ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর অপেক্ষায় চট্টলাবাসী

অর্থনীতিতে রাখবে যুগান্তকারী অবদান

অর্থনীতিবিদদের অভিমত
অর্থনীতিতে রাখবে যুগান্তকারী অবদান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বদলে দেবে দেশের অর্থনীতির চিত্র। টানেল ঘিরে গড়ে উঠা শিল্পকারখানা থেকে বাড়বে আয়। হবে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান। বঙ্গবন্ধু টানেল জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে দেশের শিল্প উন্নয়নে। বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হবে- এই প্রত্যাশাও একদিন বাস্তব রূপ পাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

প্রকল্প কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টানেল চালু হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। আশপাশের এলাকার আমূল পরিবর্তনে দেশের চেহারা বদলে যাবে। সেই সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রীতিমত বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জিরো পয়েন্টখ্যাত চাতুরি বাজার থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যেতে আড়াই ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। টানেল চালু হলে আনোয়ারা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যাওয়া যাবে। অথচ দূরত্বের কারণে ফ্লাইট মিস হওয়া ছিল লোকজনের নিত্য দুর্ভোগের ঘটনা। টানেল চালু হলে সহজে আনোয়ারা হয়ে বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া চলে যেতে পারবে মানুষ। জাতীয় অর্থনীতে টানেলের ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ রোড নির্মাণ হচ্ছে। ২০২৬ সালে এটির নির্মাণ শেষ হচ্ছে। একই সাথে চলতি বছর টানেলের নির্মাণকাজও শেষ হচ্ছে।

মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে টানেল কেন্দ্রীক প্রচুর শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে দ্রুত পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হতে পারে টানেল কেন্দ্রীক অর্থনীতির ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণে। বলা যায় অর্থনীতি ও শিল্প উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তৈয়ব বলেন, টানেল দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি হবে। বিশেষ করে আনোয়ারার পারকি সৈকত ঘিরে পর্যটন শিল্পের আরও বেশি প্রসার হবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে সহজে পর্যটকরা পারকি সৈকতে চলে আসতে পারবেন। পর্যটক বাড়লে বাড়বে রাজস্ব আয়। একই সঙ্গে তা আনোয়ারা উপজেলায় উপশহর গড়ে তোলার দুয়ারও খুলে দেবে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেছেন, একটি বড় শহরের পাশে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে উপশহর গড়ে উঠে। একটি উপশহর গড়ে উঠার প্রধান বাধা অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। তাই নগরীর কাছাকাছি আনোয়ারাকে উপশহর হিসেবে গড়ে তোলা আর কঠিন হবে না। নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন শহরতলীতে যেসব গ্রোথ সেন্টার আছে, সেগুলোতে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা গেলে সেগুলোকে উপশহর হিসেবে ঘোষণা করা যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের উপর জনসংখ্যার চাপ দিন দিন বাড়ছে। টানেল হলে শহর সম্প্রসারিত হবে। কমবে জনসংখ্যার চাপ। সিডিএর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কমিটির সদস্য সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, একজন নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো সুযোগ থাকতে হয় একটি উপশহরে। টানেল হলে সহজেই আনোয়ারা উপশহর হবে। বর্তমানে সিইউএফএল, কাফকো, ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন ও পারকি সৈকত রয়েছে আনোয়ারায়। টানেলের কারণে এসব সমৃদ্ধ হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, টানেল দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে কক্সবাজারে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের চিন্তা চলছে। এতে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এ টানেল নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে চীনের সহায়তা ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ২ শতাংশ হারে এ ঋণ দিয়েছে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এই টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দুটি টিউব সংবলিত নদীর তলদেশে এই মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এরমধ্যে টানেল টিউবের দৈর্ঘ ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টানেলটি দুটি টিউবে ৪ লেনবিশিষ্ট। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ রয়েছে। ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে বলেছিলেন- কর্ণফুলী টানেলের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের দৃশ্য বদলে যাবে। এ টানেলের নির্মাণ শেষে চীনের সাংহাই নগরীর মতো হবে চট্টগ্রাম। নদীর ওপাড়ে গড়ে উঠবে আরেক চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশে থেকে সারা বছরই লোকজন ছুটেন আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতে। টানেল খুলে দিলে সহজে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে থেকে লোকজন পারকি সৈকতে যেতে পারবেন। মানুষ বেশি আসলে বেচাকেনা বাড়বে, চট্টগ্রামশহর থেকে পারকি সৈকতের বর্তমান দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। তবে টানেলের আনোয়ারা পয়েন্ট থেকে পারকির দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। এ কারণে টানেল চালু হলে সহজে পর্যটকরা চট্টগ্রাম থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যেতে পারবেন।

সৈকতে ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে যুক্ত জসিম উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ হওয়ার পর এখানে পর্যটকের চাপ বহুলাংশে বাড়বে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যও চাঙা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত