হামলা মামলায় গ্রেপ্তার ১

ইবি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিষিদ্ধ ঘোষণা

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ইবি প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর নামে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এএইচএম আলী হাসান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার রাতেই থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রাতেই অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম ঝন্টু ওরফে জাহাঙ্গীর হোসেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে মাইকিং করে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক থেকে শেখপাড়া ও শান্তিডাঙ্গা এলাকায় মাইকিং করে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে প্রশাসন একটি লিখিত আদেশ দিয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হলো। সেইসাথে বিশবিদ্যালয় অধ্যায়নরত সকল ছাত্রছাত্রীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র বহন করতে বলা হলো। এ নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহন করা হবে।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি দাবি ছিলো বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেই দাবি ও কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে, বহিরাগতদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট ও মাদকাসক্তদের আড্ডাখানায় যাতে পরিণত না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে এজন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে আকাশ নামে বহিরাগত এক স্থানীয় তরুণ ক্যাম্পাসের লেকে প্রবেশ করেন এবং গোপনে সেখানে অবস্থানকারী ছাত্রছাত্রীদের ভিডিও ধারণ করেন। বিষয়টি টের পেয়ে শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে ভিডিও ডিলেট করতে বলেন। একপর্যায়ে কথাকাটাকাটি শুরু হলে আকাশ হুমকি দিয়ে চলে যান। এ ঘটনার পরে ওই শিক্ষার্থী পাশের শেখপাড়া বাজারে মোটরসাইকেলে তেল আনতে গেলে এলোপাতাড়ি তাদের মারধর করেন আকাশসহ কয়েকজন বহিরাগত।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী জিশাদ ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুপ্ত মারাত্মকভাবে আহত হয়। মারধরের শিকার হওয়া আহত দুইজনকে চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ঘটনাটি জানাজানি হলে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের দুই পাশে আগুন জ্বালিয়ে আন্দোলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া হাইওয়ের ঝিনাইদহের মদনদাডঙ্গা ও কুষ্টিয়ার মধুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সেইসাথে প্রশাসনের বৈঠকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা চেয়ে তিন দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটক ভাঙচুর করতে থাকেন। পরবর্তীতে উপাচার্য ও পুলিশ, আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ৮/১০ থেকে ডেকে নিয়ে তার বাসভবনে আলোচনায় বসেন।

এসময় উপাচার্য তাদের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ চারটি গেটে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত আনসার মোতায়ন ও অতিদ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে পুলিশ কর্মকর্তা ও উপাচার্যের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানা ও তিন দিনের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার না হলে পুনরায় আন্দোলনের আলটিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা।