জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে কূটনীতিকদের

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অগ্রহ বাড়ছে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের। এর আগে গত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিদেশিদের বেশি অগ্রহ না থাকলেও এবার ভোটের অনেক আগে থেকেই তাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কূটনৈতিকরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে পরামর্শও দিচ্ছেন।

সূত্র জানায়, এবার সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেশি তৎপর কূটনীতিকরা। তাদের মধ্যে অনেকে রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নিতে বলেছে ইসিকে। তবে ইসি সাফ জানিয়েছে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো উদ্যোগ নেবে না সাংবিধাানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি কর্মকর্তরা জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে ইসি। আইন অনুযায়ী সময় মতো ভোট করতে চায় তারা। কোনো দলকে নির্বাচনে আনার জন্য নতুন করে কোনো উদ্যোগ নেবে না কমিশন।

ইসিতে গিয়ে ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশনার জেরেমি ব্রু জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায়। তিনি বলেন, সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে ইসির সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাই।

এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হেড অব ডেলিগেশন চার্লস হোয়াইটলি ইসিতে গিয়ে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় ইইউ। এতে সায় দিয়েছে ইসি। তিনি বলেন, আমরা মনেকরি নির্বাচন কমিশনের কাজ এবং অগ্রগতিতে প্রযুক্তিগত এবং পরিচালনা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আরো আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে। সবাই চায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের দরজা সব সময় খোলা, কেউ এলে সহযোগিতা করা হবে। ভোটে অংশ নিতে উদাত্ত আহ্বান থাকবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো উদ্যোগ নেবে না ইসি। সংকট নিরসন করতে হবে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে।

কূটনৈতিকদের বিষয়ে সিইসি বলেন, ওনারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। আমরা প্রস্তুতির কথা জানিয়েছি। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরাও চাচ্ছি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হোক।

এদিকে গতকাল সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সরকারকে অনুধাবন করতে হবে যে, ভোটের সময় ইন্টারনেটের গতি কমালে নির্বাচন বিতর্কিত হবে। এটা সরকারের অনুধাবন করা উচিত। সিইসি বলেন, নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সাদরে গ্রহণ করা হয়। আরএফইডির প্রস্তাব কমিশনে আলোচনা করে বিবেচনা করা হবে। সংসদ নির্বাচনের দিন কড়াকড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা যদি তথ্য সংগ্রহ করতে আগ্রহী হন, তাহলে সেই সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন চলাকালে তথ্য সংগ্রহ করার সময় সাংবাদিকদের বাধা দেয়া হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। আমরা গণমাধ্যমের বিপক্ষে না। তবে গণতন্ত্রের স্বার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা বিষয়টি বিবেচনায় রাখব।

অন্য এক প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, প্রিসাইডিং অফিসারের কর্তৃত্ব খর্ব করা ঠিক হবে না। তিনি ভোটের দিন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। তবে তিনি কোনো অপকর্ম করলে আইনে বিধান আছে। এতে কোনো ঘাটতি থাকবে না।

সাংবাদিকদের পুলিশি বাধার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, পুলিশ ঢুকতে দিচ্ছে না এমন হলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমের মাধ্যমে যদি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আমাদের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগটা বেড়ে যাবে। গণমাধ্যমের বিপক্ষে কখনোই আমাদের অবস্থান নয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের স্বার্থে যদি গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সে বিষয়টা আমরা দেখব।

ভোট পর্যবেক্ষণে এবার ২১০টি দেশি সংস্থা আবেদন : আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এবার ২১০টি সংস্থা আবেদন করেছে ইসিতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগ্রহী স্থানীয় সংস্থাগুলো নিবন্ধন পেতে চায়। যাচাই-বাছাইয়ে যোগ্য বিবেচিত হলে নিবন্ধিত সংস্থাগুলো আগামী ৫ বছরের জন্য সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে।

ইসির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আশাদুল হক জানান, এবার ২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৯৯টি এবং নির্ধারিত সময়ের পর আরো ১১টি সংস্থার আবেদন জমা পড়েছে।

তিনি জানান, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে এসব আবেদনের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই হবে। এরপর প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। প্রাথমিক বাছাইয়ে যাদের আবেদন টিকবে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের দাবি-আপত্তি আছে কি না- জানতে ১৫ দিনের মধ্যে সময় দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। যদি কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে, তাহলে কমিশন উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ইসির জনসংযোগ সহকারী পরিচালক জানান, বিদ্যমান নিবন্ধিত সংস্থাগুলোর মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে ১১ জুলাই। সেক্ষেত্রে ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী জুনের মধ্যে চূড়ান্ত কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশা করা যায়।