নির্বাচনি বছর

বিএনপির আন্দোলনের গতি দেখে কৌশল পাল্টাবে আওয়ামী লীগ

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন 

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য এক দফা কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ভোটের লড়াইয়ে আগেই আন্দোলনের মাঠে সরকারকে পরাজিত করতে চাচ্ছে রাজপথের বিরোধীরা। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে বিএনপির জোট শরিকরা সরকার পতনের জন্য একদফা কর্মসূচি ঘোষণার জোর দাবি জানিয়ে আসছে। এদিকে সতর্ক অবস্থান আর শান্তির সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখছে আওয়ামী লীগ। আন্দোলন থেকে নাশকতা হলেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করার কথা বলছেন ক্ষমতাসীনরা।

বিএনপি ও দলটির মিত্ররা সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে গেলে নয়া কৌশলে তা মোকাবিলা করার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। তবে ঠিক কোনো কৌশলে বিএনপির একদফা আন্দোলন মোকাবিলা করা হবে তা এখনই জনসম্মুখে প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না দলটির নেতারা। বিএনপির আন্দোলনের গতিবিধি দেখেই নয়া কৌশল প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সরকার পতন আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা কঠোর হস্তে মোকাবিলা করা হবে। যে কোনো আন্দোলন সফল করতে জনগণের সম্পৃক্ততা লাগে। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা নেই। বিএনপির ডাকে জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনের পক্ষে থাকায় বিএনপির ডাকে জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। বিএনপি শুধু ক্ষমতার জন্য আন্দোলন করছে। জনগণের কল্যাণে অতীতে তারা কিছু করেনি, এখনো কিছু করছে না, ভবিষ্যতেও করবে না। নিজ দলে নেতাকর্মীদের নিয়েই সভা-সমাবেশ এবং সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপির সরকার পতনের একদফা আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের অবশ্যই কৌশল রয়েছে। তবে সে কৌশল জানতে আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। এখনই তা বলে দেয়া ঠিক হবে না। তবে এটা বলতে পারি, বিএনপির অপরাজনীতি প্রতিহত করার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। সরকার পতনের নামে ২০১৩-১৪ সালের মতো জ্বালাও-পোড়াও করে আর পার পাবে না তারা। দেশ এখন সেই অবস্থায় নেই।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপির রাজনীতি ও কর্মসূচি নিয়ে আমরা খুব মাথা ঘামাই না। বিএনপি তো অনেক কর্মসূচি; অনেক দফা দেয়। বিভিন্ন সময় তারা সরকার পতনের আন্দোলন করে। তারা ইতিপূর্বে দিন-তারিখ নির্ধারণ করে ঘোষণা দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন করেছে। বিএনপির নেতারা বলেছিলেন, দেশ পরিচালনা করবে কারাবন্দি খালেদা জিয়া, দেশের বাইরে পলাতক তারেক রহমান দেশে আসবে। তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। আসলে অর্বাচীনের মতো এ ধরনের অনেক কথাই তারা বলে; তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। আন্দোলন সংগ্রামের সফলতার কোনো ইতিহাস বিএনপির নেই। বিএনপির কর্মীরা তাদের নেতাদের বিশ্বাস করে না। নেতাদের প্রতি বিএনপির কর্মীদের কোনো আস্থা নেই। তাদের নেতৃত্বের সততা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নেতৃত্বের পরীক্ষায় বিএনপির নেতারা ব্যর্থ হয়েছে। সেই দলের নেতারা এক দফা, দুই দফা, দশ দফা এবং ২৭ দফা পর্যন্ত দিয়েছে। তাদের দফা কখনো ২৭ পর্যন্ত উঠে আবার কখনো এক দফায় গিয়ে শেষ হয়ে যায়। বিএনপির দফাগুলো হচ্ছে কথার ফুলঝুরি। তাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের সমর্থন আছে বলে মনে হয় না। জনগণের সমর্থন না থাকায় বিএনপির আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে পারছে না। একটু আগালেই মুখ থুবড়ে পড়ে। সরকার পতনের আন্দোলনের নামে যদি তারা কোনো ধরনের সহিংসতায় জড়ায়, তাহলে তা প্রতিহত করা; প্রতিরোধ করা ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নৈতিক দায়িত্ব। দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই তাদের সহিংসতা প্রতিরোধ করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে বিএনপির যে কোনো অপকর্মসূচি মোকাবিলা করার জন্য সব সময় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ২০১৫ সালেও এক দফা আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া তথাকথিত অবরোধ ডেকেছিল। এক পর্যায়ে দেখা গেল কাজের বুয়াকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমে শূন্য হাতে বাসায় ফিরেছেন তিনি। বিএনপির এক দফা আন্দোলন আমরা ১০ ডিসেম্বরও দেখেছি। তারা বলেছিল ‘১০ ডিসেম্বরের পর আওয়ামী লীগকে ঢাকায় খুঁজে পাওয়া যাবে না’। আওয়ামী লীগ ঢাকায়ই রয়েছে। বিএনপি চলে গিয়েছিল গরুর খোয়ারে। বিএনপির এক দফা আন্দোলন তাদের পার্টি অফিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। জনগণ তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জনগণ কি কারণে বিএনপিকে সমর্থন দেবে? জনগণ তো বিএনপির আমলনামা জানে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তারেক রহমান ছায়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, খালেদা জিয়া নামে মাত্র প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে জঙ্গি-সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল বিএনপি।

আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল বলেন, বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগও মাঠে রয়েছে, আমরা তো মাঠে আছি। বিভিন্ন দিবস ভিত্তিক কর্মসূচি আমরা পালন করছি, পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন ও অর্জন জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরছি। বিগত দিনেও তারা সরকার পতনের আন্দোলনের কথা বলেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। বিএনপির প্রতি তাদের নেতাকর্মীদের চাপ রয়েছে তারা নির্বাচনমুখী হতে বাধ্য হবে। অতীতে তারা যেভাবে হিংসাত্মক রাজনীতির চর্চা করেছে, এখন আর সেটা করতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের হুঙ্কার শুনতে-শুনতে দেশবাসী এখন ক্লান্ত। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে দেশের জনগণ সম্পৃক্ত নয়। মানুষ তাদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদের নিয়ে আমরা ভাবছি না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ও জঙ্গিবাদের রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। আন্দোলনের নামে ২০১৩-১৪ সালে দেশব্যাপী ভয়ংকর জ্বালাও-পোড়াও করেছিল। সরকার পতনের আন্দোলনের নামে আবারো অরাজকতা সৃষ্টি করলে তাদের কোনো ছাড়তে দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপি নেতারা সকালে বলে এক কথা, বিকালে বলে আরেক কথা। তাদের কথা এবং কাজের সঙ্গে মিল নেই। ওরা প্রথমে শুরু করল এই সরকারকে টেনে হিঁচড়ে নামাবে। পালিয়ে যাওয়ার পথ পাবে না আওয়ামী লীগ। একেক সময় একেক কথা বলছে; সরকার পতনের আল্টিমেটাম অনেকদিন ধরেই তারা দিচ্ছে। বিএনপির মতো হাঁটুভাঙ্গা দল দিয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন করা সম্ভব নয়। বিএনপির জনসভায় যেসব লোক দেখা যায়, সেগুলো তাদের দলীয় লোক। বিদেশ থেকে আসা টাকা দিয়ে লোক সংগ্রহ করে মিছিল-মিটিং করে তারা। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন মানায় না। বিএনপি চায় দেশকে পিছিয়ে নিতে; মানুষ আর পেছনে ফিরে যেতে চায় না। দেশের মানুষ এখন আর বিএনপিকে নিয়ে ভাবে না। তারা আওয়ামী লীগ সরকারে উন্নয়ন ও অর্জনের পক্ষে রয়েছে।