; জাগে শঙ্কা। রানের খাতা খোলার আগেই মঈন আলীকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে সাকিব ফেরার পর আর্চারের বলে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন আফিফ হোসেন। চেপে বসার সুযোগ পেয়ে ইংল্যান্ড যখন ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছিল তখনও মাথা ঠাণ্ডা রেখেছিলেন শান্ত। তবে নেমেই তুলির শেষ আঁচড়টা সুনিপুণভাবে টানলেন তাসকিন। ১৯তম ওভারে প্রথম আক্রমণে আসা ক্রিস জর্ডানকে তানা দুই বলে কাভারের ওপর দিয়ে চার মেরে বাংলাদশকে তিনি পৌঁছে দেন ঐতিহাসিক এক জয়ের বন্দরে; অন্য প্রান্তে ৪৭ বলে ৪৬* রানে অপরাজিত থেকে শান্ত যেই জয়ের অন্যতম কান্ডারিও বটে।

এর আগে ইংল্যান্ডের হয়ে জস বাটলারের বদলে ওপেন করতে নেমেছিলেন তাসকিন আহমেদ। প্রায় সব কিছুতেই ব্যাট চালাতে থাকার পর তাসকিনের শিকার হয়ে তিনি ফিরেছিলেন তৃতীয় ওভারে। তাতে অবিচল থেকে ফিল সল্ট ও তিনে নামা মঈন ইংল্যান্ডকে এনে দিয়েছিলেন দারুণ শুরু; পাওয়ারপ্লেতেই তারা তুলে ফেলেছিলেন ৫০ রান। তবে পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই সাকিব আক্রমণে এলে সেখান ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ১৯ বলে ২৫ রান শেষে সল্ট ফিরলে তাসকিন দেখান তার অধিনায়কত্বের জাদু। ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটারকেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আগানোর সুযোগ দেননি; বল করিয়েছেন ৮ জনকে দিয়ে। সময়োপযোগী পরিবর্তন আনায় বোলাররা সাকিবকে দিয়েছেন যথার্থ প্রতিদান। পরের ওভারেই আক্রমণে এসে সবচেয়ে বড় উইকেটটাই বোধহয় নিলেন আগের দিন দুর্দান্ত বল করা হাসান মাহমুদ। বাটলারকে মাত্র ৪ রানে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে বাংলাদেশকেও যেন পথ দেখান হাসান।

সেই পথ অনুসরণ করে ইংল্যান্ডকে স্পিন বিষে নীল করেন মিরাজ। তাকে সুইপ করতে গিয়ে পরের ওভারে ১৫ রানে মঈন ফিরলে বেন ডাকেট ও স্যাম কারান বিপদ সামলানোর চেষ্টা করেন। তবে ১৫তম ওভারে এসে আবারও হন্তারকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হলেন মিরাজ। বেরিয়ে আসা কারানকে স্টাম্পিংয়ের শিকার করার এক বল পরে প্রায় একই ভঙ্গিতে ক্রিস ওকসকেও ফেরান তিনি। নিজের স্পেলের শেষ ওভারে এরপর জর্ডানকেও ফিরিয়ে নিজের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা স্পেলের রেকর্ড গড়েন তিনি। তার পরিক্রমায় শেষ ওভারে দুটো রান আউটের সাথে ২৮ রানে থাকা ডাকেটের স্টাম্প উপড়ে দারুণ এক ওভারে শেষটা টানেন মোস্তাফিজুর রহমান। ইংল্যান্ডের সেই সংগ্রহ দিন শেষে স্নায়ু ধরে রেখে টপকে ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায়ই রচনা করল বাংলাদেশ দল।

প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ম্যাচ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানায়। অভিনন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টি-টোয়েন্টি বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে জয়ী দলের খেলোয়াড়, কোচ ও ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান।

ইংল্যান্ড : ১১৭/১০, ২০ ওভার

বাংলাদেশ : ১২০/৬, ১৮.৫ ওভার

ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত