কাতার সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

স্থিতিশীলতার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন

রমজানে ঘরে পণ্য মজুত করবেন না

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সাময়িক সমস্যা হলেও আমাদের জনগণই সেটা মোকাবিলা করবে। কারণ, এখন আর ভোট কারচুপির সুযোগ নেই। দেশে উন্নয়ন-অগ্রগতির স্থিতিশীলতা রাখতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ছবিসহ ভোটার তালিকা করে দিয়েছি। এনআইডি যুক্ত করা হয়েছে। ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। আমরা ইভিএমে ভোট করতে চেয়েছিলাম, অনেকে আপত্তি করেছেন। নির্বাচন কমিশন যতটা সম্ভব ইভিএম ব্যবহার করবে। ভোটাররা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট দেবেন।

সদ্য সমাপ্ত কাতার সফরের সারসংক্ষেপ নিয়ে গতকাল সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। যাকে খুশি ভোট দেবে। আমরাই দেশে ভাত ও ভোটের আন্দোলন করেছি। জনগণকে দেয়া কথা আমরা রেখেছি। করোনা মহামারি না এলে আমরা আরো এগিয়ে যেতাম। ইউক্রেন যুদ্ধ না থাকলেও আমরা আরও এগিয়ে যেতাম। তবে আমি হতাশ নই। আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এজেন্সি উন্মুখ হয়ে আছে। ৪০ জনের নামে (ওয়াশিংটন পোস্টের বিজ্ঞাপন) যেটা এসেছে, ওটার পেছনেও কিছু অ্যামভিশন আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। যাদের ইচ্ছা, তারা জনগণের কাছে যাবে। নির্বাচন যাতে অবাধ-সুষ্ঠু হয়, তার জন্য নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সংশোধনী বা সংস্কার আনা হয়েছে।

১৪ বছর আগের বাংলাদেশের অবস্থা চিন্তা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যে সন্ত্রাস, সংঘাত, মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, সেটি যদি ভেবে দেখেন। ২০০৬ সালের পর ভোটারবিহীন ভোটার তালিকা, ২০০৭ এর নির্বাচন। এই ঘটনাগুলোর যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্যই আমরা এই সংস্কারগুলো করে দিয়েছি। এখন জনগণের ওপর নির্ভর করে যে, জনগণ কিভাবে চায়? নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের সব সময়ই আছে, জনগণ যেন ভোট দিতে পারে।

তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সমালোচনা শুনেই যাচ্ছি। আমরাই সুযোগ করে দিয়েছি। এর আগে তো এতো টেলিভিশন ছিল না, এতো রেডিও ছিল না। আমরাই সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ। দেশ বিদেশ থেকে বসে বসেও আমাদের সমালোচনা করে। আমাদের করে দেয়া জিনিস দিয়ে আমাদের সমালোচনা করে। আবার শুনতে হয়-কিছুই করি নাই।

সাম্প্রতিক উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরেছে। তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে গেছে। এই ভোটগুলো নিয়ে তো কেউ একটা কথাও বলতে পারেনি। সরকারে থাকলেও যে নির্বাচন সব সময় নির্বিঘ্ন হতে পারে, শান্তিপূর্ণ হতে পারে, অবাধ নিরপেক্ষ হতে পারে, সেটা তো আমরা প্রমাণ করেছি। আর কী প্রমাণ করতে হবে- সেটাই আমার প্রশ্ন।

দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে যে উন্নয়ন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। অনেক সময় সমালোচনাও শুনতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বিদেশে বসেও অনেকে আমাদের সমালোচনা করে। তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে সেই সুযোগ হয়েছে। আমরাই সেটা করে দিয়েছি। যে যাই বলুক, আত্মবিশ্বাস ও কর্তব্যবোধ থেকেই আমরা উন্নয়ন করে যাব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেতে অনেক দেশ দ্বিধায় থাকে। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলা করেও আমরা সে সুযোগটা নিয়েছি। সাময়িক সমস্যা হলেও আমাদের জনগণই সেটা মোকাবিলা করবে। রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। ফলে তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্বও আছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করতে যাইনি, আমরা তাদের বলছি তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত নিতে। শুরুতে আমরা এককভাবে রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণ দিয়েছি। আমরা চাই, রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যাক, সেখানে গেলে তাদের জীবন-জীবিকার সুযোগ হবে। রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বোঝা। কিন্তু আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন আমাদের দেশের এক কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, রমজান সামনে এলেই অনেকের একটা প্রবণতা থাকে, জিনিসের দাম বেড়ে যাবে, আমরা অনেক কিনে ঘরে মজুত করি। দেখা গেল যে এত নুন কিনে মজুত করে ফেলছে যে তা গলে পানি হয়ে গেল। বা এত পিঁয়াজ কিনে রেখে দিল যে পচে গেল। এটা যেন কেউ না করে। আমি বিশেষ করে বলব, কেউ এভাবে মজুত করতে যাবেন না, যখন যেটুকু দরকার, সেটা বাজার থেকে নেবেন। আর নিজেদের ঘরে উৎপাদন করেন। যে যা পারেন, উৎপাদন করেন, আমাদের তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সাথে কিছু আছে, মজুতকারী, তারা মজুত করে রাখার চেষ্টা করে। আর আমাদের কিছু কিছু বিরোধী দল তো আছেই, সব জয়গায় ঝামেলা পাকানোর জন্য একটা চেষ্টা। কথায় কথায় কোনো একটা কথা ছড়াল, মিথ্যা একটা ধুঁয়া তুলল।

সবাইকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে চালের অভাব হবে না। দেশে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমাদের মজুত আছে। এক কোটি পরিবারকে ফেয়ার প্রাইস কার্ডে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে ডাল, তেল, চিনি এগুলো তারা কিনতে পারছে। এখন ছোলাও তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আর তার থেকে আরেকটু কম আয়ের যারা, প্রথমে ৫০ লাখ ধরেছিলাম, প্রয়োজনে ১ কোটি লোক যদি পাওয়া যায়, তাদেরও আমরা ওই কার্ডের মাধ্যমে এই পণ্যগুলো, মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে কিনতে পারবে। আর যারা একেবারেই কর্মক্ষম না, মানে কাজ করতে পারনে না, আমরা তো ভিজিডি ভিজিএফের মাধ্যমে মাসে ৩০ কেজি চাল দিয়ে দিচ্ছি। এভাবে কোনো স্তরের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি।