ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ ৩৯ হাজার ৩৬৫ গৃহ হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনার উপহারের ঘর ঘুচিয়েছে দুঃখ-কষ্ট

শেখ হাসিনার উপহারের ঘর ঘুচিয়েছে দুঃখ-কষ্ট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে বদলে গেছে গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের জীবনমান। আশ্রয়হীনরা ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। যাদের ঘর ছিলো না তারা পেয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। কর্ম ব্যস্ততা শেষে আপন নীড়ে ফিরেছে শান্তির প্রত্যাশায়। একটি ঘর খুলে দিয়েছে সমৃদ্ধির সোপান, ঘুচিয়েছে দুঃখ-কষ্ট। তেমনই একজন হলেন স্বামী পরিত্যক্তা পারভীন বেগম। চার বছর আগে স্বামী হেলায় মিয়া তিন সন্তানসহ স্ত্রীকে ছেড়ে চলে যান। স্বামী চলে চাওয়ার পর দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসে পারভীন বেগমের জীবনে। তিন সন্তান দিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার টিকে থাকা। এরপর তার আশ্রয় হয় বাবা ইউনুসের কাছে। তিনিও নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের জমিতে ঝুঁপড়ির ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন। ঝড়-বৃষ্টি হলে উড়ে যেত ছাউনি। বন্যায় তলিয়ে গেলে ঠাঁই হতো সরকারি স্কুলে কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার রাত হলে শিয়ালের ভয়ে আঁতকে উঠত বাচ্চারাও।

নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে একটি ঘর পাওয়ায় তাদের মুখে ফিরেছে হাসি, পেয়েছেন জীবনের আলো।

পারভীন বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে আমার জীবনের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হয়েছে। আমি কল্পনাও করি নাই, এমন একটা পাকা ঘরে বসবাস করব। প্রধানমন্ত্রী আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

গতকাল সকালে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। গৃহহীনদের জন্য সরকার সারা দেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে দুই শতক জমিসহ ঘর করে দিচ্ছে। তৃতীয় ধাপ শেষ করার পর আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৩ জেলার ৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্পে যুক্ত হয়ে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি গৃহ হস্তান্তর করবেন। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প ও বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বানারীপাড়া পৌরসভায় উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। প্রকল্পের অধীনে ও মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ২ শতক জমিসহ সেমিপাকা একক ঘর পাচ্ছেন গৃহহীন মানুষরা। প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে একই বছরের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে গত বছরের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি, দ্বিতীয় ধাপে ২১ জুলাই ২৬ হাজার ২২৯টি গৃহ হস্তান্তর করেন।

তথ্যমতে, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে হস্তান্তরিত গৃহের সংখ্যা ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি। চতুর্থ পর্যায়ে অবশিষ্ট নির্মাণাধীন গৃহের সংখ্যা ২২ হাজার ৬টি। চতুর্থ পর্যায় পর্যন্ত বরাদ্দকৃত গৃহের সংখ্যা ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি। চতুর্থ পর্যায়ে চরাঞ্চলে বরাদ্দকৃত বিশেষ ডিজাইনের গৃহের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৩টি ও পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ ডিজাইনের মাচাং ঘর ৬৩৪টি।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর। একই উপজেলার একই গ্রামে এক বছর আগে আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছেন হোসেন আহমেদ। তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন সাধারণ দিনমজুর। আমি বাসাবাড়িতে কাজ করি। বাড়িতে হাস-মুরগি পালন করি। এক বছর আগে ঘর পেয়েছি। আগে এখানে ছোট একটা ঘর ছিলো। ঝুঁপড়ির মতো। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ত। জীবনে অনেক কষ্ট করছি। অসহায় দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দিয়েছেন। আমরা আগে থেকেই এই খাস জায়গায় থাকতাম। তিনি বলেন, আগে বউ বাচ্চা রেখে স্বামী কাজে যেতে পারত না। এখন বউ বাচ্চা রেখে উনি কাজে যেতে পারেন। মেয়ে সামিয়া (১০) ও ছেলে তোফাজ্জল (৮) দুজনই মাদ্রাসায় পড়ে। আগের চেয়ে এখন আমরা অনেক ভালো আছি। প্রধানমন্ত্রী ঘর দিয়েছেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির ঋণী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, এখনো গরু-ছাগল কিনতে পারিনি। স্বামী মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করে। সে টাকা দিয়ে পরিবার চলে ও কোনো রকমে বাচ্চাদের লেখাপড়া করাই। বাচ্চাদের শিক্ষিত করে মানুষের মতো মানুষ করার ইচ্ছা।

গোয়াইনঘাটের নোওয়াগাঁওয়ে উৎসবের আমেজ : আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্ত হবেন গোয়াইনঘাটের নোওয়াগাঁওয়ের আশ্রায়ণ প্রকল্পে। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। ৮২৬নং ঘর পেয়েছেন লোকমান হোসেন। অন্য দিনমজুরদের সঙ্গে তিনিও সড়ক মেরামতের কাজ করছেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলায় সর্বমোট ১১০১ একটি ঘর নির্মাণ করেছি। এরইমধ্যে ৮৯৫টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আর ১২৪টি ঘর বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মাণাধীন রয়েছে। খুব দ্রুত সময়ে এগুলো হস্তান্তর হবে। আগামী কাল (আজ) সরাসরি ভার্চুয়ালে যুক্ত হয়ে নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন এবং গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১০০টি ঘর উদ্বোধন করবেন।

১০০টি ঘর হলেও আমরা দুই একর জমি বন্দোবস্ত দিচ্ছি। তবে পুরো প্রকল্পের এলাকা হচ্ছে ৫ একর ৩৬ শতাংশ জায়গায়। এই প্রকল্পের মানুষ একই সঙ্গে পুকুর ও খাল পাচ্ছে। খালি জায়গায় তাদের জন্য কৃষি প্লট করেছি। এক হাজার ফলজ, বনজ ও ওষুধ গাছ লাগানো হয়েছে। একই সঙ্গে মৌসুমী সবজি চাষ করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করেছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের খালের পানির বদৌলতে পতিত জমিও চাষাবাদের আওতায় এসেছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের পকল্পের পুরো জায়গা ভূমিদস্যুদের হাতে ছিল। বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমার মোকাবিলা করে আমরা এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। এটি একটি বন্যাকবলিত এলাকা। সেই বিষয়টিও মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। টেকসই ঘর নির্মাণ করার জন্য কোনো অংশেই আমরা ছাড় দেইনি। ঘরগুলো যাতে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জিংয়ের মুখে না পড়ে সেজন্য আমরা অতিরিক্ত কাজ করে দিয়েছি। সাম্প্রতিক বন্যায় যেসব মানুষ তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন, নিঃস্ব হয়েছেন তাদেরই আমরা এখানে ঘর বরাদ্দ দিচ্ছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত