ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নাজমুল হুদার মৃত্যুতে নেতৃত্বে শূন্যতা

লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পথে ‘তৃণমূল’ বিএনপি

লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পথে ‘তৃণমূল’ বিএনপি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘তৃণমূল’ বিএনপি যে গুরুত্ব পেয়েছিল দলের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মৃত্যুর পর তা অনেকটা কমে যেতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দলটি এখন কার্যত নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া ‘তৃণমূল’ বিএনপি যে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছিল সেটি অনেকটাই লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পথে। তবে নাজমুল হুদার পরিবারের কেউ দলটির হাল ধরে এগিয়ে নিবে বলে জানিয়েছে দলটির একজন নেতা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘তৃণমূল’ বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শূন্যতার সুযোগ নিয়ে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সেটি এখন লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ‘তৃণমূল’ বিএনপিকে নিয়ে রাজপথের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে থাকলেও সেটি এখন কেটে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, এর আগে ‘তৃণমূল’ বিএনপি নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার পর মনে করা হয়েছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির গুরুত্ব বাড়বে। সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে আরো গুরুত্ব পাবে দলটি। এমনি আলাপ-আলোচনা হচ্ছিল রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মৃত্যুর পর এ নিয়ে আর কোন আলাপ-আলোচনা নেই। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মৃত্যুতে দলটি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। এ অবস্থায় এখন দলটি নেতৃত্ব গোছানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

‘তৃণমূল’ বিএনপির মহাসচিব আক্কাস আলী খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমরা শিগগিরই বৈঠকে বসব। আমরা চাচ্ছি নাজমুল হুদার পরিবার থেকে কেউ হাল ধরে দলকে এগিয়ে নিবে। তিনি বলেন, বৈঠকের পর আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব।

বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে আপনাদের গুরুত্ব বেড়ে যেত বলে ধারণা করা হয়, তবে এখন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মৃত্যুর পরও তেমন গুরুত্ব থাকবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব। রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব কমার সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘তৃণমূল’ বিএনপির চেয়ারম্যান ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা মারা যান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। আইন অনুযায়ী তারা নির্দিষ্ট সময়ে ভোট করবে। সে ক্ষেত্রে অনেক দল নির্বাচনে না আসলেও যথাসময়ে নির্বাচনের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০টিতে। এছাড়া বর্তমানে নতুন দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছে। নিবন্ধিত দল ছাড়া কোনো দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পরবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য নাজমুল হুদার দলের এতদিন নিবন্ধন ছিল না। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে ইসিতে নিবন্ধন থাকতে হয়।

রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসিতে নিবন্ধনের জন্য ২০১৮ সালে আবেদন করেছিল তার নেতৃত্বাধীন ‘তৃণমূল’ বিএনপি। তবে যাচাই-বাছাই শেষে ইসি এই দলটিকে নিবন্ধন দেয়নি। পরে এর বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে একই বছরের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃণমূল বিএনপিকে অবিলম্বে নিবন্ধন দিতে ইসিকে নির্দেশ দেয়া হয়।

তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইসি ২০১৯ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা বহাল রাখার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় ইসি তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয়।

জানা যায়, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিএনপি গঠনের সময়ই দলটিতে যুক্ত হন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে নিয়েছিলেন হুদাকে।

খালেদা জিয়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে রেখেছিলেন হুদাকে। ১৯৯১ সালে ও ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। তবে মাঝে একবার দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পুনরায় ফিরেছিলেন তিনি। তবে ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে বিএনএফ নামে নতুন দল গঠন করেন হুদা। পরে সেই দল থেকে তাকেই বহিষ্কার করে ২০১৪ সালে এমপি হন দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটে ভেড়ার চেষ্টা করেন হুদা। তাতে সফল না হওয়ার পর গঠন করেন ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে নতুন দল।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সাল সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে। সর্বশেষ ৪৪টি দল নিবন্ধন পায়। এর মধ্যে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় অবশিষ্ট থাকে ৩৯টি দল। তৃণমূল বিএনপি নিবন্ধন পাওয়ায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুনের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার কথা ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।

নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, নতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মহানগর থানায় প্রতিটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সংবলিত দলিল থাকার শর্ত পূরণ করতে হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত