ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গুরুত্ব পাচ্ছে সাহরি ও ইফতারের সময়

পানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছে না রাজধানীবাসীর

পানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছে না রাজধানীবাসীর

আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীতে সুপেয় পানি ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থা। ফলে রমজানে বিদ্যুৎ ও পানি নিয়ে তেমন কোনো দুশ্চিন্তা নেই রাজধানীবাসীর। এমনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ও ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সরবরাহ লাইনের পানির প্রবাহ ধরে রাখার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে প্রতিটি জোনে পানি সরবরাহের গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনো এলাকায় পানির সরবরাহ লাইন কিংবা পানির পাম্পে ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ওই সব এলাকায় পৌঁছে যাবে ওয়াসার পানির গাড়ি। এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানির সংকটের কারণে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও সাহরি ও ইফতারের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকবে বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে এক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন সাহরি ও ইফতারের সময় সারাদেশে বিদ্যুৎ যেন না যায়, সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকায় প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসা উৎপাদন ক্ষমতা ২৭০ থেকে ২৭৫ কোটি লিটার। চাহিদার তুলনায় বেশি পানি উৎপাদনে সক্ষম ওয়াসা। জরুরি প্রয়োজনে পানি সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসায় ৪৮টি পানির গাড়ি এবং ১৭টি ট্রাক্টর প্রস্তুত রয়েছে। সম্ভাব্য লোডশেডিংয়ের সময় স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সোর্স হিসেবে ৩৮০টি ফিক্সড জেনারেটর এবং ১৯টি মোবাইল জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

রমজানে রাজধানীতে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, রমজান মাসে ঢাকা ওয়াসার সব পানি শোধনাগার ও পানির পাম্প নিরবচ্ছিন্নভাবে ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। লোডশেডিংয়ের সময় পানির পাম্পগুলো ডুয়েল সোর্স বিদ্যুৎলাইন, ফিক্সড জেনারেটর, মোবাইল জেনারেটরের মাধ্যমে চালু রাখা হবে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ঢাকা ওয়াসার সব কয়টি জোনাল অফিসে পর্যাপ্ত পানির গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গাড়ির মাধ্যমে চাহিদাকৃত স্থানে দ্রুত পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে মডস জোনের বিভিন্ন সুবিধাজনক পাম্পে স্মার্ট হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। রমজান উপলক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে জনসমাগম স্থান যেমন- গুলিস্তান, ফার্মগেট, মহাখালী, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডসহ এসব জোনের বিভিন্ন স্থানে ইফতার ও সাহরির সময় প্লাস্টিক ট্যাংক/ট্রলি স্থাপন করে পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ‘ওয়াসালিংক-১৬১৬২’ এবং ১১টি অভিযোগকেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হবে। মডস জোনের পানির পাম্প মনিটরিং করার জন্য বিদ্যমান ১০টি অ্যাডভাইজরি ও মনিটরিং টিম তৎপর থাকবে বলেও জানান তিনি।

ওয়াসার এমডি আরো বলেন, রমজানে পানি নিয়ে আশা করি কোনো সমস্যা দেখা দেবে না। তবে, রমজান মাসে পানি ব্যবহারের প্যাটার্ন কিছুটা বদলে যায়। এছাড়া গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় উৎপাদন ক্ষেত্রবিশেষে কমে যেতে পারে। কোনো কোনো সময় গভীর নলকূপ/পাম্প মোটর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ্য উৎপাদনে এলে লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন হবে না। এসবের মধ্যেই রমজান মাসে মানুষকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতে কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারও রমজানে সারাদেশে বিদ্যুৎ ও পানি সংকট দূর করতে ঢাকা ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। যেখানে বিদ্যুৎ লাইনে ত্রুটি রয়েছে, তা আগেভাগে সারিয়ে তোলা হয়েছে। উৎপাদন বাড়ায় নগরে পানি সংকট অনেকটাই কমেছে। সংযোগ লাইনও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। লাইন সংস্কার করা হয়েছে। ফলে রমজানে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহের বিষয়ে ঢাকাবাসীকে আশ্বস্ত করা হয়। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার প্রচেষ্টা থাকবে। গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে লোডশেডিংয়ে মানুষ খুব একটা ভোগান্তিতে পড়বেন না।

তিনি বলেন, দেশের চাহিদা অনুয়ায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে ডিজেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় আপাতত তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে না। তবে জরুরি প্রয়োজনে ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে- ইতোমধ্যে রামপাল, পায়রা ও বরিশাল এবং বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে।

রমজান মাসে খাবার পানি সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ ছাড়াও দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যানজট নিরসন ও গ্যাস সরবরাহসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচিবদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। পবিত্র এ মাসে কোনোভাবেই যাতে দ্রব্যমূল্য না বাড়ে, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বাণিজ্য সচিবকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। ইফতার ও সাহরিতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় উপস্থিত থাকা একজন সিনিয়র সচিব জানান, রমজান ও ঈদে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী। সচিবদের সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে জানানো হয়েছে। রমজানে যে কোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে পুলিশের নজরদারি জোরদার করতে বলা হয়েছে। যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ট্রাফিক বিভাগকে সতর্ক রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঈদ সামনে রেখে গণপরিবহণে ভিড় ঠেকাতে শ্রমিকদের যাতে একসঙ্গে ছুটি না দেয়া হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত