বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ এবং পরিবেশগত পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণা উদ্যোগের সূচনা

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

গতকাল সোমবার আইসিডিডিআর,বি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টার ফর নন কমিউনিকেবল ডিজিজেস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জ (NIHR Global Health Research Centre for Non-communicable Diseases and Environmental Change) নামক গবেষণা সেন্টারের উদ্বোধন করে। সেন্টারটি যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং ভারতের দ্য জর্জ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথসহ শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, ইন্দোনেশিয়ার ব্রাউইজায়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসিডিডিআর,বি’র যৌথ সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গবেষণা কেন্দ্র অসংক্রামক রোগের দ্রুত ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এবং নিম্নœ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বৈশ্বিক পরিবেশগত পরিবর্তনের হুমকির দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য নীতিনির্ধারণ-সংক্রান্ত গবেষণা, গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবে। বাংলাদেশে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি স্থানীয় জনসংখ্যার ওপর ক্ষতিকর স্বাস্থ্য প্রভাব ফেলেছে, যার মধ্যে রয়েছে রক্তচাপ বৃদ্ধি, কিডনি রোগ এবং গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ। এই গবেষণা সেন্টারটি সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে খুলনার কয়রা ও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার ক্ষতি কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ মোকাবিলায় সাশ্রয়ী, টেকসই সমাধান বের করা ও পরীক্ষা করার জন্য কাজ করবে। এটি বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্যও কাজ করবে। পরিবেশগত পরিবর্তন এবং অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে মাল্টিসেক্টরাল কার্যক্রমের উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটাবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, এই গবেষণা সেন্টারটি প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে কম খরচে টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তিনি মন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসামান্য অবদানের প্রশংসা করেন। আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানী ড. আলিয়া নাহিদ, বাংলাদেশ সেন্টারের কার্যক্রমের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন এবং যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মিলেট পাঁচ বছর মেয়াদি এই বৈশ্বিক সেন্টারের একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, জনাব জাহিদ মালেক, এমপি। তিনি অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় প্রতিটি বিভাগে একটি করে আধুনিক হাসপাতালসহ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, আমি আশা করব এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টার গবেষণার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় নীতিনির্ধারণ সহায়ক তথ্য ও প্রমাণ প্রদান করতে পারবে যা আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজে লাগবে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইসিডিডিআর,বি এবং এই সেন্টারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সম্মানিত সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এই গবেষণা সেন্টারের কার্যক্রমে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে যে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে তার প্রশংসা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন পারস্পরিক সহযোগিতামূলক এই কার্যক্রম দেশে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন এবং অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও আইসিডিডিআর,বি’র এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন । বাংলাদেশে আইসিডিডিআর,বি’র ড. আলিয়া নাহিদের তত্ত্বাবধানে এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টারটি পরিচালিত হবে। নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) সেন্টারটির পরিচালনায় সহায়তা করবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথ, যুক্তরাজ্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। উদ্বোধনী কর্মসূচির আগে সকালে অসংক্রামক রোগ এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের ওপর একটি বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ড. আলিয়া নাহিদ গ্রামীণ বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘কোবরা-বিপিএস কৌশল’ নামে একটি মাল্টি-কম্পোনেন্ট ইন্টারভেনশন মডেল উপস্থাপন করেন। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। বৈজ্ঞানিক সেমিনারটির সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন এবং অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মিলেট, ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন; দ্য জর্জ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ, ইন্ডিয়ার সেন্টার ডিরেক্টর ড. দেবরশেঠী প্রবীণ এবং অধ্যাপক মাশফিকুস সালেহীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, তাদের গুরুত্বপূর্ণ উপস্থাপনা প্রদান করেন। বৈজ্ঞানিক সেমিনারে অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন, পরিচালক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি), মো. সাইফুর রহমান, সুপারিনটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং মো. জিয়াউল হক, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, তাদের মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল, আইসিডিডিআর,বি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এবং বুয়েটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।