রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

আজ বিশ্ব পানি দিবস

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ বিশ্ব পানি দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ ‘বিশ্ব পানি দিবস পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে পরিবর্তন ত্বরান্বিত করা’। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতি বছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওতে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সেখানে পানি সম্পদের জন্য একটি বিশেষ দিন ঘোষণার দাবি তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয় এবং এরপর থেকে এ দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়াও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. নূরুল ইসলাম সরকার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন এমপি পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, নিরাপদ পানি বিশ্বের সব প্রাণিকুলের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। তিনি বলেন, উৎস থেকে সমুদ্র অবধি পানির অবারিত প্রবাহ ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমেই পানির সুষম প্রাপ্যতা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সম্ভব। নদীমাতৃক বাংলাদেশে মনুষ্যসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক নানাবিধ কারণে পানীয়জল ও স্যানিটেশনের সংকট বিদ্যমান। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার নদী ও খাল পুনঃখনন, প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন জলাধার ও ব্যারেজ নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এছাড়া নদীর তীর সংরক্ষণ, পানি অবকাঠামো সংস্কার করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ভূমি পুনরুদ্ধার, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও অংশগ্রহণমূলক পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা চলমান। তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের জলাধারসমূহে বছরজুড়ে পানি সংরক্ষণ পরিকল্পনা এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

রাষ্ট্রপতি প্রাকৃতিক সম্পদ পানির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থাকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি ‘বিশ্ব পানি দিবস ২০২৩’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সব কার্যক্রমের সাফল্য কামনা করেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পানির চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ অর্জনের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ পানি ব্যবস্থাপনা, স্যানিটেশন, কৃষিকাজ, শিল্প খাত বিবেচনায় রেখে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পানি চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের সরকার পানি অবকাঠামো সংস্কার, নদীর তীর সংরক্ষণ, নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে ড্রেজিং, খাল পুনঃখনন, প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন জলাধার ও ব্যারেজ নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে নদীর তীরবর্তী ভূমি পুনরুদ্ধার করে বনায়ন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’ তিনি নদীমাতৃক বাংলাদেশের জনগণ ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বিশ্ব পানি দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য পানির সঠিক ব্যবহার ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রণয়ন করেছে ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’। অভিযোজন ভিত্তিক কারিগরি এবং অর্থনৈতিক এ মহাপরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করে পানিসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা, ভূমি ব্যবহার এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ উন্নয়নের অঞ্চলভিত্তিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পানি ব্যবহার শৃঙ্খলা প্রবর্তনের লক্ষ্যে এরইমধ্যে জাতীয় পানি নীতি প্রণীত হয়েছে। পানি নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পানি ব্যবস্থাপনার নিয়ম, নীতি ও মানের নিরিখে উন্নয়নগামী দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক চাহিদার সমন্বয় সাধনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধে নানাবিধ কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বিস্তৃত ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বহমান নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিল, পুকুর-দিঘি, বৈচিত্র্যপূর্ণ বিপুল সংখ্যক ছোট-বড় জলাধারের পানি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিটি পানির ফোঁটার সর্বোত্তম ব্যবহারই নিশ্চিত করতে পারে সার্বজনীন পানি প্রাপ্যতা, পানির ন্যায়ভিত্তিক বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রতিটি মানুষকে তার পানি ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি পরিবর্তন করার লক্ষ্যে নিজস্ব অবস্থান থেকে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা জরুরি। দেশের প্রতিটি মানুষের ন্যায়সঙ্গত পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সবার দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং এর যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ তথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। তিনি বিশ্ব পানি দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে গৃহীত সব কার্যক্রমের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।